সুনসান মেরিল্যান্ড। ছবি: রয়টার্স
মেরিল্যান্ড রাজ্যের গাইথেরসবুর্গ শহরে আমরা এসেছি জানুয়ারির শেষে। তার আগে আমরা টেনিসি প্রদেশের ন্যাশভিলে ৭ বছর ছিলাম। আমার স্বামীর নতুন চাকরি সূত্রে আমাদের মেরিল্যান্ডে আসা। এই শহর আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডি.সি থেকে গাড়িতে মাত্র ৩০ মিনিট। এ ছাড়া ট্রেনও আছে। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লোকজন, আর তাদের রকমারি খাবারের দোকান রয়েছে এই গাইথেরসবুর্গে।
আমাদের শহর বদলানোর সময়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য চিনে লকডাউন চলছিল। কিন্তু তখনও পর্যন্ত ভাবতে পারিনি যে আমেরিকাতেও আর কিছু দিনের মধ্যেই একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে চলেছে।
ফেব্রুয়ারির শেষে আমরা গাইথেরসবুর্গ ডাউনটাউনে রেলের একটি প্রাচীন মিউজিয়াম ও সিটি হল ঘুরতে গিয়েছিলাম। তার পরই আমেরিকাতে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটে। আর তখন থেকেই এই নতুন শহরে আমাদের নতুন জীবন বদলে যেতে থাকল।
আরও পড়ুন: নিজামউদ্দিনে সেই জমায়েতে ছিলেন এ রাজ্যেরও বহু মানুষ, চলছে খোঁজ
সুপার মার্কেটে অসম্ভব ভিড়। সবার মুখেই হাসি রয়েছে। কিন্তু ভয় আর আতঙ্কের ছাপও তাতে স্পষ্ট। সবাই দিশাহীনের মতো যতটা পারছে জিনিস কিনে রাখছে। স্যানিটাইজার, টয়লেট পেপার, এই সব জিনিস আমরা মার্চের শুরুতেই কোথাও পাইনি। অল্প যতটা ছিল তা দিয়েই আপাতত চলছে। এমনকি জ্বর, কাশির ওষুধ, থার্মোমিটার পর্যন্ত দোকানে নেই। যে দিন এই লেখা লিখছি সে দিন থেকে এখানে বাধ্যতামূলক ভাবে গৃহবন্দি থাকার আইন জারি হল। তা না মানলে জরিমানা, এমনকি জেলও হতে পারে। শুধু মুদিখানা, ওষুধের দোকান আর ডাক্তারখানা খোলা থাকবে।
আরও পড়ুন: লকডাউনের ধাক্কা, ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত তেলঙ্গানার
আমেরিকাতে এখন বসন্তকাল। ফুল ফোটার সময়। শীতকালের পাতাহীন বিষাদ-মাখা গাছগুলি এখন ফুলে ফুলে ভরে গিয়ে নতুন জীবন পায়। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে এক দিন ভোর বেলায় আমরা গাড়ি চড়ে ওয়াশিংটন ডি.সি গিয়েছিলাম টাইডাল বেসিনে পৃথিবী বিখ্যাত চেরি ব্লসম দেখতে। কিন্তু এত আতঙ্কের সফর আর কোনওদিন করিনি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম মেনে ওখানে মাত্র ৫ মিনিট ছিলাম। তারপর শুনলাম, পুলিশ দুপুরে সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল যাতে কোনও জমায়েত না হয়|
বসন্তে চেরি ফুলে সেজে উঠেছে মেরিল্যান্ড। ছবি: রয়টার্স
আমার স্বামীর ওয়ার্ক ফ্রম হোম শুরু হয়েছে ২ সপ্তাহ হল। ইনস্টকার্ট নামের একটি অনলাইন গ্রসারি থেকে আমরা এখন জিনিসপত্র কিনছি। বহু মানুষের জীবন এখন বিপর্যস্ত। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে| আর আমার মনে পড়ছে বাড়ির কথা। আমেরিকাতে জনঘনত্ব অনেক কম। কিন্তু তাও দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিপুল জনবসতি সম্পন্ন ভারতে এই অতিমারি ছড়িয়ে পড়লে, তার পরিণতি কী হবে, তা ভেবেই শিউরে উঠছি। জানালা দিয়ে যখন দেখি, সামনের বড় গাছটায় অনেক কুঁড়ি এসেছে, তখন মনে হয় এই দুঃস্বপ্নের নিশ্চয়ই শেষ আছে। এই প্রবাসে ভরসা জোগায় রবিঠাকুরের গান — ‘‘অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো’’।
মালবিকা সর্বাধিকারী
গাইথেরসবুর্গ, মেরিল্যান্ড, আমেরিকা
অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।