ভারত-চিন সীমান্ত রেখার কাছে আরও সাতটি নতুন টানেল বা সুড়ঙ্গপথ তৈরির পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র। সম্প্রতি দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফেই দেওয়া হয়েছে এই তথ্য।
চিন সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার চেষ্টা দীর্ঘ দিন ধরেই করছে ভারত। ২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পূর্ণ উদ্যমে এ সংক্রান্ত পুরনো প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত করার কাজ শুরু হয়। পাশাপাশি আরও অনেক নতুন টানেল তৈরির পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছিল নতুন সরকারের তরফে।
দিন কয়েক আগে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী অজয় ভট্ট জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই পাঁচটি টানেল তৈরির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। আর তা শেষ হয়েছে গত তিন বছরে। এ ছাড়া আরও ১০টি টানেলের কাজ চলছে। এই ১৫টির বাইরে আরও নতুন সাতটি টানেল তৈরির পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র।
মন্ত্রী জানিয়েছেন এই টানেলগুলি তৈরি হলে ভারত-চিন সীমান্তে পৌঁছনোর যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ এবং দ্রুত হবে। ভারত এবং চিনের মাঝখানে রয়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বা লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি)। সুড়ঙ্গপথ বেয়ে সেই নিয়ন্ত্রণরেখায় সহজে এবং দ্রুত গতিতে পৌঁছে দেওয়া যাবে সেনা, অস্ত্র এমনকি, গোলা-বারুদও।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, এই সমস্ত টানেলের প্রত্যেকটিই তাই অত্যন্ত গুরুত্ববাহী। তবে এর মধ্যে অন্যতম প্রধান হল অটল টানেল। ৯.০২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেলের কাজ ২০২০ সালেই সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। ফলে গত এক বছর ধরে এই টানেলের মাধ্যমে ভারত-তিব্বতের মাঝে থাকা লাহুল-স্পিতি উপত্যকায় পৌঁছনোর কাজ অনেকটাই সহজ হয়েছে।
এ ছাড়া অগস্টের শেষে সেলা টানেলের কাজও সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ভট্ট। সেলা সুড়ঙ্গপথ অসমের গুয়াহাটিকে সঙ্গে জুড়বে অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ের সঙ্গে।
কিন্তু কেন হঠাৎ ভারত-চিন সীমান্তে সুড়ঙ্গপথ তৈরির কাজ শুরু করেছে কেন্দ্র? কেনই বা সাতটি নতুন টানেলের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে কি চিনের সঙ্গে যুদ্ধের আশঙ্কা করছে সরকার?
কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অবশ্য জানাচ্ছেন, ২০১৪ সাল থেকে সীমান্ত সংক্রান্ত পরিকাঠামো বৃদ্ধির ব্যাপারে চেষ্টা করে চলেছে মোদী সরকার। তার জন্য ঢালাও বরাদ্দও বৃদ্ধি করা হয়েছে গত ন’বছরে। ২০১৩-১৪ সালে এর জন্য ৩৭৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, ২০২৩-২৪ অর্থ বর্ষে সেই বরাদ্দ চার গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বলছে, গত আট বছরে সীমান্তে পৌঁছনোর সেতুপথের দৈর্ঘ্যও বেড়েছে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে। ২০০৮-২০১৪ সাল পর্যন্ত ৭২৭০ মিটার সেতুপথ তৈরি করা হয়েছিল। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালে তিন গুণের বেশি বেড়েছে সেই দৈর্ঘ্য। পরিসংখ্যান বলছে এই দৈর্ঘ্য বেড়েছে ২২ হাজার ৪৩৯ মিটার।
এ ছাড়াও অরুণাচল প্রদেশে আরও ১৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্রন্টিয়ার হাইওয়ে তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপ সীমান্ত এবং আশপাশের জনপদগুলির মধ্যে যোগাযাগ অনেক সহজ এবং দ্রুত করতে সাহায্য করবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি, বরাদ্দ বৃদ্ধির কারণেই গত কয়েক বছরে ভারত-চিন সীমান্ত সংলগ্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত করার কাজে অনেক বেশি গতি এসেছে। তার আরও একটি কারণ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।
সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় নির্মাণ এবং প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকে মূলত তিনটি সংগঠন।
এদের মধ্যে নির্মাণের কাজে প্রথম এবং প্রধান হল বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন (বিআরও)। সীমান্তে পৌঁছনোর টানেল, রাস্তা, সেতু বানানোর দায়িত্বে থাকে এরা। এ ছাড়া সেনাবাহিনী নিরাপদ আশ্রয় তৈরির দায়িত্বও থাকে এদের উপরেই।
দ্বিতীয় ভারপ্রাপ্ত সংস্থা হল ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ। এদের কাজ হল সীমা লঙ্ঘন এবং পরিকাঠামো সংক্রান্ত কাজে সেনাকে সাহায্য করা। সীমান্তে নজরদারি এবং টহলে সাহায্য করা।
সীমান্ত সংক্রান্ত প্রতিরক্ষার তৃতীয় দায়িত্বটি বর্তায় স্পেশ্যাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের উপর। এদের কাজ হল হিমালয় এবং এলএসি বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় কমান্ডো অভিযান চালানো।
ইতিমধ্যেই বিআরও বহু টানেল তৈরি করেছে ফেলেছে ভারত-চিন সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায়। যার মধ্যে অন্যতম শিঙ্কুন লা, নেপিচু টানেল। আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে উত্তরাখণ্ডে বুন্দি থেকে গারবিয়ান পর্যন্ত একটি সুড়ঙ্গপথ তৈরির পরিকল্পা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
ছ’কিলোমিটার দীর্ঘ ওই টানেল তৈরির জন্য খরচ পড়বে দু’হাজার কোটি টাকা। এই সুড়ঙ্গপথটি তৈরি হলে ভারত-চিন সীমান্ত সংলগ্ন লিপুলেখ পাসে পৌঁছনোর কাজ সহজ হবে বলে জানিয়েছেন ভট্ট।