দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। ছবি: পিটিআই।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল প্রস্তাব করিয়াছেন, মহিলা যাত্রীরা সরকারি বাস, মেট্রো প্রভৃতি পরিবহণে বিনা পয়সায় যাতায়াত করিতে পারিবেন। এমন ‘বিশেষ সুবিধা’ পাইলে খুশি হইবার কথা, কিন্তু দিল্লির মহিলা-মহলে আনন্দের বাতাস বহে নাই, বরং বিতর্কের ঘূর্ণিঝড় উঠিয়াছে। সরকারের এই আনুকূল্যই কি মেয়েদের প্রার্থিত ছিল? ভারত দরিদ্র দেশ, রাজধানীতেও দরিদ্র এবং স্বল্পবিত্ত পরিবার কম নাই। পরিবহণের খরচ বাঁচিলে তাহাদের সুবিধাই হইবে। কিন্তু প্রধান সমস্যা সরকারি পরিবহণের খরচ নহে। বাস ও ট্রেনে নিরাপত্তার অভাব, বাসকর্মী ও সহযাত্রীদের দুর্ব্যবহার, বাসের সংখ্যায় অপ্রতুলতা, সীমিত যাত্রাপথ, ভোরে কিংবা রাত্রে পরিবহণের দুষ্প্রাপ্যতা, কাজের সময়ে অতিরিক্ত ভিড়, এমন নানা কারণে গণপরিবহণ ব্যবস্থা মেয়েদের প্রয়োজন পূরণ করিতে ব্যর্থ হইতেছে। মেয়েদের ঘর হইতে বাহির করিয়া জনজীবনে যোগদানে উৎসাহিত করিতে চাহিলে এই সমস্যাগুলির সমাধান আবশ্যক। নির্ভয়া কাণ্ড যে শহরে ঘটিয়াছিল, সেই শহরে পরিবহণে মহিলাদের নিরাপত্তাই কি সর্বাধিক গুরুত্ব পাইবার কথা নহে? কেজরীবাল অবশ্য একই সঙ্গে ঘোষণা করিয়াছেন, নজরদারি বাড়াইতে শহরে দেড় লক্ষ সিসিটিভি ক্যামেরা বসাইবেন। উত্তম প্রস্তাব। কিন্তু এত দিন সে কাজটি কেন করেন নাই, কেন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই জরুরি কর্তব্যটি তাঁহার মনে পড়িয়া গেল, সেই প্রশ্নটি উঠিতে বাধ্য।
গণপরিবহণ ব্যবহারে উৎসাহিত করিতে ভাড়া মকুব করিবার ঘোষণা নানা দেশে হইয়াছে, কিন্তু তাহার উদ্দেশ্য ভিন্ন। ইউরোপের কিছু শহরে পুরকর্তারা দূষণ এবং যানজট কমাইতে গণপরিবহণ ব্যবহার বাড়াইতে চাহেন। তাই তাহা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করিয়াছেন। ইহার প্রধান লক্ষ্য পরিবেশের সুরক্ষা। অপর দিকে, যাঁহাদের আর্থিক সঙ্গতি কম, তাঁহাদের জন্য কম ভাড়া অথবা বিনা ভাড়ার ব্যবস্থাও প্রায় সকল দেশেই রহিয়াছে। ভারতেও ছাত্র, বয়স্ক নাগরিক, এবং কোথাও কোথাও দরিদ্রদের জন্য অর্ধমূল্য বা বিনামূল্যে যাত্রার ব্যবস্থা রহিয়াছে। কিন্তু মহিলাদের জন্য পৃথক কামরা, বিশেষ ট্রেন কিংবা বাস চালু হইয়াছে প্রধানত নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের প্রয়োজনে। অতএব প্রশ্ন, সকল মহিলার টিকিট মাফ করিয়া ঠিক কোন উদ্দেশ্য পূরণ করিতে চাহে সরকার?
টিকিট কাটিবার সঙ্গতি যে মহিলাদের আছে, তাঁহারা বিনা টিকিটের যাত্রী হইতে চাহিবেন কেন? বস্তুত, তাঁহাদের অনেকেই ইহাতে অপমানিত বোধ করিতে পারেন। সরকারি অনুগ্রহ নহে, তাঁহারা চাহেন সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থা। মুম্বইয়ে মহিলারা মধ্যরাতেও স্বচ্ছন্দে বাড়ি ফিরিতে পারেন, কারণ সেখানে লোকাল ট্রেনগুলি গভীর রাত অবধি চলাচল করে, স্টেশন এবং ট্রেনের কামরা যথেষ্ট সুরক্ষিত। নয়াদিল্লি বা কলিকাতার মতো শহরে সেই সুযোগ কোথায়? ভারতে মহিলাদের কর্মস্থলে যোগদানের হার ক্রমশ কমিতেছে। ইহার অন্যতম কারণ অসুরক্ষিত যাত্রাপথ। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট নির্ভয়া তহবিলে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা জমা হইয়াছে, ব্যয় হইয়াছে সামান্যই। কারণ, রাজ্য সরকারগুলি মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য প্রকল্প তৈরি করিয়া উঠিতে পারে না। মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন, ভাড়া মকুব করা সহজ। কেজরীবাল সহজ পথেই হাঁটিয়াছেন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।