তবায়েফনামা
সাবা দেওয়ান
৮৯৯.০০
কনটেক্স্ট ওয়েস্টল্যান্ড
তবায়েফ। বাইজি। মধ্যবিত্ত চার দেওয়ালে এখনও অস্বস্তিকর নীরবতা তৈরি করে কথাগুলো। কেন? সাবা দেওয়ান তার উত্তর খুঁজেছেন রাজ-নীতিতে। ঔপনিবেশিক শাসকের চোখ এই মহিলা কলাকারদের দেখেছিল দেহোপজীবী হিসেবে। জাতীয়তাবাদী রাজনীতিও, কী আশ্চর্য, সেই দেখাটাকেই বজায় রাখল। ফলে, যাবতীয় শিল্পসৌষ্ঠব নিয়েও প্রান্তিকতম অবস্থানে পড়ে থাকলেন এই তবায়েফরা। সেখানেই তাঁদের সাধনা, তাঁদের প্রেম, বঞ্চনা, সব।
বারাণসীর মুসলমান-মহল্লায় এক বাইজির অন্দর ও অন্তরমহলে প্রবেশাধিকার পেয়েছিলেন লেখিকা। তাঁর, এবং পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথনে উঠে এসেছে সেই আলো-আঁধারির দীর্ঘ দেড়শো বছরের ইতিহাস। কী ভাবে এক তবায়েফ তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহে; আবার কী ভাবে আজকের কোনও সুপ্রতিষ্ঠিত সঙ্গীতশিল্পী এই বাইজিদের থেকে তুলে নিয়ে যান তাঁদের বংশানুক্রমে অর্জিত বিদ্যা, কোনও স্বীকৃতি ছাড়াই— উঠে এসেছে অনেক আশ্চর্য প্রসঙ্গ। শহরটির গৈরিকায়ন কী ভাবে সঙ্কুচিত করছে এই প্রাচীন বাসিন্দাদের পরিসর, আছে সে কথাও।
লেখিকা বলেছেন, বেনারসকে শুধু তীর্থক্ষেত্র বা প্রাচীন শহর হিসেবে না দেখে এই তবায়েফদের ঠিকানা হিসেবে দেখার চোখও তৈরি করতে হবে। ঘটনা হল, বেনারসের কথা বললে এখনও অনেকেরই কানে ভাসে সিদ্ধেশ্বরী বাই বা রসুলান বাইয়ের অমোঘ কণ্ঠস্বর। কিন্তু, ক’জনই বা পেরেছিলেন বেনারসের গলি থেকে সর্বভারতীয় খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যেতে? যাঁরা পারেননি, অথচ সঙ্গীতের প্রতি অবিচলিত থেকে গিয়েছেন, এই বইয়ে তাঁদের গল্প আছে।
এ এক অন্য ভারত-দর্শন। ইতিহাসে উপেক্ষিতাদের ভারত।