RBI

Indian Economy: সঙ্কটপূর্ণ বিশ্বে ভারতের অর্থনীতি কি বিপন্ন? নাকি আশার আলো রয়েছে কোথাও

যদি অর্থনীতির বৃদ্ধির দিক থেকে ভাবা যায়, তবে তুলনামূলক ভাবে ছবিটি আরেকটু উৎসাহব্যঞ্জক।

Advertisement

টি এন নাইনান

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২২ ১০:৪৭
Share:

যদি বিশ্ববাণিজ্যের গতিতে শ্লথতা দেয়, ভারতের রফতানি বাণিজ্যও তার দ্বারা আক্রান্ত হবে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ভারতীয় অর্থনীতি যত সঙ্কটাপন্নই হোক না কেন অন্য দেশের তুলনায় তা খানিক উজ্জ্বল বলেই প্রতিভাত হচ্ছে ইদানীং। পণ্যমূল্যের প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু করলে দেখা যাবে, আমেরিকায় ভোক্তার নিরিখে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ৮.৫ শতাংশ। ৪০ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। ইউরো-নির্ভর দেশগুলিতে তা ৭.৫ শতাংশ। এই সব অর্থনীতি সাধারণত দুই শতাংশেরও কম স্ফীতিতে অভ্যস্ত ছিল। ভারতে আমরা পেট্রোল, ডিজেল-সহ কিছু খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আর্তস্বরে ক্ষোভ প্রকাশ করছি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, পাইকারি বাজারে পাতিলেবুর দাম বেড়ে কিলোগ্রাম প্রতি ৩০০-৩৫০ টাকা দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এই মর্মে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দিকে সমালোচনার আঙুল উঠছে যে, আগে থেকে কেন তারা এই লাগামছাড়া মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য উল্লেখযোগ্য ভাবে সক্রিয় হয়নি।

এ সব সত্ত্বেও ভারতে ভোক্তার নিরিখে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ৭ শতাংশের নীচেই থেকেছে। ‘ব্রিকস’ অর্থনীতির দেশগুলির (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতিকে ২০১০ সাল থেকে এই নামেই অভিহিত করে হয়। প্রসঙ্গত, ইংরেজ অর্থনীতিবিদ জিম ও’নিল দাবি করেছিলেন এই দেশগুলিই ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতির প্রধান পরিচালক শক্তিতে পরিণত হবে) মধ্যে ব্রাজিলের মুদ্রাস্ফীতি দুই অঙ্কের ১১.৩ শতাংশ, রাশিয়ার ১৬.৭ শতাংশ। কেবল মাত্র চিনের মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা সংহত। ১.৫ শতাংশে তারা স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলছে (এই পরিসংখ্যানগুলি ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ সূত্রে প্রাপ্ত)।

যদি অর্থনীতির বৃদ্ধির দিক থেকে ভাবা যায়, তবে তুলনামূলক ভাবে ছবিটি আরেকটু উৎসাহব্যঞ্জক। অর্থনীতিবিদদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ২০২২-এ ভারত এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। তার বৃদ্ধির হার ৭.২ শতাংশ। বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলির মধ্যে এর পরেই রয়েছে চিন। তার বৃদ্ধির হার ৫.৫ শতাংশ। তুলনায় আমেরিকা এবং ইউরো-নির্ভর অঞ্চলের দেশগুলির বৃদ্ধিহার যথাক্রমে ৩ এবং ৩.৩ শতাংশ। লক্ষণীয়, এগিয়ে থাকা অর্থনীতির দেশগুলির বৃদ্ধির হার ‘উন্নয়নশীল’ তকমাধারীদের চাইতে স্বাভাবিক ভাবেই শ্লথ। এ সব সরিয়ে রেখেও দেখা যায়, বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্রাজিল স্থবিরতা প্রাপ্ত এবং মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ১০.১ শতাংশ ধসের কারণে রাশিয়া ঘোরতর সঙ্কটে। তুলনায় জাপানে মুদ্রাস্ফীতির হার কম এবং বৃদ্ধির হারও ক্রমোন্নতির দিকে।

Advertisement

অর্থনীতির বৃদ্ধির দিক থেকে ভাবা যায়, তবে তুলনামূলক ভাবে ভারতের ছবিটি আরেকটু উৎসাহব্যঞ্জক। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনায় ভারতের অর্থনীতির উজ্জ্বল দিকগুলির এখানেই ইতি নয়। মুদ্রাস্ফীতি রোধে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে সমস্ত পদক্ষেপ করছে, তা উন্নত অর্থনীতির দেশগুলির সাপেক্ষে খানিক ধৈর্য সহকারে নজর করলে ভাল হয়। এই বিষয়টিতে দু’টি ইতিবাচক ব্যাপার দেখা গিয়েছে। প্রথমত, করসংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী কাজ দেখা গিয়েছে (কর-জিডিপি অনুপাতের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক কালে সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত হয়েছে)। এবং দ্বিতীয়ত, রফতানির ক্ষেত্রে লক্ষণীয় সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে আত্মবিশ্বাস রীতিমতো নজর কাড়ছে। ভারতীয় টাকার মূল্যমান বিশ্বের অন্যতম স্থিতিশীল মুদ্রাগুলির একটি বলে পরিগণিত হতে শুরু করেছে। গত এক বছরে আমেরিকান ডলারের নিরিখে ভারতীয় টাকার মূল্যমান হ্রাসের মাত্রা ছিল মাত্র ১.৪ শতাংশ। চিনের ইউয়ানকে বাদ দিলে ডলারের নিরিখে যে মুদ্রাগুলির মানোন্নয়ন ঘটেছে, সেগুলি মূলত খনিজ তেল রফতানিকারক দেশগুলির মুদ্রা, যার মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া এবং মেক্সিকো।

এখন প্রশ্ন এই যে, সাম্প্রতিক কালে দৃশ্যমান পাল্টা হাওয়ার দাপটের সামনে এই সব ‘সুসংবাদ’ কত দিন স্থায়ী হবে? খনিজ তেলের দাম বাড়তির দিকে থাকলে ভারতীয় টাকার মানও তেজি থাকবে। সর্বোপরি, আমেরিকার অর্ত্থনৈতিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ হারের ভবিষ্যদ্বাণী ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলেই মনে হয়। ‘ইন্টারেস্ট ইল্ড কার্ভ’ (যে লেখচিত্র দ্বারা বন্ড বা ঋণপত্রগুলির পরিমাণগত সমতা রয়েছে, কিন্তু তাদের পূর্ণতাপ্রাপ্তির দিনক্ষণ পৃথক বলে ইঙ্গিত করা হয়)-এর বিপরীত গতি (অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বগতি প্রাপ্তি না ঘটে ধীরে ধীরে নিম্নগামী হওয়া) থেকে বাজার পর্যবেক্ষকদের সিদ্ধান্ত এই যে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি এক মন্দাবস্থার দিকে ধাবমান। এমতাবস্থায় প্রধানতম প্রশ্ন হল, আমেরিকান অর্থনীতির নিয়ন্তা শক্তি কি মন্দাকে আহ্বান না জানিয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হারকে নির্ধারণে সমর্থ হবে? যদি তেমন কিছু ঘটে তবে বিশ্বের অর্থনীতির সর্বত্রই তার প্রভাব পড়বে। যদি বিশ্ববাণিজ্যের গতিতে শ্লথতা দেয়, ভারতের রফতানি বাণিজ্যও তার দ্বারা আক্রান্ত হবে।

Advertisement

এমনকি, যদি এই সব কিছু থেকে সরে এসেও দেখা যায়, তা হলেও তুলনামূলক কিছু পরিসংখ্যান ভারতের জন্য সুসংবাদ বহন করার চেয়ে বিশ্বের ক্ষেত্রে দুঃসংবাদ বয়ে আনছে। চার মাস আগে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি বিষয়ে অর্থনীতিবিদদের ভবিষ্যদ্বাণী মুদ্রাস্ফীতির খুব খারাপ দশাতেও একটি মাত্রা বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছে। মাসিক উৎপাদনের পরিসংখ্যান মোটামুটি ভাবে ঠিকই থেকেছে, যখন বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে ব্যবসায় মন্দার ছবি উঠে আসছিল। প্রকৃতপক্ষেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে ৪.১ শতাংশের বেশি আর্থিক বৃদ্ধি আশাও করে না। এবং সংস্থার মতানুযায়ী তার পর থেকে বৃদ্ধির লেখচিত্র ঊর্ধ্বগামী হবে। এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণীর অন্তরে অনিশ্চয়তার ছায়া অবশ্যই দৃশ্যমান।

মুদ্রাস্ফীতি রোধে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে সমস্ত পদক্ষেপ করছে, তা উন্নত অর্থনীতির দেশগুলির সাপেক্ষে খানিক ধৈর্য সহকারে নজর করলে ভাল হয়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

এই দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা খুব সামান্যই। সরকার তার আর্থিক নীতির প্রসারণ ঘটাতে পারে, অতিমারির ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন বিচ্যুতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে এবং এই মুহূর্তে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জাত গোলযোগের মোকাবিলা করতে পারে। কোভিডের ক্ষেত্রে কড়া নিয়ন্ত্রণ আনতে চিন তার সর্ববৃহৎ মহানগর সাংহাইয়ের দ্বার বন্ধ করেছে। এমন ক্ষেত্রে এ কথা ভাবা বৃথা যে, দেশের অর্থনীতিতে কোনও পতন লক্ষণীয় হয়ে উঠবে না এবং বিশ্বের অন্যত্রও তা দৃশ্যমান হবে না। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু পর থেকে বিশ্বের কোনও কোনও স্থানে কোভিড অতিমারির তরঙ্গ নতুন করে দেখা দিচ্ছে। সম্ভবত এই তরঙ্গগুলি আরও প্রকট এবং প্রসারিত হয়ে দেখা দেবে। সুতরাং পরিসংখ্যানের দিক থেকে ভারতীয় অর্থনীতিকে যতখানি উজ্জ্বল বলেই মনে করা হোক না কেন, তা নিয়ে উল্লসিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও আসেনি। মনে রাখতে হবে, আমরা কিন্তু এক সঙ্কট-দীর্ণ বিশ্বেই বাস করছি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement