মহাকাব্যিক: ‘হোয়াই নট থিয়েটার’ দলের মহাভারত নাটকের দৃশ্য।
আন্তর্জাতিক অভিনেতাদের নিয়ে পিটার ব্রুকের বিখ্যাত মহাভারত-এর ৪০ বছর পর লন্ডনের বার্বিকান থিয়েটারে আবার এই মহাকাব্যের মঞ্চ রূপায়ণ করল টরন্টোর ‘হোয়াই নট থিয়েটার’ দল। প্রথম বার দক্ষিণ এশীয় শিল্পীদের নিয়ে নাচে, গানে, গল্প শুনিয়ে জমজমাট এক প্রযোজনা। নাটকের দু’টি পর্ব। ‘ধর্ম’ ও ‘কর্ম’। প্রতিটির সময়সীমা আড়াই ঘণ্টা। অভিনেতারা ক্যাম্পফায়ার ঘিরে গোল হয়ে বসে, সূত্রধর গল্প বলা শুরু করলেন। ‘কর্ম’-তে ধরা পড়ল পাণ্ডব কৌরবদের জন্মবৃত্তান্ত, ভাইদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তাঁদের কৃতকর্ম যা আগামী প্রজন্মের উপরেও প্রভাব বিস্তার করেছিল। মহাভারতের অপ্রচলিত কিছু গল্পে কিছু চরিত্রের অহঙ্কার, দুর্বলতা ও দুঃখকষ্টের দিকটি ফুটে উঠল। দ্বিতীয় ভাগ ‘ধর্ম’-এ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার উপলব্ধি ও যুদ্ধের ধ্বংসলীলা। অর্জুনকে বলা কৃষ্ণের বাণী উপস্থাপিত হল অপেরার ঢঙে, প্রেক্ষাপটের ডিজিটাল ছবিতে ব্রহ্মাণ্ডের দৃশ্য। কলমে ও পরিচালনায় রবি জৈন ও মিরিয়াম ফার্নান্ডেজ়। চিত্রনাট্যে মূল প্রভাব ক্যারোল সত্যমূর্তির মহাভারত: আ মডার্ন রিটেলিং, দেবদত্ত পট্টনায়কের জয়া ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার। আঙ্গিকে মিশেছে লোককথা, পথনাটক, পশ্চিম ইউরোপের ‘ফিজ়িক্যাল থিয়েটার’ ও মঞ্চসঙ্গীত। দুই অর্ধের মধ্যভাগে খাওয়াদাওয়াও ছিল নাটকের অংশ হিসাবেই, সঙ্গতে হাজির আরও কাহিনির কথামালা। সেই পর্বের নাম ‘খানা অ্যান্ড কহানি’। সব মিলিয়ে প্রায় সাত ঘণ্টার অভিনব ও মনোগ্রাহী নাট্যানুষ্ঠান।শো
শোভা: নিলামে তাজমহল-এর ছবি।
বাংলা ভাষার বন্ধু
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ উইলিয়াম রাদিচেকে ব্রিটেনের বাঙালি সংগঠনের তরফ থেকে জীবনকৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। লন্ডনের সোয়াস-এ তিনি বহু বছর বাংলা পড়িয়েছেন। ছাত্রছাত্রী ও লন্ডনের বাঙালিদের কাছে তিনি আদৃত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা, নাটক ও মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য অনুবাদ করে সমালোচক মহলে সমাদর পেয়েছেন। বাংলা ভাষা শেখার জন্য তাঁর লেখা বইটিরও খুব কদর। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন রাদিচে, বঙ্গসংস্কৃতিতে নিমজ্জিত থেকেছেন। রবীন্দ্রনাথ ও মাইকেলের প্রতি বিশ্বের আগ্রহ ফিরিয়ে এনেছেন। ৭২ বছরের রাদিচে বর্তমানে দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত।
শিল্পসম্ভার
ভারতীয় শিল্পকে পশ্চিমের দরবারে পৌঁছে দিতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন পণ্ডিত, তত্ত্বাবধায়ক ও সংগ্রাহক স্টুয়ার্ট কেরি ওয়েলচ (১৯২৮-২০০৮)। তাঁর মাধ্যমে ভারতীয় শিল্প সম্পর্কে জেনেছিলেন আমেরিকার প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি জ্যাকলিন কেনেডি, শিল্পী হাওয়ার্ড হজকিন, লেখক ব্রুস চ্যাটউইন, চিত্রপরিচালক জেমস আইভরি। ১৯৮৪-তে তিনি জ্যাকি কেনেডিকে ভারতে আনেন, নোটখাতার পাতায় জ্যাকি লেখেন, “আপনি সঙ্গে থাকলে যেন আরও চারটি ইন্দ্রিয়কে অনুভব করি। কখনও যা চোখে দেখিনি, চেখে দেখিনি, যা জানতাম না— সব কী উদ্দীপনার সঙ্গে নাগালে পৌঁছে দেন!” ওয়েলচ তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ শিল্পগ্যালারিতে সাজাতে দিতেন। সেগুলি সদবি’জ়-এ নিলামে উঠবে। সংগ্রহের মধ্যমণি হাতি আতস খানের পিঠে বিজাপুরের সুলতান দ্বিতীয় ইব্রাহিম আদিল শাহের অলঙ্করণ। সতেরো শতকে এই রত্নসদৃশ ছবিটি আঁকেন সুবিখ্যাত মোগল চিত্রকর। আর সেই সময়েরই চুনি-পান্না খচিত ছোরা, মাথায় সিংহের মুখ। এ দু’টির দাম উঠতে পারে যথাক্রমে পাঁচ ও তিন লাখ পাউন্ড পর্যন্ত। কোম্পানির চিত্রশৈলীতে আঁকা উনিশ শতকীয় জ্যোৎস্নাধৌত তাজমহলের ছবির দাম হতে পারে আধ লাখ পাউন্ড।
একটি গাছের অপমৃত্যু
উত্তর ইংল্যান্ডের হেড্রিয়ান’স ওয়াল-এর ফাঁকে প্রায় ৩০০ বছর ধরে দাঁড়িয়েছিল একটি সিকামোর গাছ। রাতারাতি সেটি ভূপতিত। শোকাচ্ছন্ন গোটা ব্রিটেন। দেশের সবচেয়ে প্রিয় গাছের ভোট পেয়েছিল এটি। রবিনহুড: প্রিন্স অব থিভস সিনেমাতেও দেখা গিয়েছে গাছটিকে। এই ‘রবিনহুড গাছ’টিকে গত সপ্তাহে কেউ কেটে মাটিতে ফেলে দিয়েছে। এই নির্বোধ ধ্বংসলীলা নিয়ে তদন্ত চলছে। ১৬ এবং ৬০ বছর বয়সি দু’জন ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন। চলছে বিলাপও। রাষ্ট্রকবি গাছটিকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। গাছটির শূন্যস্থান পূরণ নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছে। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, “এত ভালবাসার গাছটিকে রাতারাতি কেটে ফেললে কেন?”