Midday Meal Scheme

কৃপণ নীতি

পরিবার শিশুকে যে খাদ্য দিয়া থাকে, তাহাতে প্রাপ্ত পুষ্টির ফাঁকটুকু ভরাইবে স্কুল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২০ ০০:০১
Share:

বহু শিশুর জন্য মিড-ডে মিলের খাদ্যই পুষ্টির, এমনকি ক্ষুধা নিবারণের প্রধান উপায়।

গরমের ছুটিতেও স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিলের অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত করিয়াছে কেন্দ্র। লকডাউন-বিধ্বস্ত সময়ে এই সিদ্ধান্ত স্বাগত। কিন্তু, মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়িল অতি সামান্য। প্রয়োজনের তুলনায় যৎকিঞ্চিৎ। সরকারি প্রকল্পের ভাষায় স্কুলের মধ্যাহ্নভোজন সাপ্লিমেন্টারি বা পরিপূরক আহার। অর্থাৎ, পরিবার শিশুকে যে খাদ্য দিয়া থাকে, তাহাতে প্রাপ্ত পুষ্টির ফাঁকটুকু ভরাইবে স্কুল। কিন্তু কোভিড অতিমারির ধাক্কায় শিশুর পাতে যথেষ্ট খাদ্য জোগাইবার ক্ষমতা বহু পরিবার হারাইয়াছে। বহু শিশুর জন্য মিড-ডে মিলের খাদ্যই পুষ্টির, এমনকি ক্ষুধা নিবারণের প্রধান উপায়। অতএব, শিশু যাহাতে যথেষ্ট পরিমাণে আহার পায়, তাহা নিশ্চিত করাই প্রধান কর্তব্য। অতএব পূর্ব বরাদ্দের আট-দশ শতাংশ বৃদ্ধির পরিচিত ছকে চলিবার অভ্যাস ভুলিতে হইবে। বরাদ্দের পরিমাণ দ্বিগুণ-তিন গুণ বাড়াইবার সাহস ও সুবুদ্ধি দেখাইতে হইবে।

Advertisement

কোনও নীতিনির্ধারকের যদি আশঙ্কা হয় যে মিড-ডে মিলের খাতে বরাদ্দ এই পরিমাণ বাড়াইলে তাহা রাষ্ট্রের সাধ্যের অতিরিক্ত হইবে, তবে অপুষ্টি বাড়িলে দেশকে কী মূল্য চুকাইতে হইবে, সেই হিসাব কষিয়া লওয়া বিধেয়। ভারতে এমনিতেই প্রতি দশ জনে চার জন শিশু অপুষ্ট। জাতীয় অর্থনীতিতে চমকপ্রদ বৃদ্ধির বৎসরগুলিতেও শিশু-অপুষ্টি প্রত্যাশিত হারে কমে নাই। আজ অর্থনীতির মন্দা গভীর হইতেছে— এবং তাহা গভীরতর হওয়ার আশঙ্কা। এই সঙ্কট মোকাবিলায় ক্ষুধা ও অন্যান্য বিপন্নতা হইতে নাগরিকের সুরক্ষার জন্য সরকারি প্রকল্পের সহায়তা বাড়াইতে হইবে। সেই সঙ্গে, অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করিতে প্রয়োজন চাহিদার বৃদ্ধি। সেই উদ্দেশ্যে বিবিধ উপায়ে সরকারি টাকা নাগরিকের হাতে পৌঁছানো প্রয়োজন। মিড-ডে মিল প্রকল্পের মাধ্যমে দুইটি কাজই করা সম্ভব। মাথাপিছু বরাদ্দ যথেষ্ট বাড়াইয়া শিশুর খাদ্যের অধিকার ও পুষ্টির প্রয়োজন মিটাইতে পারিত কেন্দ্র। তৎসহ, মিড-ডে মিল কর্মীদের ভাতা বাড়াইয়া দরিদ্র মহিলাদের হাতে অধিক টাকা তুলিয়া দিতে পারিত। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এক হাজার টাকা ভাতা বাড়াইবার প্রস্তাব দিয়াছিল। কেন্দ্র এক পয়সাও বাড়াইতে রাজি হয় নাই।

এক-দেড়শত শিশুর জন্য রান্না করিয়া দিনে পঞ্চাশ হইতে সত্তর টাকা ভাতা পান মিড-ডে মিল কর্মীরা। শ্রমিক সংগঠন, নারী সংগঠনগুলি দীর্ঘ দিন এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করিতেছে। আজ মিড-ডে মিল-সহ অন্যান্য সরকারি প্রকল্পে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীদের কর্মীর মর্যাদা দিয়া, ন্যূনতম মজুরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত করিলে সরকার একই সঙ্গে সামাজিক ন্যায় নিশ্চিত করিবার, ও আর্থিক অচলাবস্থা কাটাইবার উপায় খুঁজিয়া পাইত। লকডাউন উঠিলে কর্মসংস্থান হইবে কী করিয়া, এই প্রশ্ন আজ রাক্ষসের ন্যায় মুখব্যাদান করিয়া আছে। একশত দিনের কাজের প্রকল্পে যথেষ্ট কাজ সৃষ্টি তুলনায় কঠিন। অপর দিকে, বিবিধ সরকারি প্রকল্পে মহিলা কর্মীরা পূর্ণ সময় কাজ করিয়া যৎসামান্য পারিশ্রমিক পাইয়া থাকেন। বিবিধ জনহিতকর প্রকল্পে তৃণমূল স্তরে কর্মী অধিক নিয়োগ করিলে, এবং তাঁহাদের সরকারি হারে মজুরি দিলে দরিদ্রের হাতে টাকা পৌঁছাইবার উপায় মিলিত, মানব উন্নয়নের ধারাটিও ব্যহত হইত না। নূতন সঙ্কট নূতন সুযোগের পথ খুলিয়া দেয়। তাহা গ্রহণ করিবার প্রস্তুতি থাকা চাই।

Advertisement

আরও পড়ুন: ডেঙ্গি দমনে যদি এমনটা হত

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement