—প্রতীকী চিত্র।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে পঙ্কজ মল্লিকের আত্মজীবনী আমার যুগ আমার গান বইটি পড়তে দিয়েছিলেন অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়, উস্তাদ আলি আকবর খানের ছাত্র। পড়া শেষ করে মুগ্ধ সৌমিত্র বলেছিলেন, “অত বড় মাপের মানুষ কিন্তু কী আন্তরিকতার সঙ্গে সহজ সরল ভাবে লিখেছেন আত্মজীবনীটা। কোথাও এতটুকু অহঙ্কার প্রকাশ করেননি অথচ করলে ওঁকে সেটা সাজতো। আর কী তালিম ছিল ওঁর গানের যার ভিত্তিতে উনি গান গেয়ে গেছেন অতি উচ্চ মানের, আর কী অসাধারণ গলা ছিল ওঁর।” বলতে-বলতে চলে এসেছিলেন কাননদেবী প্রসঙ্গে... গলায় কী সুর ছিল আর তখনকার দিনে ওই অত প্রতিকূলতার মধ্যেও কী অসাধারণ সব গান গেয়ে গেছেন। অতি উচ্চ পর্যায়ের মানুষ ছিলেন, প্রথাগত শিক্ষা ছিল না কিন্তু নিজের চেষ্টায় লেখাপড়া শিখে নিজেকে সংস্কৃত করেছিলেন। “আমি ওঁর ইংরেজি-বক্তৃতাও শুনেছি যা ওঁর মাতৃভাষা বাংলার মতন সাবলীল।”
এ ভাবে কথোপকথন চলতেই থাকে দুই শিল্পীর মধ্যে। সেই কথাগুলি আদতে বঙ্গদেশে তাঁর অগ্রজ শিল্পীদের সম্পর্কে টুকরো টুকরো স্মৃতি, চিনিয়ে দেয় গুণী মানুষগুলির শিল্পসাধনার নানান দিক। কবিতা কথাসাহিত্য গান নৃত্য চিত্রকলা নাটক চলচ্চিত্র, প্রায় প্রতিটি শিল্পধারার মানুষজনকে নিয়েই কথা বলে যান সৌমিত্র, আড্ডার মেজাজে। আবার ওই মেজাজটুকুই পাঠকের কাছে পৌঁছে দেন অনিন্দ্য তাঁর সহজ সাবলীল গদ্যে। নিজেকে আড়াল করেই যদিও কথা বলে চলেন সৌমিত্র, তবুও কবি-নাটককার-নাট্যনির্দেশক-আবৃত্তিকার-প্রবন্ধকার-চিত্রকর এবং সর্বোপরি অভিনেতা হিসেবে তাঁর শিল্পভাবনার উত্তাপ টের পাবেন পাঠক।
সৌমিত্রদার ‘কথা’
অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়
২৫০.০০
সিমিকা পাবলিশার্স
রসাতলে যাও— শুনলে ধাক্কা লাগে। কিন্তু সুন্দরবন নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, জলবেষ্টিত এই ভূভাগের আনাচকানাচ থেকে তুলে আনেন অতীতের মণিমাণিক্য, তাঁরা জানেন, রসাতল, পাতাল ইত্যাদি বাঙালির সেই অতি পরিচিত ‘সুন্দরবন’-এরই অপর নাম। ব্যাঘ্রতটীমণ্ডল, ভাটির দেশ নামেও সে এক কালে পরিচিত ছিল। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সাহিত্যে সুন্দরবন অভিহিত এ নামেই। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের সঙ্গে বঙ্গভূমি তথা ভারতের নানা প্রান্তের যোগাযোগ প্রাচীন কাল থেকে, এই অঞ্চলের মাছ, কাঠ, মোম-মধুই ছিল তার এক কারণ। কিন্তু শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরবর্তী কালে পর্যটনই নয়, এই দ্বীপভূমির নিজস্ব ভূমিচরিত্র, এবং তাকে কেন্দ্র করে রাজনীতির বিকাশের ইতিহাসও কম আকর্ষণীয় নয়। স্বপনকুমার মণ্ডল সুন্দরবনের এই দিকটিতেই আলোকপাত করেছেন। গোসাবা, বাসন্তী, কাকদ্বীপ, সাগর, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ ও ক্যানিং ব্লকের বেশ কিছু দ্বীপ তাঁর মূল পরীক্ষা-নিরীক্ষার কেন্দ্র হয়ে উঠলেও এর মধ্য দিয়ে সমগ্র সুন্দরবনের গড়ে ওঠার ইতিহাস ধরা পড়েছে। যদিও লেখার মূল অভিমুখ আগাগোড়া ভূমি ও ভূমি বন্দোবস্তের দিকে, সেই সূত্রে ঔপনিবেশিক ও স্বাধীনতা-উত্তর কালের রাজনীতির ধারাও আলোচিত। তথ্যভিত্তিক, গবেষণামূলক বইটি সমগ্র সুন্দরবনকে চেনাবে।
আবাদি সুন্দরবন: ভূমি ও ভূমিভিত্তিক রাজনীতির ধারা (১৭৭০-১৯৭০)
স্বপনকুমার মণ্ডল
৬০০.০০
সোপান
১৯৬৬-র ইডেন। পটৌডীর সাক্ষাৎকার নিতে হোটেলে হাজির ক্রীড়া-সাংবাদিক। পটৌডী বিছানায় শুয়ে, পাশে চেয়ারে এক ভদ্রমহিলা। নবাবের প্রশ্ন, ফোটোগ্রাফার এনেছ? ভদ্রমহিলার আপত্তি, এলোপাথাড়ি কেউ যেন আমার ছবি না তোলে। তবে তারাপদ বন্দ্যোপাধ্যায় এলে আপত্তি নেই। খবর পেয়ে ক্যামেরা কাঁধে তারাপদ ছুটলেন, এবং বিস্মিত, ‘রিঙ্কুদি, তুমি!’ শর্মিলা ঠাকুরের অনুজ্ঞা, ছবিটা এখন কাউকে দেখাবে না। এর দু’বছর বাদে বিয়ে, ক্রিকেট ও বলিউডের প্রথম গাঁটছড়া। তখন টিভি আসেনি, প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক আলোকচিত্রীরা যে কী ভাবে সংবাদসূত্রের গোপনীয়তা ও সম্মান বজায় রাখতেন!
যা দেখেছি যা জেনেছি
চিরঞ্জীব
৫০০.০০
মান্দাস
চিরঞ্জীব নানা কাগজে কাজ করেছেন, সবই এই ধর্মে স্থিত। ’৮৪-তে আমেরিকায় অলিম্পিকে কার্ল লুইস চতুর্থ সোনা জিতেছেন, তাবড় পত্রিকা আর টিভিতে চূড়ান্ত ব্যস্ততা, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস সম্পাদকের ভ্রুক্ষেপ নেই। পর দিন সকালে কাগজে দেখা গেল দু’হাজার কিমি দূরে থাকা জেসি ওয়েন্সের নাতনির ইন্টারভিউ, “আজ দাদু থাকলে সবার আগে কার্লকে অভিনন্দন জানাতেন। ৫৮ বছর পর আর এক কৃষ্ণাঙ্গ দাদুর সমান হলেন, অলিম্পিকে চারটে সোনা জিতলেন।” লেখকের টীকা, “টিভি যেখানে শেষ করে, সেখানেই খবরের কাগজের শুরু হয়। আর এ জন্যই প্রিন্ট মিডিয়া কখনও শেষ হতে পারে না।” চিরঞ্জীবের টুকরো লেখাগুলির সঙ্কলন বুঝিয়ে দিল, তিনি স্বধর্মেই আছেন। সাংবাদিকরা হেমিংওয়ের ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি-র বৃদ্ধ মৎস্যশিকারির মতো, পরাস্ত হয়, কিন্তু ধ্বংস নয়।