নারীশক্তি: দিল্লিতে আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ কোর্সের মেয়েদের সঙ্গে দুর্গাশক্তি নাগপাল
বছর আটেক আগে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন দুর্গাশক্তি নাগপাল। উত্তরপ্রদেশে সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে অবৈধ খনন রুখে বালি-মাফিয়াদের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিলেন এই আইএএস অফিসার। অখিলেশ যাদবের সরকার তাঁর বিরুদ্ধে নির্মীয়মাণ মসজিদের দেওয়াল ভাঙার অভিযোগ তুলে তাঁকে সাসপেন্ড করেছিল। আইএএস মহল সরব হয়েছিল দুর্গাশক্তির বিরুদ্ধে। দুর্গাশক্তির আইএএস স্বামীর উপরেও নেমে এসেছিল শাস্তির খাঁড়া। দুর্গাশক্তি এখন মোদী সরকারের কৃষি মন্ত্রকে কর্মরত। চাকরি-সংসার সামলে দুর্গাশক্তি বই লেখা শুরু করলেন। বিদায়ী বছরের শেষে, নতুন বছরের দোরগোড়ায় তাঁর মাতৃত্বের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা প্রথম বই প্রকাশ পেয়েছে। লেখকের সুন্দর দুনিয়ায় পা রেখে তিনি অভিভূত, বলছেন দুর্গাশক্তি।
ঝাঁসির বিদ্রোহ
এমনিতেই নাম বদলের শেষ নেই। মোগলসরাই স্টেশন হয়েছে দীনদয়াল উপাধ্যায়, ইলাহাবাদ হয়েছে প্রয়াগরাজ। ভোটের মুখে সম্প্রতি ঝাঁসির নাম পাল্টিয়ে বীরাঙ্গনা লক্ষ্মীবাই রেলস্টেশন হয়েছে স্থানীয় সাংসদ বিজেপির অনুরাগ শর্মার ইচ্ছাতে। নাম বদলে ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে জাতীয়তাবাদের পালে হাওয়া দেওয়ার সম্ভাবনা দেখে সায় দিতে দেরি করেনি মোদী-যোগী সরকার। নাম পাল্টেও যায় বছরের শেষ সপ্তাহে। কিন্তু যে ভোটারদের মুখ চেয়ে এত খাটাখাটনি, নাম বদলে তাঁরাই এখন ক্ষুব্ধ। ধর্না-বিক্ষোভের মুখে সাংসদ অনুরাগ। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ঝাঁসি আর লক্ষ্মীবাই অভিন্ন হলেও, শহর হিসাবে ঝাঁসির ভিন্ন পরিচয় রয়েছে। ওই নামকরণ সেই শহরের পরিচয়কে মোছার চেষ্টা! পালে জাতীয়তাবাদের হাওয়া টানতে গিয়ে উল্টে বিপাকে এখন অনুরাগ।
রাজনীতির পথে দেখা
আয়কর আইনের কিছু বিষয় নিয়ে এক সময় বিচারপতি রঞ্জন গগৈ নিজ রাজ্যের এক তরুণ আইনজীবীর সাহায্য নিয়েছিলেন। সেই তরুণ তখন কংগ্রেসের সক্রিয় নেতা। আইনজীবীর প্রশ্ন ছিল, তিনি রাজনীতিতে থাকবেন? না কি রাজনীতি ছেড়ে পুরোপুরি আইনের পেশায় আসবেন? গগৈ পরামর্শ দেন, রাজনীতিতেই থাকুন। সেই তরুণ আইনজীবী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। বর্তমানে অসমের মুখ্যমন্ত্রী। কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে। প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসরের পরে রঞ্জন গগৈ রাজ্যসভার সাংসদ। দু’জনে যেন ফের একই বিন্দুতে!
হিন্দিতে দড় চন্দ্রচূড়
হতে পারেন তিনি মরাঠি। তা বলে কি হিন্দি জানবেন না? সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে বিচারপতি ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়ের মুখে সাবলীল হিন্দি শুনে আইনজীবী ভি শ্রীধরন অবাক। প্রশংসা করতেই বিচারপতি চন্দ্রচূড় মনে করিয়ে দিলেন, তিনি তিন বছর ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরে পড়াশোনার সময়ও হিন্দি পড়তে হয়েছিল।
লড়াই চলছে বিজ্ঞাপনে
নরেন্দ্র মোদী ‘চায়ে পে চর্চা’ শুরু করার পরে প্রথম কাগজের চায়ের কাপে ভোটের প্রচার দেখেছিলেন দেশের মানুষ। চায়ের কাপে নরেন্দ্র মোদীর মুখের ছবি ছেপে গোটা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছিল বিজেপি। তার পরে প্রায় সব ভোটেই রাজ্যে রাজ্যে তার পুনরাবৃত্তি দেখা গিয়েছে। পঞ্জাবে কংগ্রেস ‘কফি উইথ ক্যাপ্টেন’ করেছে। পশ্চিমবঙ্গে রক্তদান শিবিরে উপহার দেওয়া হয়েছে ‘দিদিকে বলো’ কফি মগ। সময় বদলেছে। অতিমারির যুগে আড্ডা বন্ধ। মুখ ঢাকা মাস্কে। তাই মাস্কেই প্রচারের স্লোগান ছাপিয়ে প্রচার শুরু হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী তাঁর ‘লড়কি হুঁ লড় সকতি হুঁ’ বার্তা মাস্কে লিখে প্রচার করছেন। মুখ ঢেকে যাচ্ছে রাজনীতির বিজ্ঞাপনে।
প্রচার: মাস্কে লেখা প্রিয়ঙ্কার স্লোগান
অনুরাগের জমাটি রক্ষণ
এক সময় ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিসিসিআইয়ের শীর্ষপদ ছাড়তে হয়েছিল। অনুরাগ ঠাকুর এখন একই সঙ্গে মোদী সরকারের তথ্য-সম্প্রচার ও ক্রীড়া, যুবকল্যাণ মন্ত্রী। কিন্তু গত দু’সপ্তাহ তাঁকে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন সামলাতে হচ্ছে ক্রিকেট দুনিয়া, বিসিসিআইয়ের অন্দরমহল নিয়ে। সৌরভ বনাম কোহলি, বিরাট বনাম রোহিত— এ নিয়ে প্রশ্ন উড়ে আসছে অনুরাগের দিকে। প্রথম দিকে মৌনব্রত নিলেও অনুরাগ এখন জবাবে একটাই ‘ডিফেন্সিভ শট’ খেলছেন। তা হল: খেলাটাই আসল, তার ঊর্ধ্বে কেউ নয়।
প্রেমাংশু চৌধুরী, অনমিত্র সেনগুপ্ত