Ammendment Of Laws

সরকারের সমালোচনা সহজ, কিন্তু বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে কি একই কাজ করবেন না?

সাংবিধানিক ক্ষেত্রে বিরোধীপক্ষের প্রতিবাদ কতখানি আন্তরিক, তার একটা পরীক্ষা প্রয়োজন। তাঁরা কি সত্যিই জম্মু-কাশ্মীর অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা পাওয়ার পরেও তাকে আগের অবস্থাতেই ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান?

Advertisement

টি এন নাইনান

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৩ ১০:১২
Share:

সংসদের বাইরে বিরোধীপক্ষ। —ছবি: পিটিআই।

সংসদের বিরোধীপক্ষকে একটা পরীক্ষার মধ্যে ফেলা যেতে পারে। প্রশ্ন করা যেতে পারে, নতুন জোটে আবদ্ধ হওয়ার পরে বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও ঠিক কতগুলি বিল সংসদে পাশ হয়েছে? এই সব বিরোধীদল যদি ২০২৪-এর সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে, তা হলে তারা এই সব বিলের কতগুলি বাতিল করে দেবে? উদাহরণ হিসেবে প্রশ্ন করা যায়, তারা কি নির্বাচন কমিশনারদের প্যানেল গঠনের ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবে? অথবা, সেই চারটি শ্রম আইন বদলানোর চেষ্টা করবে, যা প্রয়োগ করে নিয়োগকর্তারা চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছেন? আরও জিজ্ঞাসা এই যে, তারা কি নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনে বদল আনবে বা তাকে বাতিল করে দেবে?

Advertisement

যদি বিরোধীরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইস্যুগুলিতে ভিন্ন ধরনের কোনও রকম মনোভাবের পরিচয় দিতে চান, তা হলে সেই ভিন্নস্বরটি কী হবে এবং কেমন ভাবে সেটি প্রকাশ করা হবে, তা জানা দরকার। বিরোধী দলগুলি সিবিআই বা ইডির মতো সরকারি তদন্ত সংস্থাগুলিকে ব্যবহার বা অপব্যবহার নিয়ে সমালোচনা করেন। কিন্তু কংগ্রেস যখন মসনদে ছিল, তখনও সিবিআইকে ‘খাঁচায় পোষা পাখি’বলা হয়েছে। সেই বিন্দুতে দাঁড় করালে কী উত্তর আসবে বিরোধীদলের তরফে? আরও বিশদে দেখলে, বিরোধীপক্ষের তরফে সাংবিধানিক সংস্থাগুলির স্বাধিকারের নিশ্চয়তার বিষয়ে বা অর্থবিলের অপপ্রয়োগ রোখার বিষয়ে সামাজিক এজেন্ডা কী হবে? এ প্রশ্নও থেকে যায়।

জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনগুলির কী হবে? অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইন এই অজুহাতে জনতা সরকার বাতিল করেছিল যে, সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জরুরি অবস্থার সময় কংগ্রেস তার যথেচ্ছ অপব্যবহার করেছিল। এই আইনের উত্তরসূরি ‘টেররিজম অ্যান্ড ডিসরাপটিভ অ্যাক্টিভিটিজ অ্যাক্ট’(টাডা) এবং ‘প্রিভেনশন অফ টেররিজম অ্যাক্ট’(পোটা)-ও বাতিল হয়। সে বার সেই কাজটি করেছিল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। সে বারও অভিযোগ তোলা হয়, এই সব আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহার করা হচ্ছে। এই ইতিহাস এবং অভিজ্ঞতা সম্বল করে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়ে বিরোধীরা কি ‘আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট’ বা ইউএপিএ-র বিরুদ্ধে কিছু করে দেখাবেন?

Advertisement

সাংবিধানিক ক্ষেত্রে বিরোধীপক্ষের প্রতিবাদ কতখানি আন্তরিক, তার একটা পরীক্ষা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে জম্মু ও কাশ্মীর ইস্যুকে নিয়ে আসা যাক। সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারার অবলোপ জম্মু ও কাশ্মীরের বাইরে বিপুল সমর্থন পেয়েছে। সেই সব জায়গায় এই বিষয়টিকে এমন ভাবে দেখা হয়েছে, যেন সেই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে তা নিয়তি-নির্দেশিত ব্যাপার। বিরোধীরা কি সত্যিই জম্মু ও কাশ্মীর অঙ্গরাজ্য হিসেবে মর্যাদা পাওয়ার পরেও তাকে আগের অবস্থাতেই ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান?

বিশেষত সামাজিক ইস্যুগুলির ক্ষেত্রে ইচ্ছে হলেই দ্রুত উল্টো রাস্তায় হাঁটা যায় না। বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে গোরক্ষা সংক্রান্ত আইন বদলে ফেলবেন? সত্যিই কি তাঁরা অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে? নাকি বিরোধীস্বরকেবলমাত্র রেকর্ড রাখার জন্য? কারণ, মুসলমানরা এই ভেবে শঙ্কায় থাকেন যে, এমন আইন হয়তো তাঁদের দিকে তাক করেই তৈরি। মনে রাখা দরকার, বিরোধীরা এই ইস্যুটিকে ঘিরে ইতিমধ্যেই ‘সাবধানে পা ফেলি’র খেলা খেলছেন। কোনও রকম অঙ্গীকারের মধ্যে যেতে চাইছেন না। এই সূত্রে মনে করা যেতে পারে, পঞ্চাশের দশকে যখন জওহরলাল নেহরু ‘হিন্দু পার্সোনাল ল’-এ বদল আনেন, তখন তাঁর বিরোধীরা রক্ষণশীল হয়ে তার বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, বৈদিক যুগ থেকে চলে আসা প্রথা ও আচারে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বর্তমানে বিরোধীপক্ষ স্বপ্নেও এমন বদলের কথা ভাবতে পারেন না। কারণ, এতে উল্টো ফল ফলার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে বৈদিক যুগের বদলে শরিয়তি বিকল্পের প্রসঙ্গ উঠে আসতে পারে। সেটাও খুব স্বস্তিদায়ক কিছু হবে না।

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতের মধ্যে মতপার্থক্য প্রায়শই ভিন্ন ভিন্ন। যদিও বিজেপি একবগ্গা মনোভাব বজায় রেখে সমালোচকদের মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে। হাস্যকর বিষয় হল, সত্তরের দশকে বিজেপি-ই কিন্তু সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে প্রসার ভারতী তৈরির কথা বলেছিল। এখন বিরোধী দলগুলির এ কথা বলার সময় এসেছে যে, সরকারের বাড়াবাড়ির হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করতে ঠিক কোন পন্থা তারা অনুসরণ করবে। তারা কি সংবাদমাধ্যম এবং তথ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনের মতো সাম্প্রতিক দু’টি আইনের অবতারণাকে ভেবে দেখবে? দু’টি আইনই কিন্তু সরকারকে ক্ষমতার সহজ অপব্যবহারের জন্য জমি ছেড়ে দেয়। অভিজ্ঞতা জানায়, এই ধরনের আইন প্রণীত হলে তার অপব্যবহার অনিবার্য।

যখন রাহুল গান্ধী মানহানির মামলায় অপরাধী সাব্যস্ত হন, তখন বিরোধীরা মানহানিকে ‘অপরাধ’ হিসেবে দেখা যায় না, এই মর্মে কোনও বক্তব্য পেশ করেছিলেন? অথচ বহু গণতন্ত্রেই কিন্তু মানহানি এখন আর ‘অপরাধ’ হিসেবে ধরা হয় না। প্রশ্ন এখানেই যে, বিরোধীপক্ষ কি সেই অঙ্গীকার করতে পারে, যেখানে কোনও রকম পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই, ইতিহাসের কোনও উদাহরণ ছাড়াই এমন সব ইস্যুতে পথে নামতে তারা প্রস্তুত?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement