যে দেশের মাটি তাঁকে চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল, তার প্রতি ঋণ শোধ করে গিয়েছেন জীবন জুড়ে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গলায় স্টেথো। পেটানো দেহ। চোখে আগুন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী যখন গাঁয়ের পথে হেঁটে যেতেন, মনে হত, ঘরের দোরে এমন এক জন এসেছেন যিনি অনেকটা নর্মান বেথুন, বেশ কিছুটা কামাল পাশা, আর সঙ্গে একঝলক চে গ্যেভারা। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আজ যে গোটা বিশ্ব জুড়ে আলোচিত, তার ভিত্তি কিন্তু গড়ে দিয়ে গিয়েছেন এই জাফরুল্লাহই। এপ্রিলের ১১ তারিখে চলে গেলেন তিনি। যাওয়ার আগে, একমাথা ঝাঁকড়া চুল নিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে চার কুড়ি দু’বছর ধরে তিনি অবিরাম পথ হাঁটলেন মানবতার উপকূলে।
প্রাইভেট জেট চালানোর লাইসেন্স ছুড়ে ফেলে জাফরুল্লাহ সওয়ার হয়েছিলেন বাইসাইকেলের। দেশ স্বাধীন করা, প্রত্যেক নাগরিকের বুকভরা শ্বাস ফেলার মতো তৈরি করার পর দেশকে তাঁদের বাসযোগ্য করে তোলার কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চিকিৎসক জাফরুল্লাহ হয়ে উঠেছিলেন সমাজ গঠনের কারিগর। এবং তার পর ইতিহাস।
জাফরুল্লাহ কোনও জটিল ব্যাধির ‘মহা মূল্যবান’ ওষুধ আবিষ্কার করেছিলেন, তেমন নয়। তিনি নিরাময় সন্ধান করেছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত ব্যাধির। যার নাম— শ্রেণি বিভাজন, অসাম্য, শ্রেণি শোষণ। এই সন্ধানের মধ্যে দিয়েই জাফরুল্লাহ সারা পৃথিবীর সুযোগ-বঞ্চিতদের চোখে ‘বড় ডাক্তার’ হয়ে থেকে গেলেন। চিকিৎসার সাধারণ রূপটাকে বৈষম্যে ভাগ হওয়া সমাজে কী ভাবে আরও বেশি মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানোর কাজে লাগানো যায়, রয়ে গেলেন সেই পথের দিশারি হয়ে।
১৯৭১ সাল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তখন জ্বলছে। দেশ স্বাধীন করার জন্য প্রত্যেক জনপদে যুবক-যুবতীরা হাতে তুলে নিয়েছেন রাইফেল। প্রতিভাবান চিকিৎসক জাফরুল্লাহর বয়স তখন বছর পঁচিশ। আরও বড় চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি তখন কাজ করছেন লন্ডনে ‘ভাস্কুলার সার্জারি’ বিষয়ে। প্রতিবাদের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে এক দিন লন্ডনের হাইড পার্কে প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেললেন নিজের পাকিস্তানি পাসপোর্ট! বিলেত বিভুঁইয়ে হয়ে গেলেন উদ্বাস্তু। তার পর শুরু হল পথ চলা।
জাফরুল্লাহর মন তখন ছটফট করছে কী ভাবে দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থাকা যায় সেই লক্ষ্যে। রোমহর্ষক বুদ্ধি খাটিয়ে, ট্রাভেল পারমিট জোগাড় করে সিরিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানে চেপে তিনি চলে এলেন কলকাতায়। সেখান থেকে ত্রিপুরার সীমান্তে ‘মেলার মাঠ’ নামের জনপদে। গড়ে তুললেন ৪৮০ শয্যার যুদ্ধক্ষেত্রের ফিল্ড হাসপাতাল— নাম হল ‘বাংলাদেশ হাসপাতাল’।
পাহাড়ের টিলার উপর বাঁশের মাচায় আহত সৈনিকদের শুশ্রূষা করার জন্য জাফরুল্লাহর সঙ্গী হল অসমান্য এক নারী বাহিনী। সেই বাহিনীর কেউই প্রশিক্ষিত বা ডিগ্রিধারী সেবিকা নন। হৃদয়, সাহস, বুদ্ধি আর ইচ্ছা নিয়ে তাঁরা ছুটে এসেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। নারীর অমূল্য জীবন, নিজের বেঁচে থাকা এবং অন্যকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষমতা ও হাতের কাছে থাকা সম্পদকে কাজের মতো করে তুলে আপৎকালীন চিকিৎসা ব্যবস্থা তৈরি করে দেশমুক্তির লড়াইয়ের সঙ্গী হওয়ার সে এক সোনাঝরা সময়।
নর্মান বেথুন, দ্বারকানাথ কোর্টনিসরা এ ভাবেই চিনের মুক্তি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। চিকিৎসা এমন একটি সৃষ্টিশীল বৃত্তি যা আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়ানোর প্রেরণাকে প্রসারিত করার সুযোগ এনে দেয়। এমন সুযোগ অন্য পেশায় পাওয়া মুশকিল। যিনি তাতে উদ্বুদ্ধ হন, তিনি তাঁর কাজের জায়গা থেকে প্রতিমুহূর্তে ছুটে বেড়ান, হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মিশে যান মানুষের প্রতি দিনের জীবনে। জাফরুল্লাহর ভিতরে জ্বলতে থাকা আগুন ঠিক তেমন ভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতেই পরিপক্ক হয়ে উঠল।
দেশ তো স্বাধীন হল। কিন্তু মূল লড়াইটা তার পর। ভগ্নস্তূপ হয়ে ওঠা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ভাস্কুলার সার্জন জাফরুল্লাহ হয়ে উঠলেন লোকস্বাস্থ্যের চিন্তক, সংগঠক এবং কর্মী। গড়ে তুললেন সংগঠন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র যা মুক্তস্বাস্থ্য ও সমাজ চিন্তার গর্ভগৃহ। মেয়েদের মাঠে নামাতে পারলে, কাজে লাগাতে পারলে যে প্রায় অব্যবহৃত সামাজিক শক্তির উন্মোচন হয়, জাফরুল্লাহ তা প্রায়োগিক ভাবে দেখেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময়।
১৯৭২ সালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের লোকস্বাস্থ্যের উদ্যোগগুলির কেন্দ্রেও থাকতেন মেয়েরা। পুঁথিগত শিক্ষার সুযোগ না পাওয়াদেরও স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসার ন্যূনতম জ্ঞানগম্যি দিয়ে কী ভাবে প্রশিক্ষিত করে তোলা যায়, ঘরের বাইরে বার করে তাঁদের শিক্ষায় আগ্রহান্বিত করে তোলা যায়, সেই কাজই হয়ে উঠল জাফরুল্লাহর ধ্যান-জ্ঞান।
নারীর ক্ষমতার ভূমিকা যে শুধু আর্থিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, সমাজের অন্তর্লীন ধাত্রী হিসাবে তাদের সামাজিক অঙ্গনের অংশগ্রহণ শক্তিশালী সমাজ গঠনের সহায়ক হতে পারে, এই ধারণায় জাফরুল্লাহ চালিত হয়েছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। লোকস্বাস্থ্যের সুর, তাল, লয় যে মূলত মানুষের ঘরের দাওয়াতেই বাঁধতে হয়, সে কথা তিনি বিশ্বাস করতেন দৃঢ় ভাবে।
‘গরিবের ডাক্তারি’ বলে আলাদা কোনও বস্তু আছে নাকি? আছে বৈকি! জাফরুল্লাহর সমগ্র জীবন জুড়ে চিন্তা ও অনুশীলনের আলাপ চালিয়ে গিয়েছে এই ‘গরিবের ডাক্তারি’। টাকা এ সমাজের কর্তা। বিধাতাও। জগৎ জীবনের আলো আর সুখ সবটাই শুষে নেন মুদ্রার মালিক। এমন সমাজে সুযোগ-বঞ্চিত হাড় জিরজিরে, দুঃখের বানভাসি মানুষদের জন্য আলাদা চিকিৎসাবিজ্ঞান নয়, আলাদা চিকিৎসাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হয়। যে ব্যবস্থায় বিজ্ঞান থাকবে, চিকিৎসা থাকবে, যত্নের মান থাকবে। অথচ প্রতিটি ক্ষয়গ্রস্ত লোক অক্ষয় জীবন গড়ে তোলার সুযোগ পাবে।
এ রকম ব্যবস্থার মধ্যে থাকবে মমত্ব এবং ইচ্ছা। থাকবে না অপ্রয়োজনীয় আর্থিক প্রাপ্তি বাড়ে এমন ওষুধ এবং আধুনিকতার নামে চিকিৎসা প্রকরণের আবর্জনা। দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যবস্থার অভিমুখ বদল না-হলে বিনি পয়সার ডাক্তারি গরিবের প্রয়োজনের উপযোগী হতে পারে না। ডাক্তার জাফরুল্লাহ বাংলাদেশের পলি মাটিতে এ রকম একটা ব্যবস্থার ফসল ফলাতে সারা জীবন লড়াই চালিয়ে গেলেন। হ্যাঁ, লড়াই-ই বটে। কারণ, প্রচলিত এবং উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হুকুমের বিপ্রতীপে হাঁটতে গিয়ে তাঁকে কম প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়নি। দেশপ্রেমিক সংগঠক জাফরুল্লাহকে প্রায়শই হজম করতে হত নানান অভিধা— উদ্ধত, গোঁয়ার, স্বাস্থ্য-নৈরাজ্যবাদী অথবা দেশদ্রোহী। জাফরুল্লাহর সব থেকে বড় অবদান সে দেশে আত্মনির্ভর ওষুধনীতি প্রণয়নের। চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচেয়ে জোরালো হাতিয়ার ওষুধ। আবার বাজারের নানা কালিঝুলি মেখে তা প্রায়ই হয়ে দাঁড়ায় বুজরুকির ক্ষেত্র। আর্থিক অনিয়মের অন্যতম আখড়া। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ওষুধ শিল্পে নানা রোগের মধ্যে যে দু’টি সব থেকে বেশি পীড়াদায়ক— বাজারে অপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাপাদাপি এবং জীবনদায়ী ওষুধকে সোনার মতো দামি করে মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে চলে যাওয়া। জাফরুল্লাহ উপলব্ধি করলেন, রোগ-জ্বালা জর্জরিত, হামাগুড়ি দিতে দিতে বড় হওয়ার অদম্য প্রেরণাসমৃদ্ধ নতুন দেশকে কোমর শক্ত করে গড়তে হলে এই জায়গাটায় নীতিগত পরিবর্তন জরুরি।
বাংলাদেশের জাতীয় ওষুধনীতি জাফরুল্লাহর সুদৃঢ় নেতৃত্বে চালু হল ১৯৮২ সালে। এ জন্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি তাঁকে। এমনকি, শারীরিক আক্রমণের মুখেও পড়তে হয়েছে। দেশ গঠনের কাজে এ এক অসীম সুখের গর্ভযন্ত্রণা। বহুজাতিকের মৃগয়াক্ষেত্র থেকে জাতীয় ওষুধ শিল্পে নির্ভরতা গড়ে তোলা, তার গুণমানও যাতে আন্তর্জাতিক স্তরের জন্য হয় সে জন্য নজরদারি ব্যবস্থা চালু করা— এই সব কাজের মধ্য দিয়ে জাফরুল্লাহর মৃত্যুঞ্জয়ী অবস্থান তৈরি হচ্ছিল। শুধু জাতীয় শিল্প তৈরি নয়, মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা যাতে ঠিক ভাবে হয়, সে জন্য প্রয়োজন ছিল মানুষের ভাবনার জায়গাটাকেও তৈরি করা। দেশ গড়ার এ এক অসামান্য আন্দোলন। প্রকৃত দেশপ্রেমিকরাই যা পারেন। এ দেশে আমরা পারিনি। উন্মুক্ত বাণিজ্যের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে এ দেশে ওষুধশিল্পে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগ ও প্রভাব ক্রমশ বেড়েছে। বেড়েছে ওষুধের দামও। অপ্রয়োজনীয় ওষুধের কিলবিল করা পাটে এ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন প্রতি দিন হাপর টানে।
অন্য দিকে, ওষুধনীতির সুফল গুণে বাংলাদেশ শুধু যে আত্মনির্ভর হয়েছে তা নয়, বহুজাতিকের লুটপাট বন্ধ করে সবার সাধ্যের মধ্যে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে এখনও অনেকটা সফল। যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, অতিমারি, নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামনে পড়া শুধু বাংলা ভাষাতেই কথা বলা দেশটা ছুটতে শুরু করেছিল জাফরুল্লাহর পরিশ্রম, উদ্ভাবনী ক্ষমতা, মাটিতে পা, আকাশে চোখ রেখে হাঁটার উপর ভরসা করেই।
পেশার মধ্যে ও বাইরে থেকে মানুষের ঘরের দরজায় পা রেখে লোকস্বাস্থ্যের কাব্য রচনা করে চলা জাফরুল্লাহকে কিন্তু এ কথা কম শুনতে হয়নি যে, “উনি আবার লোকস্বাস্থ্যের কি বোঝেন? উনি তো সার্জন।” লোকস্বাস্থ্যের কলা, রণনীতি তৈরি করতে হয় চিকিৎসা এবং সমাজবিদ্যার নানান ভাবনার সম্মিলন ঘটিয়ে। তাতে বিজ্ঞানের ধারাপাত মুখস্থ করে উতরানো বিদ্যার পারদর্শিতা যেমন লাগে, ঠিক তেমনই লাগে তার প্রখর অন্তর্দৃষ্টির বিজ্ঞানসিদ্ধ কবিগোছের সেই মানুষদের, যাঁরা মানুষের ঘাম, রক্তের দাগ অন্যের থেকে ভাল দেখতে পান সমাজের দেওয়ালে।
লজিস্ট, ডিগ্রিধারী, সুতনয়দের দিয়ে চিকিৎসার বিক্রিবাট্টা জমে, অধুনা রংচঙা হয়ে ওঠা ‘পাবলিক হেলথ’-এর কাগুজে ছলাকলাও মন্দ হয় না। কিন্তু লোকস্বাস্থ্যের সুর,তাল, লয় রপ্ত করতে গেলে লাগে কাদা মাটিতে পা, মানুষের দরজায় কড়া নাড়ার সাহস এবং ইচ্ছে। মানুষের প্রতি দিনের প্রলম্বিত সুখদুঃখের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রোগব্যাধির সন্ধান করতে হয়। জাফরুল্লাহ কোট-টাই ছেড়ে জনপদে জীবন পেতে সেই ক্ষমতাকে রপ্ত করেছিলেন। অনুশীলনও করেছেন জীবনভর।
জাফরুল্লাহর রাজনৈতিক পদক্ষেপ এবং ভাবনা অনেক সময়েই পরম শ্রদ্ধাশীলের কাছেও এলোমেলো ঠেকেছে। উদারমনা মানুষটি সব সময় চেয়েছেন, দেশের শাসক যেন প্রত্যেক মানুষের কল্যাণ করে। বাস্তবে তা ঘটেনি। কুপিত হয়েছেন। লাগামছাড়া আগুনে, ক্রোধে বিদ্ধ করেছেন মনকে। তা যে সব সময় যুক্তি নির্ভর হয়েছে তা নয়। আক্ষরিক অর্থেই তিনি যেন ছিলেন বাঁশরি হাতে ‘অর্ফিয়াস’ আর ‘স্পার্টাকাস’-এর বিদ্রোহী সত্ত্বার এক অদ্ভুত মানব মিশ্রণ।
চিকিৎসা পেশা জাফরুল্লাহকে সমাজের নানা কোণে বিচরণ করার যে সুযোগ দিয়েছিল, তার সবটুকু তিনি নিংড়ে নিয়েছেন। অস্থির সময় তাঁর সৃষ্টিশীলতাকে পরিশীলিত হওয়ার যে মঞ্চ দিয়েছিল, তার সদুপযোগ করতে তিনি প্রাণপাত পরিশ্রম করেছেন। যে দেশের মাটি তাঁকে চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল, তার প্রতি ঋণ শোধ করে গিয়েছেন জীবন জুড়ে।
পরিতাপের এটাই যে, জাফরুল্লাহর চলে যাওয়ার সংবাদ গঙ্গা-গোমতীর পারের জনপদে খবর-হরকরাদের কলম কিংবা কল্পনায় জায়গা পায়নি। পৌনে একশো বছর আগেও এক সুরে গান গাওয়া বাঙালি জাতিসত্ত্বাকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েই শুধু নয়, হৃদয়ের অলিন্দ-নিলয়ের কপাটগুলোতে গালার সিল দিয়ে এমন ভাবে আমরা বন্ধ করেছি যে, ও পারের প্রবল প্লাবন এখন এ পারে ঢেউটুকুও তুলতে পারে না। বাঁধ আর ব্যারাজের ছাঁকনি দিয়ে ভাবনার জায়গাগুলোকে আমরা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছি। মানচিত্রে শুধু নয়, চিন্তার অঙ্গনে খড়িমাটির গণ্ডি দিয়ে এমন ভাবে বেড়া দিয়েছি যে, ও পারের রূপকথার নায়ককে নিয়ে গর্ব করতেই ভুলে গিয়েছি।
ভারতের মতো তথাকথিত মহাশক্তিও তার প্রতিবেশীকে ক্ষুদ্র, তুচ্ছ বামনের চেয়ে বেশি মর্যাদা দেয়নি। অথচ আজ সেই মহাশক্তিধর দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের বাংলাদেশের স্বাস্থের সুচক উন্নত। মৃত্তিকায় শেষ শয্যাগ্রহণের আগে পর্যন্ত লোকস্বাস্থ্যের জন্য জাফরুল্লাহর লড়াই ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না। তাঁর চেয়ে ‘বড় ডাক্তার’ আর কেউ হয় নাকি!
(লেখক চিকিৎসক, লিভার ফাউন্ডেশনের মুখ্য উপদেষ্টা। মতামত নিজস্ব।)