ব্যবসার লাভের অংশ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে
Coronavirus in India

কোভিড-১৯’এর ক্ষতচিহ্ন থাকবে, বললেন কৌশিক বসু

ঠিক কী ভাবে ভাগ করে নেওয়া যাবে বেসরকারি পুঁজি থেকে অর্জিত লাভ? এটা কি রীতিমতো বৈপ্লবিক পরিবর্তন নয়?

Advertisement

কৌশিক বসু

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২০ ০০:০৫
Share:

প্রশ্ন: কোভিড-১৯’এর তাণ্ডব শেষ হওয়ার পরেও অনেকেই নিজের হারানো চাকরি ফিরে পাবেন না বলে আপনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন— বাজার ঘুরে দাঁড়ালে উৎপাদন ব্যবস্থা আরও বেশি অটোমেশন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দিকে ঝুঁকবে। তার ফল কী দাঁড়াবে?

Advertisement

কৌশিক বসু: আমার ধারণা, কোভিড-১৯ অতিমারির ফল হিসেবে গোটা দুনিয়া আরও বেশি ডিজিটাল হবে, রোবোটিক্স-এর ওপর নির্ভরশীলতা আরও বাড়বে। এই সময়টায় আমরা প্রাত্যহিক কাজকর্মের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তিতে আর বেশি অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। অফিসের মিটিংয়ের জন্যও ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, ক্লাসে পড়ানোর জন্যও। অটোমেশন আর ডিজিটাল প্রযুক্তি আজ থেকে নয়, গত চল্লিশ বছর ধরেই ক্রমশ বাড়ছে। এই অতিমারির ফলে সেই পরিবর্তনের বেগ বাড়বে।

কিন্তু, এখানে আমি খুব স্পষ্ট করে একটা কথা বলতে চাই। বেশির ভাগ উন্নয়নশীল দেশের জন্য— ইমার্জিং ইকনমির জন্য— এই পরিবর্তন একটা আশীর্বাদ হতে পারে। এই অতিমারির পালা চুকলে আউটসোর্সিং-এর পরিমাণ বাড়বে বলেই আমার অনুমান। যে দেশে শ্রম তুলনায় সস্তা, সেখানে যদি ডিজিটাল কানেক্টিভিটি যথেষ্ট থাকে, তা হলে সেই দেশ উন্নতি করবে বলেই আমার মনে হয়। অর্থাৎ, ভারতের সামনে উন্নতি করার ভাল সুযোগ রয়েছে।

Advertisement

তবে, দুটো জায়গায় সাবধান হওয়া যে জরুরি, সেটাও মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, ডিজিটাইজ়েশন হলে তার সঙ্গে সঙ্গে অসাম্যও বাড়বে। কাজেই সামগ্রিক ভাবে, জিডিপি-র অঙ্কে, যদি ভারতের লাভ হয়ও, সেই বৃদ্ধি নিজে থেকে সুষম ভাবে বণ্টিত হবে না। তার জন্য আলাদা ভাবে যত্ন নিতে হবে— দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে সেই বৃদ্ধির ফল যাতে বণ্টিত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় কথাটা আরও বেশি প্রযোজ্য স্বল্পমেয়াদের ক্ষেত্রে। কোভিড-১৯’এর কারণে এখন দেশজোড়া লকডাউন চলছে। আমি মনে করি, সামাজিক ভাবে দায়িত্বশীল আচরণ কাকে বলে, দেশের মানুষকে সেটা শেখানো একটা ভাল সিদ্ধান্ত। কিন্তু, লকডাউন চললেও ব্যবসাকে তার স্বাভাবিক ছন্দে চলতে দেওয়া জরুরি— সব ধরনের ব্যবসা, কল সেন্টার সমেত। অতি অবশ্যই নিরাপত্তার বিধি কঠোর ভাবে মানতে হবে। বাস এবং ট্রেন চলাচল আরম্ভ করা জরুরি— নিয়মকানুন মেনেই। বিভিন্ন অসরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাকেও কাজ করতে দেওয়া উচিত।

বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই কিন্তু লকডাউনের মধ্যেও বাস-ট্রেন চলতে দিচ্ছে, ব্যবসা চালাতে দিচ্ছে। প্রতিটা দেশই বিভিন্ন রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই— বাস-ট্রেনে সফরের সময়েও সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখা হচ্ছে। আমাদের এখানে যদি দীর্ঘ দিন ধরে যাতায়াতের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকে, বেসরকারি ব্যবসাকে চলতে না দেওয়া হয়, তা হলে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের বাজারে আমাদের যে দখলটা আছে, এই শিল্পে আমাদের যে সুবিধাগুলো আছে, সেগুলো চিন বা অন্য কোনও দেশের কাছে হাতছাড়া হয়ে যাবে। আমাদের খালি করে দেওয়া জায়গা সেই দেশগুলো দখল করে নেবে।

অর্থাৎ, যে কথাটা মনে রাখা প্রয়োজন, তা হল— সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং জরুরি, কিন্তু এতটাও ভয় পেয়ে গেলে চলবে না যে আমাদের গোটা অর্থনীতিটাই যাতে অচল হয়ে যায়। তেমনটা হলে জীবন ও জীবিকার যে ক্ষতি হবে, তা কোভিড-১৯ অতিমারির ক্ষতির চেয়েও বেশি। লকডাউন কিন্তু এই ভাইরাসকে মারতে পারে না। ধরো, কোভিড যদি আরও দু’বছর চলে, তত দিন কি লকডাউন রাখা সম্ভব? কী ভাবে সাবধানতা অবলম্বন করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালানো যায়, আমাদের সেই পথ খুঁজতেই হবে।

প্র: অন্য একটি সাক্ষাৎকারে আপনি প্রফিট শেয়ারিং-এর কথা বলেছেন। ঠিক কী ভাবে ভাগ করে নেওয়া যাবে বেসরকারি পুঁজি থেকে অর্জিত লাভ? এটা কি রীতিমতো বৈপ্লবিক পরিবর্তন নয়?

উ: প্রশ্নটা তুলে ভাল করলে। আগের প্রশ্নের উত্তরে যে দুটো সতর্কতার কথা বলেছিলাম, এই প্রশ্নটা সরাসরি তার প্রথমটার সঙ্গে জড়িত। অটোমেশন বাড়লে তার সঙ্গে আর্থিক অসাম্যও বাড়বে— এই বাস্তবটার সঙ্গে লড়ার জন্য আমাদের নতুন, এবং বৈপ্লবিক, কিছু নীতির কথা ভাবতেই হবে। এই ক্রমবর্ধমান অসাম্যকে কমানোর জন্য আমরা কী করতে পারি? কেউ বলতে পারেন, এই পরিস্থিতিতে সমাধান হল উৎপাদনের যাবতীয় কলকবজার রাষ্ট্রায়ত্তীকরণ— সরকার সব কিছু অধিগ্রহণ করে নেবে। আমার মতে, এই পথে হাঁটা ভুল হবে। ইতিহাস থেকে আমরা এটুকু শিখেছি এই এই পথে হাঁটলে ঘোর বিপর্যয় উপস্থিত হতে পারে।

তার বদলে আমরা একটা অন্য নীতির কথা ভাবতে পারি। সমাজে বেসরকারি ক্ষেত্রে মোট যত লাভ হবে, তার একটা অংশকে রাষ্ট্র লগ্নিকারীদের থেকে নিয়ে নিতে পারে— এই টাকা থেকে কলকারখানার শ্রমিক, এবং অন্যান্য গরিব মানুষের আয়ের ব্যবস্থা হবে। ব্যাপারটা এই রকম দাঁড়াবে, যেন দেশের সাধারণ মানুষের হাতে এই বেসরকারি সংস্থাগুলোর খানিকটা করে শেয়ার আছে, তাঁরা লভ্যাংশ পাচ্ছেন। এটাকেই আমি বলি শেয়ার ইকনমি— অংশীদারির অর্থনীতি। হিলেল স্টাইনারের মতো বেশ কিছু খ্যাতনামা দার্শনিক এই রকম নীতির কথা বলেছেন।

এই কাজটা যে এখনই করা সম্ভব হবে— এই অতিমারি-আক্রান্ত দুঃসময়ে— তা নয়। কিন্তু, এ কথা মানতেই হবে যে এই গোত্রের ভাবনাকে এখন গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৮৪২ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম আয়কর চালু হয়। সেই সময় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বৈপ্লবিক ছিল। অথচ এখন আয়কর ব্যাপারটা নিতান্তই স্বাভাবিক। এই অতিমারির ধাক্কা মিটলে আমাদের এই অংশীদারির অর্থনীতির পথে হাঁটার কথা ভাবতেই হবে।

প্র: ক্রমবর্ধমান আর্থিক অসাম্যই কি আজকের এই সঙ্কট তৈরি করছে?

উ: কোভিড-১৯ অতিমারি থেকে তৈরি হওয়া আর্থিক মন্দার সঙ্গে দুনিয়ার ক্রমবর্ধমান আর্থিক অসাম্যের যে প্রত্যক্ষ যোগ আছে, এমনটা আমার মনে হয় না। গোটা দুনিয়া যে আর্থিক মন্দায় ঢুকছে, সেটা সব দেশকে সমান ভাবে ধাক্কা দিচ্ছে— গরিব আর ধনী দেশ, যেখানে সাম্য বেশি বা যেখানে অসাম্য বেশি, সবাই কম-বেশি সমান ভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।

আমি মনে করি, অসাম্য জিনিসটা মৌলিক ভাবেই খারাপ। অসাম্যের কারণেই খারাপ। গোটা দুনিয়ায় এখন যে পরিমাণ আর্থিক অসাম্য আছে, তা কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমার মনে হয়, আজ যদি আমরা কোনও ভাবে এই দারিদ্র কমাতে সক্ষম হই, তবে হয়তো একশো বছর পরে তখনকার মানুষরা ভাববে, এই বিপুল অসাম্য আমরা সহ্য করতাম কী করে? হাতে গোনা কিছু মানুষ প্রাসাদ-অট্টালিকায় থাকে, আর অসংখ্য মানুষ রাস্তায়— এই পরিস্থিতি কী ভাবে মেনে নিয়েছিল সমাজ? আজ ক্রীতদাসপ্রথা বা অস্পৃশ্যতার কথা ভাবলে আমরা যেমন লজ্জিত হই, একশো বছর পরের মানুষ হয়তো আজকের অসাম্যের কথা ভেবে সে ভাবে লজ্জিত হবে।

প্র: গোটা দুনিয়ার তুলনায় ভারত কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? এই অতিমারির ধাক্কা ভারতকে কী ভাবে বিপর্যস্ত করছে? এখন কী করা প্রয়োজন?

উ: এই অতিমারি আরম্ভ হওয়ার আগেই ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ধাক্কা খেয়েছিল। সেই কারণেই, ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জটা কঠিনতর। আমার পরামর্শ হল, এই সময়ে সরকারের উচিত রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে দেওয়া। এবং, অর্থনীতিকে সচল রাখার কাজে সেই বাড়তি টাকাটা ব্যবহার করা। ভারতে রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ নির্ধারিত হয় ২০০৩ সালের ফিসকাল রেসপন্সিবিলিটি অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্ট আইন (এফআরবিএম অ্যাক্ট, ২০০৩)-এর মাধ্যমে। ভারতের সৌভাগ্য, এই আইনটা অত্যন্ত সফিস্টিকেটেড— প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্কট দেখা দিলে যে রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি হতে দেওয়া যায়, সেই অবকাশ এই আইনেই রয়েছে। এই অতিমারি একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এর ফলে যদি শেয়ার মার্কেটে বড়সড় ধস নামে, এবং টাকার দামও পড়ে যায়, তবে অন্য কোনও দেশ বা কোনও বড় কর্পোরেশন ভারতের সম্পদ কিনে নিতে পারে। টাকার দাম কিন্তু সত্যিই কমছে, এবং এটা একটা বড় ঝুঁকি। এই বিপদ এড়ানোর জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। তবে মনে রাখতে হবে, রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ বাড়িয়ে যে বাড়তি টাকাটা হাতে আসবে, তা খরচ করতে হবে গরিব মানুষ, শ্রমিক ও কাজ হারানো মানুষদের জন্য। সরকারের, এবং প্রভাবশালীদের প্রবণতা থাকে নিজেদের পিছনে টাকা খরচ করার বা করিয়ে নেওয়ার। সেটা আটকাতেই হবে।

প্র: অনেকেই ভারতে ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম চালু করার কথা বলছেন। এই সময়ে মানুষের হাতে নগদ টাকা পৌঁছে দেওয়াই যথেষ্ট হবে কি?

উ: মানুষের হাতে আয় বাবদ একটা ন্যূনতম পরিমাণ টাকা তুলে দেওয়ার চিন্তাটা ভাল, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু, সেটা যথেষ্ট নয়। প্রথম কথা, সবার হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়ার মতো ব্যবস্থা বিশেষত ভারতের মতো দেশে নেই। এখনও অনেকেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। যাঁদের আছে, তাঁদের অনেকের অ্যাকাউন্টও ডরম্যান্ট— অর্থাৎ, অ্যাকাউন্ট শুধু খোলাই হয়েছে, তাতে তাঁরা লেনদেন করেন না। অনেকেই হয়তো ব্যাঙ্কে লেনদেন করতেও জানেন না। কাজেই, চাইলেই সবার হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। বিশেষত এই সময়ে। দ্বিতীয়ত, হাতে টাকা থাকলেই যে তাঁরা প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারবেন, সেই নিশ্চয়তা নেই। বাজারে যদি খাদ্যপণ্যের, বা অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জোগানে ঘাটতি দেখা যায়, তা হলে বড়লোকরা অনেক বেশি দামে সেই পণ্য কিনে নেবে। ফলে, গরিবের হাতে ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম বাবদ টাকা এলেও তাঁরা সেই বাজারে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারবেন না। ১৯৪৩ সালে বাংলার দুর্ভিক্ষের সময় ঠিক এই ঘটনাটাই ঘটেছিল— কালোবাজারে চাল ছিল, কিন্তু তার দাম ছিল বেশির ভাগ মানুষের নাগালের বাইরে।

কাজেই, সঙ্কটের সময়ে— যেমন, এই কোভিড-বিধ্বস্ত সময়ে— মানুষের কাছে সরাসরি অত্যাবশ্যক খাদ্যপণ্য এবং চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া দরকার। স্থানীয় প্রশাসন এবং পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে এই কাজটা করে ফেলা যায়।

প্র: কোভিড-১৯ বদলে দেবে অনেক কিছুই। সেই বদলগুলোকে আপনি কী ভাবে দেখছেন? গত শতকের মহামন্দার সঙ্গে কি আজকের পরিস্থিতির তুলনা করা চলে?

উ: এই অতিমারির ফলে অনেক কিছুই পাল্টাবে। আমাদের চিন্তা করার ধরন পাল্টাবে, মেলামেশার ধরন পাল্টাবে। আবার, অর্থনীতি পরিচালনার রীতিনীতিও পাল্টাবে। বর্তমান সঙ্কট বিষয়ে অনেক অর্থনীতিবিদ যে কথা বলছেন, আমার মতও মোটামুটি সে রকমই। এই সঙ্কট থেকে যে আর্থিক অতিমন্দা তৈরি হতে চলেছে, আশঙ্কা হচ্ছে, গত একশো বা দুশো বছরে তত বড় আর্থিক মন্দা এই দুনিয়া দেখেনি। সেই মন্দা এমনই ব্যাপক ও গভীর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, এই বছরের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়াবে ৩২ শতাংশ। গত শতকের ত্রিশের দশকের গ্রেট ডিপ্রেশন বা মহামন্দার সবচেয়ে খারাপ অবস্থাতেও বেকারত্বের হার ২৪ শতাংশে পৌঁছেছিল। এখানে আর একটা কথা খেয়াল করার আছে— গ্রেট ডিপ্রেশন আরম্ভ হয়েছিল ১৯২৯ সালে, আর তার পর বেকারত্বের সর্বোচ্চ হারে পৌঁছোতে সময় লেগেছিল আরও চার বছর। এই দফায় সঙ্কটের সূচনা হয়েছে এ বছর জানুয়ারি মাসে, আর তার চার মাসের মধ্যেই বেকারত্বের হার সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। কিন্তু, এর একটা ভাল দিকও আছে। আমার মনে হয়, এ বারের মন্দা গভীরতর হলেও মেয়াদের দিক থেকে কম ব্যাপক হবে। দু’এক বছরের মধ্যেই আমরা এই মন্দা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।

কিন্তু, এই অতিমারি দীর্ঘমেয়াদে অন্যান্য ছাপ রেখে যাবে। যে দেশ সময়মতো— পরিকল্পনামাফিক এবং হিসেব কষে— লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না, এবং তার ফলে সার্বিক ভাবে অর্থনীতিতে এবং বিশেষ ভাবে বেসরকারি ক্ষেত্রে একটা শূন্যতা তৈরি হবে, সে দেশগুলো ঝামেলায় পড়বে। দীর্ঘমেয়াদে তাদের আর্থিক স্বাস্থ্যভঙ্গ হবে। রফতানির আন্তর্জাতিক বাজারে, এবং আউটসোর্সিং বা কাজচালানের বাজারের দৌড়ে তারা বিপজ্জনক ভাবে পিছিয়ে পড়বে।

এর পাশাপাশি এই অতিমারি বেশ কিছু সামাজিক আর মানসিক দাগ রেখে যাবে বলেই আমার আশঙ্কা। একটা ব্যক্তিগত কথা বলি। আমার খুড়তুতো ভাই এক জন খ্যাতনামা সাইকায়াট্রিস্ট। তিনি কলকাতা আর পন্ডিচেরিতে প্র্যাকটিস করেন। যখনই তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছে, শুনছি, কত মানুষ কী গভীর মানসিক চাপে ভুগছেন এই সময়ে। গ্রেট ডিপ্রেশনের পর হওয়ার বহু সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গিয়েছিল, তখন মানুষ একে অপরকে কম বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছিলেন। দেখো, এটা আমার বিষয় নয়— আমি এই বিষয়ে আগ বাড়িয়ে কোনও মন্তব্যও করতে চাই না— কিন্তু আমি নিশ্চিত যে এই অতিমারি আমাদের সমাজের গায়ে এমন বেশ কিছু ক্ষতচিহ্ন রেখে যাবে, যার শুশ্রূষা হতে সময় লাগবে বহু, বহু দিন।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের ভূতপূর্ব মুখ্য অর্থনীতিবিদ

সাক্ষাৎকার: অমিতাভ গুপ্ত

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement