— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ওদের বাড়ির ছাদে জুরাসিক পার্ক আছে, রঘু ডাকাত বাড়িতে অঙ্ক শেখাতে আসে, মাথায় গামছা আটকে নিলেই ম্যাজিক মন্ত্রে এলোকেশীর মতো মস্ত চুল। আবার ডাক্তার এসে সোজা বাঘের বুকে স্টেথো বসিয়ে দেয়। অনেকেই বলেন, ডিজিটাল যুগে শিশুদের রূপকথার পৃথিবীটা দূরে সরে যাচ্ছে। তাদের জন্যই নিজের ছোটবেলা থেকে বুঁচকি নামের খুদে দস্যিকে এনেছেন লেখক। বুঁচকি থাকে আশি-নব্বই দশকের রংদার দুনিয়ায়। পাড়ার পুজোয়, বিকেলের খেলার দলে, দিদির সঙ্গে খুনসুটিতে, সর্বত্র সে। প্রাণোচ্ছল গল্পগুলি একটি কিশোর সাহিত্য পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে, তারই বাছাই কিছু দুই মলাটে। পাতায় পাতায় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে জগতের গন্ধ, নবনীতা দেব সেনের কিশোর-কাহিনির ঘটনার ঘনঘটা, এমনকি সুকুমার রায়ের আলতো পরশ। শেষ পর্বে আর একটি চমক, বুঁচকি-কুইজ়। হাসির হররার মধ্য দিয়ে শিশুমনের মাটি থেকে আধুনিক পৃথিবীর কিছু বিষবৃক্ষের বীজ রোপণের অবকাশ মুছে ফেলেছেন লেখিকা; ভূত কিংবা গোয়েন্দার ব্যবহারে নিয়ে আসা থ্রিল ছাড়াই, নস্টালজিয়ার হিরে-মানিক দিয়ে এই শৈশব থেকে সেই শৈশবে পৌঁছনোর সাঁকো তৈরি করেছেন। চিত্তাকর্ষক প্রচ্ছদ ও ভিতরের অলঙ্করণও বড় প্রাপ্তি, শিল্পী দেবাশীষ দেবের সৌজন্যে। শব্দবাছাই, শিশুদের বড় সাজার আপ্রাণ চেষ্টার মুহূর্তগুলি বড়দের ব্যস্ত রুটিনেও দু’দণ্ডের আহ্লাদ দেবে। চলমান ছবির মতো এই গল্পগুলির নাট্যরূপ, কার্টুন-অবতারও ভাবা যায়।
অ্যাই বুঁচকি
নবনীতা দত্ত
৩৫০.০০
আনন্দ
লেখক পরিচিত চক্ষুচিকিৎসক। নিবিড় রবীন্দ্রচর্চার পাশাপাশি, পেশাগত ক্ষেত্রেও তাঁর কলম সচল। এই বইতে তিনি আলোচনা করেছেন চশমা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা-সহ নানা খুঁটিনাটি বিষয়। দৃষ্টিবিজ্ঞানের বিষয়গুলি যাঁরা জটিল ও নীরস মনে করেন, বইটি তাঁদের অবাক করবে। সহজ কথায়, নানা বয়সের রোগীর অভিজ্ঞতার মিশেলে শুনিয়েছেন চশমার ইতিহাস, শৈশবে চোখের সমস্যা, চোখের ব্যায়াম করে পাওয়ার কমানোর উপায়, চশমা দীর্ঘ দিন ভাল রাখার কৌশল। বাইফোকাল, ট্রাইফোকাল লেন্স, অ্যাসটিগামিজ়ম প্রভৃতি পরিভাষার গভীরে গিয়ে বুঝিয়েছেন চোখ খারাপ হওয়ার নানা লক্ষণ। সমস্যা সমাধানের উপায়ের সঙ্গে সাজিয়ে দিয়েছেন সেই অসুবিধাটি আবিষ্কারের কাহিনি। চোখ ভাল রাখতে রোজকার যন্ত্র বা প্রযুক্তি কী ভাবে ব্যবহার বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কী ভাবে বই পড়লে দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হবে না— সেই দরকারি টিপসও আছে। বইয়ের আকর্ষণ বাড়িয়েছে লেন্স, রোদচশমার সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা। পরিচ্ছেদগুলির নামকরণ চমকপ্রদ, বৈজ্ঞানিক ডায়াগ্রামগুলি বিষয়টি বুঝতে সাহায্য করে। হাতের কাছে বইটি রাখলে চোখ নিয়ে নানা সমস্যা বা প্রশ্নের নিরসনের পথে এক ধাপ এগিয়ে থাকা যাবে।
চশমার হ্যান্ডবুক
পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার
২০০.০০
পরম্পরা
অনেকগুলি তলিয়েছে কালগর্ভে, অবশিষ্ট কয়েকটি ধ্বংসস্তূপ। কয়েকটি হয়ে দাঁড়িয়েছে শহরবাসীর সপ্তাহান্তের বিশ্রামস্থল, জাদুঘর, শুটিং স্পট। কিন্তু এদের খিলানে, নাটমন্দিরে, বাগানের লতাপাতায়, দেওয়ালের ইট-পাথরে বাংলার ইতিহাস। মোগল-ব্রিটিশ আমলে সমৃদ্ধির শিখরে ওঠা দুই বাংলার প্রায় ৫০টি অট্টালিকার সঙ্গে পরিচয় করায় বইটি। অধিকাংশই রাজবাড়ি, কয়েকটি জমিদারবাড়ি ও উচ্চপদস্থ অভিজাতদের সাতমহলা। মহিষাদল, পঁচেটগড় রাজবাড়িতে কী ভাবে লালিত হয়েছিল শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আবহ, নাড়াজোল ও তমলুকের রাজবাড়িতে স্বদেশি আন্দোলনের শলাকায় অগ্নিসংযোগ— সমাজ-সংস্কৃতি, শাসক বদলের কালপঞ্জি এবং বঙ্গীয় ও ইন্দো-বঙ্গ স্বতন্ত্র স্থাপত্য ঘরানা তৈরিতে রাজবংশ ও প্রাসাদগুলির অবদান সঙ্কলিত। লেখকের এষণা ছুঁয়ে গিয়েছে বাগবাজার, শোভাবাজারের গৌরবগুলিকেও। দেশভাগের বেড়া টপকে পৌঁছেছে বাংলাদেশের প্রাসাদ-অলিন্দে, উঠে এসেছে ঢাকার আহসান মঞ্জিল, তাজহাট রাজবাড়ির তথ্য। এ সব আখ্যান সংলগ্ন এলাকায়, উত্তরাধিকারীদের মুখে, নানা আকরগ্রন্থে বিস্তৃত, সহজলভ্য। দু’মলাটের মধ্যে তার কিছুটা একত্র করার প্রয়াসটি ভাল। কিন্তু, কিছু বাক্যের উৎস-উল্লেখের অনুপস্থিতি, ভুল বানান ও ছবির মানের ত্রুটি পীড়া দেয়। বাড়িগুলির কাহিনি পরিবেশনা কেন এই ক্রমপর্যায়েই সাজানো হল, তা-ও স্পষ্ট নয়।
রাজবাড়ির ইতিকথা
পায়েল চট্টোপাধ্যায়
৪০০.০০
ঘরে বাইরে পাবলিকেশন