সুকুমার রায়। —ফাইল চিত্র।
অভীক মজুমদারের ‘শতবার্ষিকীর ভাস্বরতা’ (১৭-৯) প্রবন্ধটি আবোল তাবোল কাব্যগ্রন্থের সুচিন্তিত বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাংলার সমাজ ও সাহিত্যে সুকুমার রায়ের সুগভীর অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমাদের কাছে ছোট থেকেই তাঁকে শিশু সাহিত্যিক হিসাবে পরিচিত করানো হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী কালে বুঝতে পেরেছি শিশু সাহিত্যে ‘ননসেন্স ভার্স’-এর আড়ালে তাঁর ‘শ্লেষের ক্ষেপণাস্ত্র’ চুরমার করে দেয় শামুকের মতো নিরাপদ গৃহে শান্তিতে বসবাসরত কর্মবিমুখ বাঙালির চিন্তাধারা। নখদন্তহীন ও নির্বিষ বাঙালি জাতিই যে বাবুরাম সাপুড়ে-র অভিনব সাপের রূপকের আড়ালে লুকিয়ে আছে, সেই সরল সত্যিটা আমাদের বুঝতে বুঝতে সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল কাব্যগ্রন্থের শতবর্ষ অতিক্রান্ত। প্রবন্ধকারের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলা যায়, বাংলা সাহিত্যে উপস্থাপনার অভিনবত্বের নিরিখে কার্যত পূর্বসূরি ও উত্তরসূরি না থাকা সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের উপমা তিনি নিজেই। এডওয়ার্ড লিয়র, লুই ক্যারল বা জোনাথন সুইফটের পাশ্চাত্য সাহিত্যের আলোকবৃত্তের বাইরে বঙ্গদেশ ও ভারতের তৎকালীন ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে সুকুমার রায় লিখিত ‘ননসেন্স ভার্স’ ও ‘স্যাটায়ার’ বিষয়ক প্রাসঙ্গিকতা ও শিল্পনৈপুণ্য নিয়ে আলোচনার এক সুবৃহৎ ক্ষেত্র আমাদের সামনে উন্মোচিত।
তাঁর ‘সৎপাত্র’ কবিতার গঙ্গারাম আজকের সমাজের কাকতাড়ুয়া সদৃশ যুবক দলের বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে সমান প্রাসঙ্গিক। ‘বোম্বাগড়ের রাজা’ কবিতায় অদ্ভুত রাজা ও রাজ্যপাটের সুকৌশলী বর্ণনা এবং ‘একুশে আইন’ কবিতায় শাসকের বেয়াক্কেলে কাজকারবার চার পাশের বিরামহীন নৈরাজ্যকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। শাসকের চোখরাঙানি দেওয়া আইনের সম্রাজ্যে আটকে থাকা নাগরিক আজও সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’ কবিতার মতো মুক্তির জন্য সারাক্ষণ স্বপ্ন দেখে— “হেথায় নিষেধ নাইরে দাদা,/ নাইরে বাঁধন নাইরে বাধা/ হেথায় রঙিন আকাশতলে/ স্বপন দোলা হাওয়ায় দোলে”। তাঁর আবোল তাবোল কাব্যগ্রন্থের আজগুবি, উদ্ভট, অসম্ভব কাজকারবার আসলে আমাদের অন্তঃসারশূন্য, লক্ষ্যহীন ও ভোগবাদী জীবন এবং গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতাদর্পী কর্তৃত্বকে তুলে ধরে।
তবে, ‘খুড়োর কল’-এর পিছনে ছুটতে থাকা আমরা শতবর্ষ পরেও তাঁর কাব্যগুণের ‘গন্ধ বিচার’ ঠিকমতো করতে পারিনি। সেই কারণেই হয়তো তাঁর লেখায় এডওয়ার্ড লিয়র ও লুই ক্যারলের ছায়া খুঁজে বেড়াই অনন্তকাল।
তন্ময় মণ্ডল, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
নদী বাঁচাও
‘সরস্বতীর দূষণ রোধে জবরদখল হওয়া জমি চিহ্নিত’ (২৯-৮) প্রতিবেদনটি পড়ে যারপরনাই আনন্দিত হলাম। কারণ, একদা বামফ্রন্ট সরকারের আমলে আমরা কয়েক জন মিলে ‘সরস্বতী নদী বাঁচাও কমিটি’ গড়েছিলাম। সাঁকরাইল থেকে ডোমজুড় পর্যন্ত এই কাজ শুরু হয়েছিল। প্রথমে আমরা চেয়েছিলাম ওই নদীটি বুজিয়ে দিয়ে যে সব অবৈধ ঘরবাড়ি বানানো হয়েছে, তাদের পুনর্বাসন দিয়ে নদীটির গতিপথ পরিষ্কার করতে। বলা বাহুল্য, সেই কাজ করতে গিয়ে তখন আমরা প্রবল প্রতিরোধের শিকার হয়েছিলাম। কমিটির সভাপতি ছিলেন ডোমজুড় স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক। তিনি অনেক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করেছিলেন। আমি ওই সময় দমদম থেকে কাজের সুবাদে কোনা, জগদীশপুর এবং ডোমজুড় ইত্যাদি স্থানে যাতায়াত করতাম। এক দিন আমি অফিসের যে গাড়িতে যাতায়াত করি, তা ঘিরে ধরে ভাঙচুর করতে উদ্যত হয়েছিল জবরদখলকারীরা। এর পিছনে বামেদের উস্কানিও ছিল, কারণ তারাই ওদের ওখানে বসিয়েছিল ভোটব্যাঙ্কের জন্য। রাজ্য পরিকল্পনা দফতর তাদের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে বার বার ঘুরিয়েও নদীটির গতিপথের ম্যাপ আমাদের কিছুতেই দেয়নি, হাওড়ার জেলাশাসকের অফিসে খোঁজ করে দেখতে বলত। আমরা সেইমতো হাওড়ার জেলাশাসকের অফিসেও খোঁজ করে দেখেছিলাম। এমনকি জেলাশাসকের সঙ্গে দেখাও করেছিলাম। উনি অবাক হয়ে বলেছিলেন, ওটা এই অফিসে কেন থাকবে, ওটা তো ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসেই থাকবে।
অবশেষে জাতীয় পরিবেশ আদালত অবধি বিষয়টা গড়িয়েছিল। যেটা আশার কথা, শোনা যাচ্ছে সরস্বতী নদীর পাড়ে জবরদখল করে থাকা এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এও শোনা যাচ্ছে সাঁকরাইল থেকে ডোমজুড় পর্যন্ত এলাকায় চিহ্নিতকরণের এই কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে এবং জাতীয় পরিবেশ আদালতে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার হলফনামা জমা দিয়েছে এবং রাজ্য সরকারের অর্থ দফতর গত জুলাই মাসে সরস্বতী নদীর পলি নিষ্কাশন প্রকল্পের অনুমোদনও দিয়েছে। যদিও আমাদের অভিজ্ঞতা অন্য রকম কথা বলে। রাজ্য সরকার মুখে এক রকম কথা বলে, আর বাস্তবে ঠিক তার উল্টো কাজ হয়। আদি গঙ্গা থেকে সরস্বতী নদী, কোনওটাই তার ব্যতিক্রম নয়।
বাণীপ্রসন্ন দত্ত, কলকাতা-৩০
বাঁচার লড়াই
নিখিল সুরের প্রবন্ধ ‘যে বেদনা আজও অমলিন’ (রবিবাসরীয়, ১৩-৮) পড়ে দেশভাগের কথা মনে পড়ে গেল, যাতে এক কোটিরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। শিকড় ধরে তাঁদের টেনে উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল একটা অজানা, অচেনা পরিবেশে। পূর্ববঙ্গ থেকে আসা অসহায়, ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের ভাগ্যে জুটেছিল অবজ্ঞা, উপহাস আর ঘৃণা। কিছু স্বার্থান্বেষী, অবিবেচক মানুষের অন্যায় রাজনীতির শিকার হয়েছিলেন এঁরা।
বাবা-জেঠার মুখে শুনে শুনেই আমার চোখে যেন ছবির মতো ভাসে বরিশাল জেলায় ভোলা মহকুমার লালমোহন নামের গ্রামের কথা। সেখানেও নিশ্চয়ই জীবনযাপন সহজ ছিল না, ছিল অনেক বাধাবিপত্তি এবং প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু সেখান থেকে এক রকম ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া মানতে কষ্ট হয়। স্বাধীনতার আগে কলকাতা এবং নোয়াখালিতে ভয়ানক দাঙ্গায় হিন্দুদের যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, তার প্রভাবও পড়েছিল দেশভাগের পরে হিন্দুদের তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ত্যাগ করে চলে আসার পিছনে। আশ্চর্য লাগে যখন দেখি, যে সব নেতার মদতে ও বিচার বিবেচনায় দেশ ভাগ হল, তাঁরা কেউ দায়িত্ব নিতে এগিয়ে এলেন না। শরণার্থীদের ঘাড়েই পড়ল নিজেদের ব্যবস্থা নিজে করে নেওয়ার। কিছু মানুষকে পাঠানো হল দণ্ডকারণ্যে, কিছু জনকে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আর বাকিরা যে যেমন ভাবে পারলেন, নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরাই করে নিলেন।
যাঁরা সম্পদে ও শিক্ষাদীক্ষায় বলশালী ছিলেন, তাঁরা বেশির ভাগ এ দেশেও তাঁদের আস্তানা দৃঢ় করে নিয়েছেন। কিন্তু অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল প্রান্তিক মানুষ এখনও বাঁচার লড়াই করছেন, আর স্বপ্ন দেখে চলেছেন এই দেশের মাটিতে শক্ত ভাবে দাঁড়ানোর।
সুরজিৎ কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি
জরাজীর্ণ
আমি গ্রিন পার্ক নরেন্দ্রপুর অঞ্চলের অধিবাসী। এই অঞ্চলের, বিশেষত উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের পিছন দিকে রাস্তার বহু দিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থা, বহু বছর ধরে কোনও সংস্কার হয়নি। পিচ উঠে মাটি বেরিয়ে গিয়েছে, বৃষ্টি হলেই জল জমে চলাচল করা যায় না। খোলা ড্রেন পরিবেশ আরও দূষিত করে দিচ্ছে। তার পাশে জঙ্গল হয়ে সন্ধের পর সাপ-খোপের উপদ্রব হয়। তিন-চার মাস অন্তর পুরসভা থেকে পরিষ্কার করা হয়। অথচ, পাকা ড্রেন হলে জঙ্গল এত বাড়তে পারত না। এর উপর কিছু পরিত্যক্ত বাড়ি পরিবেশ আরও ভয়াবহ করে তুলছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অঞ্চলটি সংস্কার করা হোক।
সুকেশ গুপ্ত , কলকাতা-১০৩