সমাজমনন গড়ে ওঠে চলতি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ভিত্তি করে। প্রতীকী ছবি।
প্রহেলী ধরচৌধুরী যেমন বলেছেন, বাস্তবিকই লিঙ্গসাম্যের পথ অনেকটা লম্বা (লিঙ্গসাম্যের পথ অনেক লম্বা, ৮-২)। তবে সম্মেলনে যেমন বলা হয়েছে, তেমন এর জন্য কুড়ি, পঞ্চাশ, আশি বা দু’শো বছরের সময়কাল মেপে দেওয়া সম্ভব কি না, ভাবার বিষয়। সংখ্যাতত্ত্বের হিসাবে যদি ওই সময়ের মধ্যে লিঙ্গসাম্য আসেও, বাস্তবে তার দ্বারা সমাজের ভিতরে নারী-পুরুষের সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে কি? লিঙ্গসাম্য মানে তো আর শুধু বেতনে সমতা কিংবা কিছু অংশের নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ব্যাপার নয়। এর প্রকৃত অর্থ সমাজমনে নারীর পূর্ণ মানুষ হিসেবে মর্যাদার স্বীকৃতি। কিন্তু তা অর্জন করতে হলে উৎপাদনের কাজে, সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে যে ভাবে নারীর অংশগ্রহণ করা উচিত, তার কতটুকু সুযোগ এই সমাজে আছে?
সমাজমনন গড়ে ওঠে চলতি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ভিত্তি করে। প্রাচীন দিনের সামন্ততান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার অঙ্গ হিসেবেই নারীর স্থান হয়েছিল ঘরের মধ্যে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এসে শিল্প-কলকারখানার বিকাশ যখন ঘটাল, তখন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রয়োজনেই মেয়েরা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এল। কাজ করতে শুরু করল শ্রমিক-পুরুষের পাশাপাশি। কিন্তু যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় আমরা রয়েছি, তা বৈষম্যমূলক হওয়ায় আজও মালিকের সর্বোচ্চ মুনাফার স্বার্থে মানুষে-মানুষে এবং নারী-পুরুষেও বৈষম্য জারি রয়েছে।
অর্থনীতিতে বৈষম্য যত দিন থাকবে, তত দিন এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। বৈষম্যের এই সমাজে আজ তাই দেশের একটা অংশের নারী হয়তো সেনাবাহিনীর উচ্চপদে আসীন হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, এরোপ্লেন চালাচ্ছে, এমনকি মহিলা রাষ্ট্রপতিও পাচ্ছি আমরা। কিন্তু মেয়েদের বড় অংশটাই পড়ে থাকছে অশিক্ষা, অস্বাস্থ্য, অসম্মানের অন্ধকারে। তাদের দিন কাটছে যে কোনওমুহূর্তে অত্যাচারিত, অপমানিত হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে, ঘরে কিংবা বাইরে। লিঙ্গসাম্য তাদের কাছে দূর আকাশের চাঁদ।
শ্রীরূপা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৪
পুরুষরাও ছিলেন
তৃষ্ণা বসাকের ‘মেয়েদের নিজস্ব পরিচয়ের যন্ত্র’ (১০-২) পড়ে আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া হল— টাইপ রাইটারের ব্যাপক ব্যবহার যখন ছিল, তখন সেটি দিয়ে কেবলমাত্র মেয়েদের দাগিয়ে দেওয়া যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করি না। টাইপ রাইটারের মাধ্যমে রুজিরোজগারের সংস্থানে পুরুষরাই অগ্রণী ভূমিকা নিতেন। অফিসগুলিতে কিছু মহিলা টাইপিস্ট হয়তো ছিলেন, কিন্তু লিঙ্গের অসাম্য হেতু পুরুষদেরই সেখানে সংখ্যাধিক্য ছিল। বিশেষত আদালতগুলির বাইরে বিপুল পরিমাণ দলিল দস্তাবেজ টাইপ করার জন্য পুরুষ টাইপিস্টরাই সংখ্যাগুরু ছিলেন। তার পর ছিল চাকরির আবেদনপত্র টাইপ করা (জন অরণ্য, সত্যজিৎ রায়)। ঊনবিংশ শতাব্দীর যে উদাহরণ প্রবন্ধে দেওয়া হয়েছে, সেটি অন্তত আমার কাছে যুক্তিগ্রাহ্য নয়। তার কারণ, সেই আমলে বিবাহযোগ্য মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষালাভ এবং গৃহকর্মে নিপুণা হলেই চলত, অর্থকরী কাজকম্মে তাদের যোগদান ধর্তব্যের মধ্যেই ছিল না। টাইপিস্ট হওয়া তো দূর অস্ত্, সেই আমলের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে স্ত্রীজাতির শিক্ষার বিষয়টি যথেষ্ট অবহেলিত ছিল। যে তথ্যগুলি পরিবেশিত হয়েছে, প্রত্যেকটিই অফিস আর টাইপিস্ট অবিচ্ছেদ্য— এটি প্রতিপন্ন করতে। সেটি এক অর্থে ঠিকই, কিন্তু টাইপিস্ট-কে মেয়েদের পরিচিতি ধরাটা যথার্থ নয়। বরং অফিসগুলিতে আধিকারিকদের ব্যক্তিগত পদে মেয়েদের আধিক্য আছে।
ইতিহাস বড় নির্দয়, কর্মক্ষেত্রে টাইপিস্টের ব্যবহার বহু দিন অবলুপ্ত, কিছু কিছু অফিসে অবহেলায় পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে টাইপ রাইটার। এখন ঝকঝকে কম্পিউটার/ ল্যাপটপের যুগ। পাসপোর্ট অফিস, আদালতগুলির সামনে এখনও মানুষজন বসেন টাইপের জন্য, তবে কম্পিউটার নিয়ে। হয়তো কোনও দিন টাইপ রাইটারের স্থান হবে মিউজ়িয়মে। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ নিয়েই তো মানবসভ্যতার অগ্রগতি।
সুবীর ভদ্র, ডানকুনি, হুগলি
ভাইরাস দাপট
বর্তমানে সারা রাজ্য জুড়ে বাচ্চা থেকে বড়, এক অদ্ভুত ভাইরাসে আক্রান্ত। কোভিডের পর এ বার রাজ্যের মানুষকে নাজেহাল করছে অ্যাডিনোভাইরাস। বড়রা তুলনায় কম, বাচ্চারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষত, দু’বছরের কম বয়সি শিশুরাই এই রোগে কাবু হচ্ছে বেশি। ফলে হাসপাতালগুলিতে অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত শিশুরোগীর ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। ইতিমধ্যে কলকাতার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে শিশু-ওয়ার্ডে প্রায় সমস্ত বেড ভর্তি। সব থেকে ভাববার বিষয় এই যে, এই বাচ্চাদের কোভিডের সময় কোনও ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি।
পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর চিন্তিত, ইতিমধ্যেই দফায় দফায় মিটিং করছে, বিভিন্ন নির্দেশিকা জারি করা হচ্ছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার আশ্বাসও মিলেছে। সংক্রমণ ঠেকাতে অভিভাবকদের বিশেষ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অ্যাডিনোভাইরাস মোকাবিলায় সরকারি হাসপাতালগুলি আক্রান্ত শিশুদের জায়গা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্য পরিষেবা ও ব্যবসা দুটোই চালিয়ে যাচ্ছে। কলকাতার বাইরের হাসপাতালগুলি জটিল রোগীদের কলকাতায় পাঠিয়ে দিচ্ছে, এ দিকে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে এই সংক্রমণ সব থেকে বেশি। ফলে অভিভাবকরা দিশাহারা।
গোটা দেশের আর কোনও রাজ্যে এমন পরিস্থিতি কি না, জানা নেই। আমাদের রাজ্যের বেশ কিছু জেলা আছে, যাদের পাশেই রয়েছে প্রতিবেশী কিছু রাজ্য— যেমন, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড বা বিহার। পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত রোগীদের একাংশকে যদি সেই সকল রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার সুযোগ পাওয়া যায় বা এই ব্যাপারে কোনও সরকারি সাহায্য মেলে, তবে কলকাতার স্বাস্থ্য পরিষেবা এতটা সঙ্কটজনক নাও হতে পারে।
অ্যাডিনোভাইরাসে স্কুল থেকেই শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। তাই অবিলম্বে সমস্ত স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশিকা দেওয়া জরুরি। কোভিডের সময় যে সব সতর্কতা ও নির্দেশিকা রাজ্য প্রশাসন জারি করেছিল, সেই তৎপরতা প্রশাসন কেন এই ক্ষেত্রে দেখাচ্ছে না? অবিলম্বে নার্সারি থেকে ক্লাস ফাইভ অবধি স্কুলগুলোকে পুরোপুরি বন্ধ, অথবা নিচু ক্লাসগুলিকে বন্ধ রাখা উচিত। শিশুদের প্রতি অভিভাবক ওসরকার যথাযথ দায়িত্ববান হোক, এটাই কাম্য।
পার্থময় চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪
সঙ্কীর্ণ পথ
কলকাতার দক্ষিণে হরিদেবপুর থেকে কবরডাঙা পর্যন্ত যেতে মাঝপথে মহাত্মা গান্ধী রোডে কেওড়াপুকুরে রাস্তার দু’পাশে যে বাজারটি বসে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত, সেখান দিয়ে যাতায়াত করাটা নিত্যযাত্রীদের পক্ষে বিভীষিকা। এই ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে বাস, লরি, মোটর গাড়ি, অটো, সাইকেল, ভ্যান, রিকশা, অসুস্থ রোগীদের নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স— কেউ বাদ থাকে না। এরই মাঝপথে কেওড়াপুকুর বাজারটি থাকার ফলে রাস্তাটি আরও সঙ্কীর্ণ হয়ে সকালের ব্যস্ত সময়ে ভয়ানক যানজটের সৃষ্টি করে। যানজট খুব বেশি হয়ে গেলে মাঝেমধ্যে হরিদেবপুর থানা থেকে পুলিশরা এসে সাময়িক সামাল দেন বটে, কিন্তু তা কিছু ক্ষণের জন্যে। তাঁরা ফিরে গেলে আবার যে কে সেই অবস্থা। এই এলাকায় লোকসংখ্যা দিনকে দিন বৃদ্ধি হচ্ছে। তাই প্রশাসনকে অনুরোধ জানাই, বাজারটিকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্থানান্তরিত করে রাস্তাটি যানজট মুক্ত করে প্রশস্ত করে দেওয়া হোক।
সুব্রত সেনগুপ্ত, কলকাতা-১০৪