ডেথ ইজ় হার্ড ওয়ার্ক
খালেদ খলিফা
৪৯৯.০০
ফেবার অ্যান্ড ফেবার
সিরিয়ার দামাস্কাস শহরের এক হাসপাতালে প্রয়াত হন আবদেল লতিফ। শেষ ইচ্ছে ছিল, আলেপ্পোর কাছে পারিবারিক জমিতে তাঁর কবর হবে। অগত্যা মরদেহ নিয়ে দু’ঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দেন পুত্র বোলবোল, সঙ্গে বোন আর ভাই, যদিও ভাইয়ের সঙ্গে বনিবনা নেই। দামাস্কাস থেকে আলেপ্পোর পৈতৃক ভিটেতে পৌঁছোনো সহজ কথা নয়— সিরিয়া এখন যুদ্ধক্ষেত্র। অতএব এই যাত্রায় বার বার বাধা আসে, অজস্র প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় আবদেল লতিফের ছেলেমেয়েদের। শেষাবধি পরিণতিও হয় ভয়ানক, যেমন হওয়ারই কথা ছিল, যুদ্ধদীর্ণ পুলিশ রাষ্ট্রে যে ভয়ই শেষ কথা। অকল্পনীয় আতঙ্কও ধীরে ধীরে সেখানে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। খলিফার কৃতিত্ব, স্বদেশের ভয়াবহতার এই ছবি আঁকতে আঁকতেও তিনি চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন দৈনন্দিন জীবন। তার মধ্যেই উঠে এসেছে এক টুকরো আশাও। পিতার দেহ নিয়ে সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার ঘটনা নিশ্চিত ভাবেই বিচিত্র। যুদ্ধক্ষেত্রের ভিতর দিয়ে এমন যাত্রার বর্ণনা হয়তো সাহিত্যের জমিতে ‘ব্ল্যাক’, ‘অ্যাবসার্ডিস্ট’ বলে চিহ্নিত হয়। তবু তার প্রতীকটাই এ ক্ষেত্রে বেশি জরুরি। কেমন প্রতীক? অ-সম্ভব সময়েও কিছু আটপৌরে বিশ্বাসের প্রতীক, তাকে সম্বল করে মানুষের বেঁচে থাকার ইচ্ছের প্রতীক। খলিফাও যেমন দামাস্কাস ছাড়েননি, বহু বার অনুরুদ্ধ হয়েও। কখনও মুছে ফেলেননি আলেপ্পোও, ১৯৬৪ সালে যে শহরের কাছে এক ছোট গ্রামে তাঁর জন্ম হয়েছিল।
মুসলমানকোষ
জাহিরুল হাসান
৩০০.০০
পূর্বা
১৩৫ পাতার মধ্যে বিশ্বকোষ পর্ব, শব্দকোষ পর্বের জন্য লেখক নিয়েছেন ৬৭ পাতা, তথ্য ও পরিসংখ্যানকোষের জন্য ৭১ পাতা, বাকি ২০ পাতায় রয়েছে নির্ঘণ্ট আর গ্রন্থপঞ্জি। ‘মুসলমান দেশপরিচয়’ অধ্যায়ে যে ৪৯টি দেশের পরিচয় তিনি দিয়েছেন, তাদের অনেকগুলিই মুসলমানপ্রধান দেশ, কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ। তা হলে কি জার্মানি, রাশিয়া বা ফ্রান্স খ্রিস্টান দেশ? না কি, ভারত হিন্দু দেশ? পরে আবার একটি পৃথক অধ্যায় রয়েছে ‘মুসলমান-প্রধান দেশ’। সেখানে ওই ৪৯টি দেশের মুসলমান জনসংখ্যা, শতাংশের হিসাব, প্রধান গোষ্ঠী (শিয়া বা সুন্নি), প্রধান মতবাদ (হানাফি, মালিকি ইত্যাদি) আর রাষ্ট্র ও ধর্ম সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হয়েছে। ‘বিশ্বের আধুনিক কালের কৃতী মুসলমান’দের তালিকায় প্রথম মুসলমান নোবেলজয়ী পাকিস্তানি পদার্থবিদ আবদুস সালামের নাম লেখক বাদ দিয়েছেন। কারণ তিনি আহমদিয়া হওয়ায় পাকিস্তান তাঁকে মুসলমান বলে স্বীকার করে না। ‘ধর্মান্তরিত খ্যাতনামা মুসলমান’-দের একটি দীর্ঘ তালিকা এই বইটিতে সংযোজিত হল কেন, সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই। মুসলমান সমাজ এক ধরনের ইসলামি আন্তর্জাতিকতা বোধের চর্চা করে— ইসলামি বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব। এই বইয়ে তার ধরনটা বোঝা যায়। আরবি, ফারসি, তুর্কি শব্দের একটা আস্ত অভিধানও রয়েছে বইটিতে। ৩২৭ পৃষ্ঠায় এত বিপুল আয়োজন বিস্মিত করে। দোষত্রুটি সত্ত্বেও বইটি প্রয়োজনীয়।
পুনর্যাপী ফিনিক্স
সন্মাত্রানন্দ
৩২৫.০০
ধানসিড়ি
প্রাচীন গ্রিক পুরাণ অনুসারে ফিনিক্স হল আগুনপাখি। এই পাখি জীবৎকাল শেষে, যমদূত আসার আগে নিজের বাসায় আগুন ধরিয়ে দেয়, সেই আগুনে নিজেই দগ্ধ হয়ে যায়। আবার সেই ভস্ম থেকে নবজীবনের জন্ম। এ পাখি আছে রূপকে, প্রতীকে। সন্মাত্রানন্দ এ পাখির মতোই ভস্মীভূত স্তূপ থেকে তুলে এনেছেন ভুলে যাওয়া কথা ও তার কথাকারকে, নাম দিয়েছেন পুনর্যাপী ফিনিক্স। ক্যালাইডোস্কোপ, কথাবস্তু, ধীরে বহে বেত্রবতী বই তিনটি একত্র করে সঙ্কলনটি প্রকাশিত, আছে ৩৬টি গল্প। গ্রামীণ শৈশবের স্মৃতিচারণার সুরে বাঁধা পড়েছে অনেকগুলি কাহিনি। প্রথম অংশ ‘ক্যালাইডোস্কোপ’ পড়তে গিয়ে খুব সহজেই সন্মাত্রানন্দের বয়ানে একাত্ম হয়ে যাওয়া যায়। ‘জলছবি’, ‘ইরাবতীর অ্যালবাম’, ‘সার্কাসের সোনালি’ কাহিনিতে ধরা পড়ে লেখকের শৈশবের মজার গল্প। বাকি অংশে ভূত থেকে পুরাণ, হরেক স্বাদের সন্ধান মিলবে। সন্ন্যাসী, শিক্ষক, গ্রন্থাগারিক— জীবনের নানা পর্যায়ে বহু অভিজ্ঞতা তাঁর। এ রচনাগুলি সেই অর্জনেরই ফসল। স্বল্প পরিসরে এমন পাঠসুখের অনুভবও কিন্তু বিরল। বইয়ের মলাটটি খয়েরি— এও কি ফেলে আসা সময়ের ছোঁয়া?