‘গাছের প্রাণ বলেননি’ (১২-১১) চিঠিটি পড়ে এই চিঠি। লেখক বলছেন, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর, জীববিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা কোনওটিতেই অ্যাকাডেমিক ডিগ্রি ছিল না। কয়েক ছত্র আগেই লিখেছেন, জগদীশচন্দ্র কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজ থেকে বিএ (প্রকৃতি বিজ্ঞান ট্রাইপস্) ডিগ্রি পান। লেখক সম্ভবত বিএ অর্থে ‘ব্যাচেলর অব আর্টস’ ধরে নিয়েই এমন ভ্রান্তিতে পড়েছেন। তাঁকে (ও পাঠকদের) জানাই, ঊনবিংশ শতাব্দী (যখন জগদীশ পড়েছেন) থেকে আজও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে Natural Sciences Tripos (NST)-এ প্রকৃতিবিজ্ঞানের বিভিন্ন ভাগের পাঠ দেওয়া হয়, যার মধ্যে জীববিদ্যা ও উদ্ভিদবিদ্যাও আছে। এই NST পার্ট-টু শেষ করলে বিএ ডিগ্রিই দেওয়া হয়, পার্ট-থ্রি’র শেষে এম এসসি।
প্রেসিডেন্সি থেকে অবসর নিয়ে জগদীশচন্দ্র ১৯১৭ সালে দেশীয় রাজা মহারাজাদের দান ও নিজের বক্তৃতার দর্শনী থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন সম্পূর্ণ দেশীয় ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’। আজ তা জাতীয় গবেষণাকেন্দ্র। সেখানে উদ্ভিদের উদ্দীপনা সংক্রান্ত গবেষণা (আজ তার নাম System biology) করে শুধু বললেন না, পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করলেন, উদ্ভিদের প্রাণ আছে।
চিঠিতে আচার্য লিখিত অনেকগুলি ইংরেজি বইয়ের উল্লেখ আছে। কিন্তু গাছের প্রাণ বিষয়ে তাঁর দুই খণ্ডে লেখা ১৯১৮ সালে প্রকাশিত গ্রন্থ 'Life movements in Plants'-এর নাম নেই। অসংখ্য প্রামাণ্য চিত্র-সহ বই দুটি ১৯৮৫ সালে দিল্লির ‘বি আর পাবলিশিং কর্পোরেশন’ আবার প্রকাশ করে, আন্তর্জালে ই-বুক হিসেবে বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। বইটির অন্তত সূচিপত্র পড়ে দেখলেও চিঠিতে লেখক এমন মন্তব্য করতে পারতেন না। এ তো গেল ইংরেজি লেখার কথা। জগদীশচন্দ্র ও তাঁর বন্ধু আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার জনক। ছোটদের জন্য ‘মুকুল’ পত্রিকায় ১৩০২ বঙ্গাব্দ (১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ) আষাঢ় সংখ্যায় জগদীশচন্দ্র লিখলেন দু’টি অসাধারণ নিবন্ধ ‘গাছের কথা’ ও ‘উদ্ভিদের জন্ম মৃত্যু’। এর পর একই বিষয়ে লিখলেন ‘নির্বাক জীবন’। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ও গবেষণাধর্মী লেখাটি সহজ বাংলায় লেখা ‘আহত উদ্ভিদ’, ১৩২৬-এর বৈশাখ সংখ্যা ‘প্রবাসী’তে প্রকাশিত হল। এই সবই জগদীশচন্দ্রের ‘অব্যক্ত’ (প্রথম প্রকাশ আশ্বিন ১৩২৮) নামক প্রবন্ধ সঙ্কলনে পাওয়া যাবে। এই সমস্ত নিবন্ধে খুব পরিষ্কার ভাবে ‘উদ্ভিদের প্রাণ আছে’ এ কথা আচার্য প্রমাণ করেছেন ও বলেছেন। বিস্তারিত উদ্ধৃতি এখানে সম্ভব নয়, কিন্তু মূল বক্তব্য: উদ্ভিদের জন্ম, বৃদ্ধি, বংশবিস্তার, মৃত্যু, ভয়-ব্যথা-আনন্দ অনুভবের ক্ষমতা আছে, এমনকি অন্য উদ্ভিদ ও প্রাণের প্রতি সমব্যথী হওয়ার ক্ষমতাও আছে। এগুলিই প্রাণের লক্ষণ।
শেষে দু’টি কথা বলি। গাছের বৃদ্ধি মাপার জন্য তিনি একটি সূক্ষ্ম যন্ত্র তৈরি করেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল এটির বাংলা নাম দেন ‘বৃদ্ধিমান’, কিন্তু পাছে সাহেবদের বিকৃত উচ্চারণে তা ‘বারডোয়ান’-এ পরিণত হয়, তাই নাম দিলেন ‘ক্রেস্কোগ্রাফ’।
জগদীশচন্দ্রের এই আবিষ্কার বিলেতের বিখ্যাত ‘পাঞ্চ’ পত্রিকায় স্থান করে নেয়। তাদের প্রকাশিত একটি কার্টুনে দেখা যায়, এক জন ঘরে বসে তার যন্ত্রে সুর তুলছে, আর সুর শুনে উৎফুল্ল গাছেরা নাচতে নাচতে হাসতে হাসতে জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ছে। এটির একটি অনুকৃতি ১৯৫৮-র নভেম্বরে ‘জ্ঞান বিজ্ঞান’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
স্বরাজ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৯৬
শৌচালয়
বেশ কিছু বছর আগে চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনে রাত্রিযাপনের সুবাদে বার কয়েক শৌচালয়ে যেতে হয়। লক্ষ করেছি, যেই কেউ শৌচালয় ব্যবহার করছেন, ঠিক তার পরই কর্তব্যরত জমাদার বা কর্মীরা উপযুক্ত ভাবে তা পরিষ্কার করে দিচ্ছেন, যাতে পরবর্তী যাত্রীর তা ব্যবহারে কোনও অসুবিধা না হয়। আর সেই শৌচালয় ব্যবহারের জন্য কোনও টাকাপয়সা দিতে হয়নি। মাত্র দিন কয়েক আগে হাওড়া স্টেশনের শৌচালয় ব্যবহারের সময়, অবস্থা দেখে চক্ষু চড়কগাছ। দাঁড়ানোর জায়গা প্রস্রাব আর জলে একাকার। দুর্গন্ধে ভর্তি। সব কিছু ভাঙাচোরা। কোনও পরিষ্কার করার কর্মী নেই। আছেন শুধু দরজার সামনে বসে থাকা এক জন, যাঁকে প্রস্রাব করার জন্য দু’টাকা করে মাসুল গুনে দিতে হচ্ছে।
উজ্জ্বল গুপ্ত
কলকাতা-১৫৭
ব্যাঙ্ক শ্লথ
আমি এক জন প্রবীণ মানুষ। ব্যাঙ্কে এক ঘণ্টা পঁচিশ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টার থেকে টাকা তুলতে হয়েছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম, সরকারের নোটবন্দির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল জনগণের হাতে নগদ রাখার প্রবণতা কমানো। দিনকে দিন যে হারে ব্যাঙ্কের শাখা কমছে, ব্যাঙ্কের কর্মী কমছে, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সঞ্চয়ের উপর সুদ কমছে, তাতে সাধারণ মানুষ আর ব্যাঙ্কের দিকে ধাবিত না হয়ে টাকা নিজের জিম্মায় রাখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
নারায়ণ সাহা
কলকাতা-৮৪
অনুসন্ধান কেন্দ্র
হাওড়া আজিমগঞ্জ রেলপথে একটি জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন কাটোয়া জংশন। দীর্ঘ দিন এখানে রেল অনুসন্ধান কেন্দ্র ছিল। হঠাৎ ৭-১১-১৯ তারিখ থেকে অনুসন্ধান কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের হয়রানি হচ্ছে।
জয়দেব দত্ত
কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
টালা ব্রিজ
টালা ব্রিজ যখন ভাঙা হবেই, আরও কিছু সংস্কারের অনুরোধ করব। ব্রিজটির শুরুতে খালের ওপর ছোট-ব্রিজ (১৯৪০), যা বর্তমানে সক্রিয়। তার পর পরই দু’পাশে রাস্তার সঙ্গে যুক্ত। এক দিকে আর জি কর হাসপাতাল, অন্য দিকে গঙ্গার কিনার অবধি চলে গিয়েছে। এর পরই যে দুই পল্লি, ১৯৬২ সালের আগে ব্রিজ থেকে এই দুই পল্লির সঙ্গে রাস্তার সংযুক্তি ছিল। বর্তমানে নেই। পুনরায় সংযুক্ত করার আবেদন করছি।
খানিক উত্তর দিকে এগোলে চিৎপুর রেল ইয়ার্ড তথা চক্ররেলের যাতায়াত। টালা স্টেশনের এক দিকে বেলগাছিয়ার সঙ্গে র্যাম্প করা, কিন্তু টালা ব্রিজের দিকে আদৌ নেই। র্যাম্প করলে যাত্রী ও রোগীদের সুবিধা হবে ব্রিজের মাঝখানে সিঁড়ি আছে টালাপার্ক ও পাইকপাড়া অঞ্চলের জন্য। এখানেও র্যাম্প হলে ভাল হয়। ব্রিজ শেষ হলে পশ্চিম দিকে ১নং বরো অফিসে যাওয়ার জন্য টানেল অথবা ফুটব্রিজ হলে ভাল হয়।
পুরনো ব্রিজ ভাঙার পর বাসিন্দাদের কথা ভেবে সাময়িক কাঠের ফুটব্রিজ করা হয়েছিল, যা পুনরায় করা হলে স্থানীয় মানুষের খুব উপকার হবে।
শেখর মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-২
গণ-শৌচনালা
বাড়িতে শৌচাগার থাকলেও, আমাদের দেশে অনেকে প্রাতঃকৃত্য সারেন বাড়ি থেকে দূরে বাইরে মাঠে, পুকুরের ধারে। তাঁরা মনে করেন, নিজের বাড়িতে স্থায়ী নোংরা আধার করব কেন? রোজকার অভ্যেস বদলাব না। ঘুম থেকে উঠে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দূরে প্রাতঃভ্রমণ সারতে সারতে খুব সহজেই বেগ আসে, কোনও জোলাপ প্রয়োজন হয় না। তার উপর বাড়ির শৌচাগার পরিষ্কার রাখার ঝামেলা আছে। লোকের মুখাপেক্ষী হতে হয়। এই সব ধারণা আছে বলেই, বিনা/কম পয়সার বাড়ি বাড়ি শৌচাগারের বন্দোবস্ত অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
তাই বাড়ি বাড়ি শৌচাগারের পরিবর্তে, এলাকার একটি নির্দিষ্ট স্থানে সামূহিক শৌচনালা করা যায়। নালার সঙ্গে বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের যোগ থাকবে। এতে এলাকায় দূষণ রোখা যাবে। বিশাল খরচ বাঁচানো যাবে। পঞ্চায়েত-ভিত্তিক গণ-শৌচনালা এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
শ্রবণ কুমার আগরওয়াল কেরানিতলাচক, মেদিনীপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।