কাজী নজরুল ইসলাম: কবিতার জন্ম— পাঠকের অন্বেষা
নির্বাচন, বিশ্লেষণ, সম্পাদনা: সুমিতা চক্রবর্তী
৮৫০.০০
নজরুল সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ্: কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
সাহিত্য ও সঙ্গীত, নজরুলের মূল দুই বিচরণক্ষেত্র। সেখানে তাঁর স্বকীয়তা বিবিধতায়, বহুত্বে। এই বহুত্ববাদী চরিত্রই সম্ভবত নজরুলের সৃষ্টির মূল কথা, তা শুধু আলগোছে একটা বিষয় নয়— তার শিকড় সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাসের গভীরে। পাঠকসমাজের কোনও অংশে নজরুল-সাহিত্যের দুর্বোধ্যতা নিয়ে যে অভিযোগ শোনা যায়, তার উৎসও এখানেই; নানা কৃষ্টির সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা কবিতা সব পাঠকের কাছে পৌঁছনো সহজ নয়। কবিতায় ব্যবহৃত শব্দগুলি যে সমাজ-জীবন থেকে উঠে আসছে, সে সম্পর্কে অবহিত না থাকলে কবির অভিপ্রায় অনুধাবনে বাধা আসবেই। বিঘ্ন তৈরি হবে, যদি তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বোঝা না যায়। আলোচ্য বইটি তেমনই সহায়ক পাঠ।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব নজরুল চেয়ার অধ্যাপক সুমিতা চক্রবর্তী নজরুলের কিছু বিখ্যাত কবিতার পাঠ-বিশ্লেষণের কাজ শুরু করেছিলেন কিছু দিন আগেই। এক-একটি কবিতাকে নিয়ে বিশ্লেষণী ভাবনাচিন্তা, তাঁর নিজস্ব অনুভূতি প্রকাশ, সঙ্গে প্রতিটি শব্দকে চিনিয়ে দেওয়া। এক-একটি শব্দ উঠে আসে কবির মননের গভীর থেকে, উন্মোচন করে রচনার প্রেক্ষাপট। কবিতা সংক্রান্ত তথ্য, রচনার প্রস্তুতি-পর্ব, প্রকাশ, সঙ্কলন, পাঠান্তর, প্রকরণ, সমকালীন প্রতিক্রিয়া প্রভৃতি খুঁটিনাটি বিস্তারে আলোচনা করেছেন তিনি। বিস্তৃত গবেষণাটি নিয়ে অনুপুঙ্খ পর্যালোচনা করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। নজরুল বিষয়ে সাধারণ পাঠকের অজানা, না-ভাবা অজস্র কথা উঠে এসেছে এই বইয়ে, পর্যালোচনায়ও। বাংলার দুই পারের দুই বিশিষ্ট গবেষক যখন এক মনীষার কৃতি আলোচনায় মিলে যান, তখন আবারও মনে পড়ে যায় অন্নদাশঙ্কর রায়ের পঙ্ক্তিটি— “আর সব কিছু ভাগ হয়ে গেছে,/ ভাগ হয়নিকো নজরুল।”
অপ্রকাশিত নজরুল
সংগ্রহ ও সম্পা: ব্রহ্মমোহন ঠাকুর
২০০.০০
‘ধূমকেতু’র নজরুল
আবদুল আযীয আল আমান
৩০০.০০
হরফ
১৯৫০ সালের পর থেকে নজরুলের গানের প্রচার প্রায় বন্ধ হতে থাকে। উনিশশো ষাটের দশক নাগাদ নজরুলের অধিকাংশ গান লুপ্ত হয়ে যায়। সেই লুপ্ত গান ও সুর পুনরুদ্ধারের একটা উদ্যোগ শুরু হয় সেই দশকেই। অপ্রকাশিত নজরুল গ্রন্থের সংগ্রাহক ও সম্পাদক ব্রহ্মমোহন ঠাকুর এ প্রসঙ্গে বইয়ের ভূমিকায় জানিয়েছেন, “এ ব্যাপারে ‘হরফ প্রকাশনী’র উদ্যোগ সর্বাপেক্ষা উল্লেখ যোগ্য।” হরফ-এর সর্বাধ্যক্ষ আবদুল আযীয আল আমান নিজে ছিলেন অগ্রগণ্য নজরুল-গবেষক। তিনি ধারাবাহিক ভাবে নজরুলের গানের সঙ্কলন গ্রন্থ এবং স্বরলিপি গ্রন্থ প্রকাশ করতে থাকেন। এ বঙ্গে আজও নজরুলের রচনা, গান ও স্বরলিপি প্রকাশনার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান অবশ্যই ‘হরফ’। এ বইয়ে গ্রথিত গান, কমিক, নাটিকা— বেশির ভাগই রেকর্ড থেকে উদ্ধার করা। সেই কাজও খুব সহজ ছিল না। সে কালের রেকর্ড বুলেটিন বা রেকর্ড লেবেলে অনেক সময় গীতিকারের নাম উল্লেখ করা থাকত না। একটা অসাধ্য সাধন করেছেন ব্রহ্মমোহন ঠাকুর।
বিদ্রোহী কবির আর এক কীর্তি তাঁর সম্পাদিত ধূমকেতু পত্রিকা। ‘ধুমকেতু’র নজরুল বইটি আসলে একটি বড় প্রবন্ধ। লেখকের কৈফিয়ত: “প্রথমে আমার সংগৃহীত তথ্যগুলিকে পর পর সাজিয়ে দেব ভেবেছিলাম— কিন্তু পরস্পর সম্পর্কশূন্য অথবা ক্ষীণ সূত্রে সংযুক্ত তথ্যগুলিতে পাঠক-মনে কোনো স্পষ্ট ধারণার সৃষ্টি হয় না দেখে একটি পৃথক প্রবন্ধাকারে এ-গুলিকে সন্নিবেশিত করে দিলাম।” এ বইয়ে নজরুলের সাংবাদিক জীবনের একটা ইতিহাস পাওয়া যায়। তা ছাড়া আছে সাংবাদিকতা সূত্রে রচিত তাঁর বহু লেখা ও সংবাদ। অর্ধ সাপ্তাহিক ওই পত্রিকার বয়স ছিল মাত্র তিন মাস চার দিন। ধূমকেতু-র একটিমাত্র ফাইল ছিল বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এ। সেটি আর নেই। ওই ফাইল থেকে রচনা এবং তথ্যাদি লিখে নেওয়ার বেশ কিছু পরে কোনও তারিখ নিয়ে সন্দেহ দেখা দেওয়ায় ধূমকেতু দেখার জন্য লেখক আবার সাহিত্য পরিষৎ-এ যান। সেখানে জানতে পারেন যে, ফাইলটি পাওয়া যাচ্ছে না। পত্রিকা প্রকাশ ইতিহাসের অনেকটাই জানা যায় মুজফ্ফর আহমদের স্মৃতিচারণা থাকে। ধূমকেতু-তে প্রকাশিত নজরুলের রচনাগুলো থেকে সতেরোটি বেছে নিয়ে এ বইয়ে ছাপা হয়েছে। পত্রিকায় সব সময় গুরুত্ব পেয়েছে— ‘…হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোনখানে তা দেখিয়ে এর গলদ দূর করা।’ এ বই থেকে আমাদের চিরচেনা পরিসরের বাইরে অন্য এক নজরুলকে পাওয়া যায়।