Chhapaak

ক্ষত

অ্যাসিড আক্রান্ত একটি তরুণী কী ভাবে মনের জোরে ফিরিয়া আসিল স্বাভাবিক জীবনে, সেই কাহিনি লইয়া নির্মিত একটি ছবি মুক্তি পাইয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share:

লক্ষ্মীকে কোলে বসিয়ে দীপিকা।

অ্যাসিড আক্রান্ত একটি তরুণী কী ভাবে মনের জোরে ফিরিয়া আসিল স্বাভাবিক জীবনে, সেই কাহিনি লইয়া নির্মিত একটি ছবি মুক্তি পাইয়াছে। ইহা বিনোদন-উপযোগী বিষয় নহে, কঠোর সামাজিক সত্য, তৎসত্ত্বেও ‘ছপক’ ছবিটি সমাদর পাইতেছে, ইহা আশার কথা। এই আশাটুকু রুপালি রেখার মতো ঘিরিয়া রহিয়াছে নিরাশার এক বৃহৎ কৃষ্ণ মেঘকে। ২০১৮ সালে দেশে অ্যাসিড আক্রমণ হইয়াছে দুই শতের অধিক লোকের উপর। ওই বৎসর ওই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়াছেন মাত্র আঠাশ জন। এবং আবারও সকল রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ শীর্ষে। গত পাঁচ বৎসর ধরিয়া এই নকশা অপরিবর্তিত রহিয়াছে। সম্ভবত সর্বাধিক অ্যাসিড আক্রমণ হয় পশ্চিমবঙ্গে, দ্বিতীয় উত্তরপ্রদেশ। এই দুইটি রাজ্যের সহিত দিল্লিকে মিলাইলে দেশের অর্ধেক অ্যাসিড-আক্রান্তের হিসাব মিলিয়া যায়। এই বৎসর পশ্চিমবঙ্গে ৫০ জন অ্যাসিড হানায় আহত হইয়াছেন, গত বৎসরের তুলনায় সামান্য কম। কেন সর্বাধিক আক্রমণ ঘটিতেছে এ রাজ্যে, তাহাও অজ্ঞাত নহে। সোনার গহনা তৈরি করিতে নাইট্রিক অ্যাসিড প্রয়োজন। এ রাজ্যে অলঙ্কার কারিগরের সংখ্যা কম নহে, তাই অ্যাসিড সুলভ। সুপ্রিম কোর্টের ২০১৩ সালের নির্দেশ অনুসারে, প্রতিটি বিক্রেতাকে লাইসেন্স-প্রাপ্ত হইতে হইবে, এবং অবৈধ বিক্রয় ধরিতে নিয়মিত নজর রাখিতে হইবে পুলিশকে। বলা বাহুল্য, সে কাজটি কোনও রাজ্যেই হয় না। গত বৎসর সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলায় আবেদনকারীরা জানাইয়াছেন, বিক্রেতারা অ্যাসিড ক্রেতার পরিচয় পরীক্ষা করিতেছেন না, পুলিশকে অবৈধ বিক্রেতার খবর জানাইলেও তাহারা তল্লাশি করিতেছে না, লাইসেন্স বাতিল করিতেছে না। আইন নিষ্ফল।

Advertisement

দ্বিতীয় কারণটি আরও গভীর— নারীবিদ্বেষ। অ্যাসিড আক্রান্তদের অধিকাংশ মহিলা। প্রেম প্রত্যাখ্যান করিলে, পণ দিতে নারাজ হইলে অ্যাসিডদগ্ধ হইতে হয়। ২০১৮ সালে নারীর বিরুদ্ধে অপরাধে উত্তরপ্রদেশ প্রথম, দ্বিতীয় মহারাষ্ট্র ও তৃতীয় পশ্চিমবঙ্গ। নারী পাচার, এবং নিরুদ্দিষ্ট শিশু, এই দুইটি সমস্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ বরাবরই সকল রাজ্যকে ছাড়াইয়াছে। গার্হস্থ্য হিংসার ক্ষেত্রেও তাহার অবস্থান ভাল নহে। নারীর বিপন্নতার এই আবহে অ্যাসিড আক্রমণও যে অধিক হইবে, তাহাতে আশ্চর্য নাই। অপরাধীর সাহস বাড়াইয়া দেয় পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় সর্বত্রই দেখা গিয়াছে যে, কোনও কিশোরী বা তরুণীর উপর অ্যাসিড আক্রমণের পরে আক্রান্তকেই পালাইয়া বেড়াইতে হয়, আক্রমণকারী তাহাকে এবং তাহার পরিবারকে মামলা প্রত্যাহার করিবার জন্য হুমকি দিয়া চলে। গাফিলতি প্রশাসনেও। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও সংশোধিত আইন অনুসারে অ্যাসিড হামলার পর অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে আক্রান্তকে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেরি করেন আধিকারিকেরা। ব্যয়বহুল চিকিৎসা শুরু করিয়া বিপন্ন হইয়া পড়েন অ্যাসিড আক্রান্তেরা।

‘ছপক’-এর নায়িকা মালতী এই মেয়েদের সুস্থ জীবনের স্বপ্নকে ধরিয়াছেন, কিন্তু বহু অ্যাসিড-আক্রান্তের প্রকৃত জীবনে এমন অনাবিল হাসি দুর্লভ। অথচ অ্যাসিড আক্রমণের মোকাবিলা কী প্রকারে করা উচিত, পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ তাহা হাতে-কলমে দেখাইয়াছে। অবৈধ অ্যাসিড কারবার রুখিতে কঠোর আইন এবং পুলিশের দ্বারা তাহার যথাযথ প্রয়োগ করিয়াছে বাংলাদেশ। অবৈধ অ্যাসিড আক্রমণের বিরুদ্ধে জনমত গঠন, আক্রান্তের আর্থ-সামাজিক পুনর্বাসন এবং আইনি সহায়তা, এমন নানা উপায় গ্রহণ করিয়া বাংলাদেশ বিশ্বের নিকট দৃষ্টান্ত হইয়াছে। ২০০২ সালে অ্যাসিড আক্রান্তের সংখ্যা দুই শত ছাড়াইয়াছিল, এক দশকের মধ্যে তাহা অর্ধেকেরও কম হইয়াছে, এবং ক্রমশ কমিতেছে। পশ্চিমবঙ্গ কি বাংলাদেশের কাছে কিছুই শিখিবে না?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement