Farm Bill

ভয়ঙ্কর হবে মূল্যবৃদ্ধি, দেখা দেবে খাদ্যসঙ্কট

নয়া কৃষি আইনে কি আদৌ লাভ হবে কৃষকের? নাকি ফায়দা লুটবে কর্পোরেট? এ নিয়ে ক্রমশ তপ্ত হচ্ছে রাজনীতি। কলম ধরলেন রাজনীতির আঙিনার ব্যক্তিত্বরাই।ভারতে কৃষি বৃহত্তর অসংগঠিত ক্ষেত্র। এখানে সংগঠিত ক্ষেত্রকে দিয়ে জোর করে বা কর্পোরেট সংস্থার ইচ্ছেমতো চুক্তিচাষ করানো হলে কৃষকের পক্ষে তা ভাল হবে না।

Advertisement

নরেন চট্টোপাধ্যায় (ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক তথা কৃষকনেতা)

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৩৪
Share:

প্রতীকী ছবি

আমাদের রাজ্যে এক সময় কৃষিতে চুক্তিচাষের জন্য ম্যাকিনসের রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রয়াত নেতা কমল গুহ লড়াই করেছিলেন। চুক্তিচাষ, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য এবং কৃষি বিপণন— এই তিনটি আইনের পরিবর্তনের যে অধ্যাদেশ কেন্দ্রীয় সরকার এনেছে, তা কৃষক তথা জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী। ভারতে কৃষি বৃহত্তর অসংগঠিত ক্ষেত্র। এখানে সংগঠিত ক্ষেত্রকে দিয়ে জোর করে বা কর্পোরেট সংস্থার ইচ্ছেমতো চুক্তিচাষ করানো হলে কৃষকের পক্ষে তা ভাল হবে না। দেশবাসীরও অমঙ্গল হবে। অর্থনীতির চরম সর্বনাশ হবে। এ দেশে ১৩০ কোটি মানুষ বাস করেন। তার মধ্যে ৭০ কোটির উপরে কৃষক। এই বিপুল সংখ্যক কৃষকের স্বার্থে স্বাধীনতার পর থেকে সদর্থক তেমন কিছুই করা যায়নি। উল্টে চুক্তিচাষের মধ্য দিয়ে কৃষকের জমি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা আইনসিদ্ধ করার রাস্তা খোলা হচ্ছে। কৃষকের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই বিল আইনে পরিণত হলে নিজের জমিতে অন্যের অর্থাৎ, কর্পোরেট সংস্থার ইচ্ছে এবং নির্দেশ মেনে কৃষককে চাষ করতে বাধ্য করা হবে। কৃষকের এই অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদেই দেশের সমস্ত প্রগতিশীল দল এবং কৃষক বা শ্রমিক সংগঠনকে মিলিত ভাবে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মেহনতি মানুষের গলা থেকে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গ তথা দেশের নানা প্রান্তে প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। কৃষি বিপণন আইন পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে বৃহৎ পুঁজির অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ফড়েদের জন্য নাকি কৃষক ফসলের দাম পান না। তাই যদি হয়, তা হলে ফসল বোনার সময় সরকার সহায়ক মূল্য ঘোষণা করুক। তার থেকে কম দামে যারা ফসল কিনবে, সরকার তাদের গ্রেফতার করুক। তা না করে জামাই আদর করে পুঁজিপতিকে ডেকে আনা হচ্ছে। চলতি বাজার ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীদের থেকেও যে সব দেশি-বিদেশি কর্পোরেট সংস্থা খুচরো ব্যবসায় আসছে, তারা বৃহৎ ফড়ে। ছোট ব্যবসায়ীদের তারা ভাতে মারবে। তাদের হাতে কৃষি বিপণন ব্যবস্থাকে ছেড়ে দেওয়া যায় না। তা হলে দেশের খেটে খাওয়া মানুষের সামনে সমূহ বিপদ ঘনিয়ে আসবে। আমাদের দেশে কৃষিপণ্যের ব্যাপারীরা দু’পয়সা লাভের জন্য ব্যবসা করেন। কৃষকের সঙ্গে কথা বলেই তাঁরা ফসল কেনেন। আমাদের দেশে মান্ডি ব্যবস্থা যুগ যুগ ধরে গড়ে উঠেছে। এই ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। একে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। বেকারত্ব, দারিদ্র নিত্যসঙ্গী। কৃষি বিপণন ব্যবসার সঙ্গে বহু বেকার যুবক যুক্ত। নতুন আইনে বড় বড় সংস্থা মাঠে নামলে তাঁরা আবার বেকার হবেন। অত্যাবশ্যক পণ্য আইনে বদলের পরিণামও ভয়ানক হতে বাধ্য। ১৯৫২ সালে গরিব মানুষকে বাড়ি বাড়ি ভাত-ফ্যানের খোঁজ করতে হয়েছিল খাদ্যসঙ্কট দেখা দেওয়ায়। প্রকৃত অর্থে কিন্তু খাদ্যসঙ্কট ছিল না। মহাজন অতিরিক্ত পণ্য মজুত করে কৃত্রিম খাদ্যসঙ্কট তৈরি করেছিল। তাই, এই অবস্থা যাতে আর না হয়, সে জন্য পরবর্তীকালে সরকার অত্যাবশ্যক পণ্য আইন করে খাদ্যসামগ্রী মজুত রাখার সীমারেখা বেঁধে দেয়। আজ আবার সেই সীমারেখা তুলে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। ফের মজুতদারি ব্যবস্থা চালু করায় উৎসাহিত করছে। ফলে, আগামীতে আবার খাদ্যসঙ্কট তৈরি হবে। মূল্যবৃদ্ধি ভয়ঙ্কর আকার নেবে।কৃষি এবং কৃষিজ বিপণন পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। গায়ের জোরে এর চিরাচরিত ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়া যাবে না। চালু ব্যবস্থাকে উন্নততর করা যেতে পারে। কৃষি মান্ডিগুলো বহাল থাকবে, চালু থাকবে। কারণ, মান্ডিগুলো সরকার অর্থাৎ জনগণের টাকায় তৈরি। এখানে কৃষক, খুচরো ব্যাপারী পণ্য বিক্রি করতে আসবেন। তাঁরা যাতে ন্যায্য মূল্য পান, সরকার সেটা নিশ্চিত করুক। কৃষক তথা জনগণের স্বার্থ বিরোধী আইনের ভাবনা বাতিল করুক।

Advertisement

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement