আমি বঙ্গ তনয়া। বাড়ি দমদম,এখন এডিনবরা। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, স্বামী একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। সেই সুত্রেই এখানে পারি দেওয়া জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি করে। একটি অপরূপ সবুজ ঘাসের গালিচা দিয়ে মোরা, পাহাড় ও সমুদ্র ঘেরা ছোট শহর। এসেই দেখলাম সূর্যোদয় সকাল আটটার পর আর সূর্যাস্ত মোটামুটি বিকেল তিনটে নাগাদ্ । বৃষ্টি শীতকালের নিত্যদিনের সঙ্গী। এখানে লোকসংখ্যা বেশ কম, গাড়ির হর্নের আওয়াজ নেই, মানুষের কোলাহল নেই। বাড়ি ছাড়ার কষ্ট ভুলতে দুজনে সারা বছরের একটা পরিকল্পনা করে ফেলেছিলাম কোথায় ঘুরব ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার দায়িত্বে ছিল বেরাতে যাওয়ারও প্ল্যান গুলো করতে হবে যেহেতু আমি একজন ভ্রমণপিপাসু। দেশে সদ্য মা এবং মাসি কে নিয়ে কেদারনাথ, তুঙ্গনাথ এবং বদ্রীনাথ সেরে এসেছি। ঠিক হল মার্চের শেসে ওবান যাব এক বাঙালি পরিবারের সাথে এবং এপ্রিলের শেষে ইস্টার এর ছুটি
আজ প্রায় এক মাস হয়ে হল বাড়িতে বন্দি। মার্চ এর মাঝামাঝি থেকে আমার আমার স্বামী বাড়িটি কেই অফিস বানিয়ে ফেলেছে। এখানে এশিয়ান স্টোর বাদ দিয়ে বাকি দোকান খোলাই আছে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। সপ্তাহে একদিন সাংসারিক দ্রব্যের জন্য বেরই দুজনে। কিছু গাছে সবুজ পাতা আসতে শুরু করেছে, কিছু গাছ সাদা ফুলে ভরে গেছে , মনে হছে সাদা ভেলভেটের চাদরে ঢাকা। বৃষ্টিও বাঁধা নিয়ম থেকে বিদায় নিয়েছে। সূর্যের আলো প্রায় সন্ধে সারে আটটা অবধি থাকে। চারিদিক ড্যাফোডিল্স ফুলে ভরে গেছে। উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর কবিতাটা মনে পরে যায়।
ছবি: লেখক
গৃহবন্দি জীবনে আমাদের সময় কেটে যায় রান্না করে, সানডে সাসপেন্স-গান-নাটক-আবৃত্তি শুনে, সিনেমা দেখে, গল্পের বই পড়ে।দুজনের খুনসুটি তো আছেই। কিছু গানের ভিডিও করেছি, আবৃতি করে বাড়িতে পাঠিয়েছি যাতে ওদের একটু ভাল লাগে। আমার এই ঘর টা থেকে সূর্যোদয় দেখা যায়না বটে কিন্তু সারাদিন ধরে স্কট মনুমেন্ট আর আর্থর সীট এর দিকে তাকিয়ে আমার মন চলে যায় বর্ধমানের বাড়িতে। এই এক স্টুডিও এপার্টমেন্ট এর এই একটি বিশাল জানালাই এই বন্দিমুহুরতের পৃথিবী দেখার পথ, আর দেখি নীল আকাশ আর সাদা মেঘের খেলা। এই জানালা টা দিয়েই দেখি শহর টা দিন দিন সবুজ পাতায় আর লাল-সাদা ফুলে মুরে যাচ্ছে, সুন্দরী হয়ে উঠছে। বাড়ির নিচে দিয়ে বয়ে জাছে পাহাড়ি নদী লিথ। কিছু দিন পরেই আসছে পয়লা বৈশাখ, এখানে বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের প্রচেষ্টায় কিছু অনুষ্ঠান পালন করা হয়। আমরা তার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম ,তাতেও আপাতত ইতি টানতে হয়েছে।
ইউরোপ প্রথমে বিষয়টাকে হালকা ভাবে নিয়েছিল। খবরে আমরা সবাই জানি ইটালির , স্পেন এর কথা। আমেরিকাও এক রাতে হাজারের গতিতে বারছে। এডিনবরা তে লকডাউন বাড়িয়ে ইস্টার অবধি ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফি
ছবি: লেখক
আমার মন পরে আছে বাড়িতে বৃদ্ধ ঠাকুমনিমা দাদু, মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাই, বোন সবার কাছে।দেশ ছেড়ে অনেক দূরে। হাতছানি দিলেও যাওয়ার উপায় নেই।এবিপি আনন্দ লাইভ আর ইউ টিউবের দয়ায় দেশের খবরাখবর পেয়ে যাচ্ছি। আমরা ভালো আছি, তোমরাও ভালো থেকো, সাবধানে থেকো। পারলে যারা আমাদের ওপর নির্ভরশীল তাদের যথা সাধ্য সাহাজ্য কর। বুকের ভিতরে আশার আলো আর তোমাদের আশীর্বাদ ই আমাদের সহায়।
অনিতা মণ্ডল, এডিনবরা, স্কটল্যান্ড
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন,feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)