Calcutta Medical College

সাঁড়াশি সঙ্কট

কোভিড-রোগীর চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট সংখ্যায় শয্যা এবং আপৎকালীন চিকিৎসার সুব্যবস্থা এখন স্বভাবতই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত, জরুরিও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share:

ফাইল চিত্র।

মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে সম্পূর্ণ কোভিড হাসপাতাল করা লইয়া তর্ক চলিতেছিল। স্বাস্থ্য আধিকারিক ঘেরাও হইলেন। অতঃপর কমিটি কী ঠিক করিবে, দেখা যাউক। তবে সন্দেহ নাই, এই মুহূর্তে কোভিড-১৯’এর চিকিৎসাদান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য, সুতরাং মেডিক্যাল কলেজে যত শয্যা এবং যেমন চিকিৎসা পরিকাঠামো রহিয়াছে, যত দক্ষ চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী আছেন, তাহার উপর নির্ভর করা ছাড়া গতি নাই। অবশ্য মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসক ও ছাত্রদের যুক্তিটিও ফেলনা নহে। মেডিক্যাল কলেজ কেবল একটি হাসপাতাল নহে, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বটে। সকল বিভাগে নানা প্রকার অসুখে আক্রান্ত রোগী ভর্তি না হইলে ছাত্রদের শিক্ষা অসম্পূর্ণ থাকিয়া যায়। তাই তাঁহাদের পাল্টা দাবি— যে হাসপাতালগুলিতে পঠনপাঠনের পাট নাই, সেগুলিকে কোভিড হাসপাতাল করা হউক। অথবা সকল মেডিক্যাল কলেজেরই দুই-একটি ভবন কোভিড রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট করা হউক। আর একটি যুক্তিও তাঁহারা দেখাইতেছেন— প্রশাসনিক যুক্তি নয়, চিকিৎসার যুক্তি। যে বিপুল পরিমাণ রোগী বিচিত্র সমস্যা লইয়া মেডিক্যাল কলেজে আসেন, তাঁহাদের অনেকেই আজ চিকিৎসা-বঞ্চিত। শীর্ষস্থানীয় (টার্শিয়ারি) প্রতিষ্ঠান তো বটেই, উৎকর্ষের নিরিখেও মেডিক্যাল কলেজ বিশিষ্ট। তাহার কাজ অপর হাসপাতাল বা যে কোনও মেডিক্যাল কলেজ করিতে পারে না। কাজেই, তাঁহারা মনে করিতেছেন, মেডিক্যাল কলেজকে কেবল কোভিডের জন্য সংরক্ষিত করা ঠিক নহে।

Advertisement

এই সাঁড়াশি সঙ্কটে সিদ্ধান্ত কী হইবে, জটিল বিবেচনা বটে। কোভিড-রোগীর চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট সংখ্যায় শয্যা এবং আপৎকালীন চিকিৎসার সুব্যবস্থা এখন স্বভাবতই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত, জরুরিও। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-শিক্ষকেরা যে অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের বিপন্নতাকে মনে করাইয়াছেন, এবং সামগ্রিক চিকিৎসার সুযোগকে গুরুত্ব দিতেছেন, তাহার মধ্যেও ভাবিবার বিষয় রহিয়াছে। অতিমারি কালে কোভিড-আক্রান্তের মৃত্যুর পাশে কি ডায়াবিটিস, যক্ষ্মা কিংবা প্রসবজনিত সঙ্কট উধাও হইয়াছে? অতিমারির মোকাবিলা জরুরি, কিন্তু পরিচিত রোগের মোকাবিলাও দরকার। তাহা কমিয়া গেলে অতিমারির প্রতিরোধও কঠিনতর হইয়া উঠিতে পারে।

শিক্ষার বিষয়টি আলাদা। অতিমারিতে আক্রান্ত দুনিয়ায় সর্বত্রই সব ধরনের শিক্ষাক্রমে বিঘ্ন ঘটিয়াছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বর্তমান সিমেস্টারে যাহা শিক্ষণীয় ছিল, তাহা পড়ানো সম্ভব হয় নাই। মেডিক্যাল কলেজেও তাহাই ঘটিতেছে। দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু ইহাই বাস্তব। কী ভাবে এই হারানো সময়ের হিসাব পুরাইয়া শিক্ষার স্বাভাবিকতা আনা যায়, তাহা লইয়া ভাবা দরকার। কিন্তু, সেই যুক্তি দিয়া আপাতত কোভিড-রোগের মোকাবিলা স্থগিত করা যায় না। অতিমারি নামক বিপদটি মাপে এতই বড় যে, তাহার বিরুদ্ধে সর্বশক্তিতে না লড়িলে সমূহ বিপদ। যে হাসপাতালে চিকিৎসা চলে, শিক্ষাদানও চলে, তাহাকে আপাতত এই লক্ষ্যপরম্পরা মানিতেই হইবে। সেই কাজে প্রয়োজন চিকিৎসাক্ষেত্রের সকল কর্মীর সহযোগিতা। ছাত্রদেরও। এই সহযোগিতা না থাকিলে সমাজের পক্ষে অতিমারি আঘাত কাটাইয়া ওঠা কঠিন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement