সিয়াটেল। ছবি লেখকের নিজস্ব।
আজ প্রায় ৫৫ দিন হল এই শহর গৃহবন্দি। কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটেলেই প্রথম শুরু হয়। সেটা জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ। আক্রান্ত ১। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সেটা দাঁড়ায় আক্রান্ত ৩০, মৃত ১০। অর্থাত্ মৃত্যুহার ৩০%।
এই রাজ্যে মাইক্রোসফট, বোয়িং এবং অ্যামাজন-এর মতো বহুজাতিক সংস্থার হেড অফিস। স্বাভাবিক ভাবেই ভীষণ রকম আন্তর্জাতিক এবং ব্যস্ত। সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই সতর্কতা শুরু হয়ে যায়, আর গভর্নর সকলকে অনুরোধ করেন বাড়ি থেকে কাজ করতে। সেটা মার্চের প্রথম সপ্তাহ। আমি যেখানে কাজ করি সেখানে ক্যানসার আর এইচআইভি নিয়ে সারা বছরই কাজ চলে। তাই আমাদের অফিস যাওয়া তার আগে থেকেই বন্ধ।
প্রথম দিকে ব্যপারটা বেশ ভালই ছিল। অফিসের তাড়া নেই, ঘরে থেকে কাজ। এ শহরের লোকেরাও ব্যাপারটাকে ভীষণ গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেছিল। নতুন অভ্যাস যোগ হয়েছিল ওয়েবসাইটে কোভিড-এর স্ট্যাটিসটিকস দেখা, আর বাড়িতে বাবা-মাকে জানানো যে আমি ভাল আছি। অফিস থেকেও ক্রমাগত ইমেল আসছে, যদি করোনা উপসর্গ দেখা দেয় তা হলে কোন নম্বরে ফোন করে কী কী তথ্য দিতে হবে। তবে শেষ দু’সপ্তাহ থেকে একঘেয়েমিটা চেপে বসেছে। কলকাতার পাড়া কালচার এখানে না থাকলেও, উইকেন্ডে বার-রেস্তরাঁয় যাওয়া, বা কাছেপিঠে ঘুরে আসাটা দৈনন্দিনের অঙ্গ। সেখানে সব রকম আমোদ-প্রমোদ বন্ধ, স্বাভাবিক ভাবেই একটা ব্যতিক্রম। সেটার একটা মনস্তাত্বিক চাপ তো আছেই, তার সঙ্গে জুড়েছে লোকজনের অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা। আমিও আর ওই মৃত্যুমিছিল গুনে, সেই নিয়ে আলোচনা করি না।
এখানে মুদির দোকান খোলা। রেস্তরাঁ থেকেও আপনি হোম ডেলিভারি পরিষেবা পাবেন। সরকারি বাসও চলছে, গভর্নর রোজ সকলকে অনুরোধ করছেন জগিং করতে, হেঁটে আসতে। শুধু নিষিদ্ধ যে কোনও জমায়েত, যেটা গোটা পৃথিবীকেই মানতে হচ্ছে। এখানে প্রায় ৮০-৮৫% মানুষজন সেটা মেনেই চলছে। আমিও দু’সপ্তাহ অন্তর এক বার বাজার যাই, বাকি সময়ে মূলত ঘরেই থাকি। বন্ধুদের মজা করে বলছিলাম, হলিউডের ফিউচারিস্টিক সিনেমাগুলো আজকাল একদম যেন সত্যি লাগছে। মুখোশ ঢাকা লোকজন, ক্রমাগত মাইকে ঘোষণা, ফাঁকা রাস্তাঘাট।
সিয়াটেলে এমনিতেই দশ মাস মেঘ-বৃষ্টি আবহাওয়া। এপ্রিল থেকে লোকজন গ্রীষ্মকালের জন্য মুখিয়ে থাকে। সারা শহর জুড়ে হাজারও অনুষ্ঠান। তাই এই লকডাউন আর দু’মাস বাড়ালে সেটা কতটা ফলপ্রসূ হবে সন্দেহ। এখানে পুলিশ যখন তখন মানুষ পেটাতে পারে না। যদিও ৩ মে পর্যন্ত লকডাউন চলার কথা, তবে এক দিনে সবার আইসোলোশন উঠবে না বলেই মনে হয়। হলে তা ধাপে ধাপেই হবে। এখন অপেক্ষা, এই বেড়ালের ভাগ্যে কবে শিঁকে ছেঁড়ে! আমাদের সেন্টারের বিজ্ঞানীরা ভীষণ ভাবে কোভিড-১৯ এর গবেষণাতে যুক্ত আর আমিও খুব শীঘ্রই সামান্য ভাবে যুক্ত হতে চলেছি সেই কাজে। আপাতত তা নিয়ে বেশ উত্তেজিত। কিন্তু ততদিন ওয়ার্ক ফ্রম হোম, চার বেলা রান্না, আর শীর্ষেন্দু। আশা করছি, এই সমস্যার শেষে একে অপরের প্রতি, পরিবেশের প্রতি আমাদের সহানুভূতি একটু হলেও বাড়বে।
রোহিত বন্দ্যোপাধ্যায়
বিআই অ্যানালিস্ট, ফ্রেডহাচ ক্যানসার রিসার্চ সেন্টার
সিয়াটেল, আমেরিকা
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)