শতবর্ষে সত্যজিৎ
সম্পা: বাংলা বিভাগের অধ্যাপকমণ্ডলী
২৫০.০০
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়
‘সত্যজিৎ একাই একশো’ শিরোনামে একটি আলোচনাসভা করেছিল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ, সেটাই এই বইয়ের সূচনাপর্ব বলা যায়। প্রায় তিনশো ছুঁই-ছুঁই পৃষ্ঠার বইয়ে ৪৮টি গদ্য ও নিবন্ধে রয়েছে শতবর্ষী সত্যজিতের ব্যক্তিত্ব, প্রতিভা ও জীবনকৃতির বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন। মাধবী মুখোপাধ্যায়ের আক্ষেপ: “বারবার মনে হচ্ছে শতবর্ষে এসে সত্যজিৎ ‘ড্যাম ফ্লপ’... তাঁর সেই চিন্তাধারা, আদর্শ আমাদের কেউ অনুসরণ করল না।” তিরটা আজকের চলচ্চিত্র জগতের দিকে। তবে তাঁর সাহিত্যপ্রতিভা ও শিল্পীসত্তার বহুমুখী দিক ও আঙ্গিক নিয়ে ‘অ্যাকাডেমিক’ চর্চা অব্যাহত। শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দেন পরিচয় পত্রিকার সাক্ষাৎকারে সত্যজিতের বলা অভিনেতাদের ছ’টি শ্রেণি: ‘কমপিটেন্ট পেশাদার, অতটা কমপিটেন্ট নন এমন পেশাদার, গুণী নবাগত, নবাগত যারা অতটা গুণী নয়, গুণী শিশু, ততটা গুণী নয় এমন শিশু’। পুনর্মুদ্রিত হয়েছে সন্দীপ রায়ের ‘আমার শিক্ষক’, বরুণ চন্দের ‘কী করে সত্যজিতের নায়ক হলাম’। ‘নিবিড় কুশলতায়, স্বচ্ছন্দে কিশোর সাহিত্যের আকাশ’ ছোঁয়া সত্যজিতের লেখালিখির জগতে প্রবেশের প্রেক্ষাপট ধরিয়ে দিয়েছেন নবকুমার বসু; প্রসাদরঞ্জন রায় লিখেছেন কাছ থেকে দেখা মানুষটিকে নিয়ে: “সম্পর্কে আমার দাদা কিন্তু সব দিক থেকে অনেক অনেক বড়।” ছোট-বড় বাকি লেখাগুলি বাংলার সংস্কৃতি-পরিমণ্ডলে রায়বাড়ির প্রভাব ও অবদান, সত্যজিতের বিভিন্ন চলচ্চিত্র, ফেলুদা ও শঙ্কু-সাহিত্য, ছড়া, বিজ্ঞাপনী ও গ্রন্থচিত্র-অলঙ্করণ শৈলী-সহ বিবিধ বিষয় নিয়ে লেখা। গদ্যরস অনেক ক্ষেত্রেই গুণমুগ্ধতায় জারিত, তারই মধ্যে নতুন প্রজন্মের সত্যজিৎ-সন্ধানের কিছু চেষ্টা নজর কাড়ে।
সত্যজিৎ ১০০
উজ্জ্বল চক্রবর্তী
৪০০.০০
সিমিকা পাবলিশার্স
লেখক উজ্জ্বল চক্রবর্তী দীর্ঘ দিন প্রবেশাধিকার পেয়েছেন সত্যজিতের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে। কিন্তু, শুধু সেই কারণেই নয়, এই সঙ্কলনটি বিশিষ্ট তাঁর বিশ্লেষণের জন্যও। হাল্লার রাজপ্রাসাদের স্থাপত্যের সঙ্গে, রাজা-মন্ত্রী-বরফির চরিত্রের সমষ্টির সঙ্গে ‘আইভান দ্য টেরিব্ল’-এর প্রাসাদ ও চরিত্রের সাযুজ্য স্থাপন সেই বিশ্লেষণের একটা চমৎকার উদাহরণ। আবার, ফেলু মিত্তিরের চরিত্রটির সঙ্গে গোড়ায় ব্যক্তি সত্যজিতের যে মিল ছিল— এবং, যে কারণে ফেলুদার চরিত্রটি অ-বিশ্বাস্য এবং কিশোর পাঠকের কাছে দূরের মানুষ হয়ে ওঠার আশঙ্কা ছিল— সেখান থেকে সত্যজিৎ কী ভাবে সরিয়ে আনলেন ফেলুদাকে, সেই লেখাও চমৎকার।
অদ্বিতীয় সত্যজিৎ
মঞ্জিল সেন
সম্পাদনা ও টীকা: স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়
২৯৯.০০
বুক ফার্ম
মঞ্জিল সেনের বইটির প্রথম প্রকাশ ১৯৮৬ সালে— বাংলা ভাষায় সত্যজিৎ রায়ের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনী এটিই, সম্পাদকের দাবি। বইটির গুরুত্ব হল, সত্যজিৎ, এবং সন্দেশ-বৃত্তে তাঁর ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে লেখক এমন কিছু তথ্য পেয়েছেন, যা অন্য কোথাও পাওয়া দুষ্কর। যেমন, সত্যজিতের নিনিদি, নলিনী দাশের কাছে তিনি সত্যজিতের ছোটবেলার খেলা ‘হনোলুলু প্যা প্যা’র খোঁজ পেয়েছিলেন। অন্য দিকে, বইটির খামতি ছিল তথ্যগত বিভিন্ন অসঙ্গতি ও অসম্পূর্ণতা। সম্পাদক স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায় বইয়ের শেষে টীকা সংযোজন করে সেই খামতি দূর করার চেষ্টা করেছেন।
সন্দেশ-এর দিনগুলি
প্রণব মুখোপাধ্যায়
২৭৫.০০
পরম্পরা
লেখালিখি ও সম্পাদনার সূত্রে দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক সন্দেশ-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর স্মৃতিচারণে এসেছে নামী-অনামী হরেক সন্দেশী-র কথা। তাঁদের মধ্যে আছেন ‘বড় সম্পাদক’ সত্যজিৎ রায়ও। টাইপফেস বা ছাপার হরফ নিয়ে তাঁর খুঁতখুঁতানি, সন্দেশ-এর লেখা হারিয়ে ফেলার বিড়ম্বনা, হাজার কাজের মধ্যেও রাত জেগে ছবি এঁকে দেওয়া, বা নামী লেখকের লেখার উপরে কলম চালানোর ছাড়পত্র দেওয়া তরুণতর সম্পাদকদের— সব মিলিয়ে এই লেখায় ফুটে উঠেছেন এক অন্য সত্যজিৎ রায়।
সত্যজিৎ রে ইন হানড্রেড অ্যানেকডোটস
আরতি মুথান্না সিংহ, মমতা নৈনি
২৯৯.০০
পেঙ্গুয়িন
সত্যজিতের যখন ছোট ছিলাম, সন্দেশ-এ সদ্য-প্রকাশিত মা-কে লেখা তাঁর চিঠি বা বিজয়া রায়ের আমাদের কথা যে বাঙালি পাঠকের পড়া, এ বইয়ের বহু গল্পই তাঁর চেনা। এত দিন সত্যজিৎ রায়কে অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে চিনত বাঙালি, এখন অ-বাঙালি পাঠকের কাছেও খুলে যাবে গোপন তোরঙ্গের সম্পদ। শৈশবে সত্যজিৎ আইসক্রিম গরম করে দিতে বলেছিলেন, পথের পাঁচালী-র শুটিংয়ের জন্য বন্ধক দিতে হয়েছিল বিজয়া রায়ের গয়না, গুগাবাবা হিন্দিতে রিমেক-এর কাজ অনেক দূর এগোনোর পরও বন্ধ হয়ে যায়... টুকরো তথ্যে সত্যজিৎকে চেনার সুযোগ কম কথা নয়।
ফিল্মের পাঠশালা: প্রাক্-সিনেমার সত্যজিৎ
জয়দীপ মুখোপাধ্যায়
১৫০.০০
এভেনেল প্রেস
প্রতিভা শুধু বংশপ্রবাহে বিচ্ছুরিত হয় না, তাকে আবাদও করতে হয়। সত্যজিৎ রায় নামের অমিতপ্রতিভার ‘আবাদ করার কাহিনি’ লিখেছেন জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। গৌতম ঘোষের লেখা ভূমিকাটি এ বইয়ের জুতসই পূর্বকথা— তরুণ সত্যজিৎ ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতস্রষ্টাদের স্টাফ নোটেশন পড়ছেন, নন্দলাল বসু-বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়-রামকিঙ্কর বেজের কাছে শিখছেন শিল্পের গভীর নিবিড় অবলোকন, তৈরি হয়ে মাঠে নামছেন কিন্তু পরিণত বয়সেও জাগিয়ে রেখেছেন মেধাবী ছাত্রের মন। সত্যজিতের এই নান্দনিক পাঠশালাকেই কুড়িটি অধ্যায়ে ধরেছেন লেখক। প্রাক্-সিনেমার সত্যজিৎ পশ্চিমি সঙ্গীত থেকে চিত্রকলা সবই শেখেন, পারিবারিক সাংস্কৃতিক পরিসর থেকে বিজ্ঞাপনের কর্মজগৎ বা সিগনেট প্রেসের ভিস্যুয়ালাইজ়ার-এর কাজ তাঁকে এগিয়ে দেয় চলচ্চিত্রের বোধে, সত্যজিৎ-চর্চায় এ কমবেশি জানা। ‘নানা শিল্প, শিল্পী, মেন্টর, কনসেপ্ট, ধারাপ্রবাহের’ সান্নিধ্য, ‘সৃজনশীল সঙ্গ ও সঙ্গীদের ইন্টারঅ্যাকশন’ শিল্পী সত্যজিতের গড়ে-ওঠায় কী অমোঘ ও মোক্ষম অনুঘটকের কাজ করেছিল, সেই খোঁজ করেছেন লেখক। এই সন্ধানের মধ্যেই কখনও ঢুকে পড়ে ইঙ্গমার বার্গম্যান বা লুই বুনুয়েলের কৈশোর-তারুণ্যও। শান্তিনিকেতনে সাহেব শিক্ষক অ্যালেক্স অ্যারনসন বা বন্ধু সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়ের (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের পুত্র) সূত্রে পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সঙ্গীতের শ্রবণ-চর্চা, পৃথ্বীশ নিয়োগীর সঙ্গে অঙ্কনশিল্পে মত বিনিময়, লাইব্রেরিতে পুদভকিন, পল রোথা, রুডল্ফ আর্নহাইম-এর লেখা চলচ্চিত্র সংক্রান্ত বই পড়া, কলাভবনের শিল্পী-বন্ধুদের সঙ্গে অজন্তা-ইলোরা-এলিফ্যান্টা-কোনার্ক ভ্রমণ, ‘ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি’র যাত্রা শুরু, ১৯৪০-এর দশকের এই গুরুত্বপূর্ণ সংঘটনগুলি সত্যজিতের শিল্পীজীবনের জরুরি পাঠ— দেখিয়েছেন লেখক।