এরিক হবস্বম: আ লাইফ ইন হিস্ট্রি
রিচার্ড জে ইভান্স
১২৯৯.০০
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস
কবি বলেছিলেন ‘আমি রব নিষ্ফলের, হতাশের দলে’। আর ইতিহাসবিদ বললেন, নিষ্ফল হতাশরাই সবচেয়ে ভাল ইতিহাস লিখতে পারেন। “লুজ়ার্স মেক দ্য বেস্ট হিস্টোরিয়ানস”, বলেছেন আমাদের সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইতিহাসবিদ এরিক হবস্বম। দুষ্টুমি করে কেউ জিজ্ঞাসা করতে পারে, তাঁর হতাশাটা ঠিক কী ছিল, কী করে তিনি ইতিহাসচর্চায় এমন সাফল্য পেলেন। উত্তরটা বোধ হয় তিনি নিজেই এক কথায় দিতেন— তিনি যে কমিউনিস্ট! ১৯৩৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়ে পঞ্চাশ বছর দলে সক্রিয় থেকেছেন যিনি, তিনি তো কেবল ব্যক্তি বা দলের হতাশা বহন করেননি, একটা সমগ্র বিশ্ববীক্ষার মূর্ছা ও পতন দেখেছেন। এবং সেই নিষ্ফলতার অন্ধকার থেকে আলো তৈরি করে ইতিহাসচর্চার দিকে তাকে চালিত করেছেন। তাঁর তিন খণ্ড ইতিহাস বই ১৭৮৯ সাল থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত সময়কালকে নতুন করে পড়তে শিখিয়েছে, তার তুলনা খুঁজে পাওয়া কঠিন। বস্তুত, হবস্বমের এক-একটি শব্দবন্ধ বিশ্বব্যাপী ইতিহাস-ভাবনায় এক-একটি নতুন বাঁক এনে দিয়েছে, সপ্তদশ শতকের ‘প্রিমিটিভ রেবেলস’, কিংবা ‘লং নাইনটিন্থ সেঞ্চুরি’, আর ‘শর্ট টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি’ এক ডাকে বুঝিয়ে দিয়েছে কী ভাবে গত কয়েক শতাব্দীর ইতিহাসকে দেখা সম্ভব।
জীবন আর তত্ত্ব, অভিজ্ঞতা আর বোধ যদি এত ওতপ্রোত, তবে জানতে ইচ্ছে করবেই পঁচানব্বই বছরের (১৯১৭-২০১২) সমৃদ্ধ জীবনটির ইতিবৃত্ত। রিচার্ড ইভান্স-এর আটশো পাতার বই এখন ভারতেও সহজলভ্য। অতি তথ্যসমৃদ্ধ বইটি জীবনী-রচনার ধারায় উল্লেখযোগ্য সংযোজন। কেউ কেউ বলেছেন, হবস্বমের পরিবার ও বাল্য-কৈশোরের এত খুঁটিনাটি না থাকলে বইয়ের কলেবরও কমত, পাঠকও কিছু কমতি বোধ করতেন না। এই সমালোচনার সঙ্গে একমত হওয়া মুশকিল। ইউরোপ যখন ইহুদি পরিবারগুলির জন্য প্রথম বার তার দরজা খুলে দিচ্ছে, সেই ১৮৮০-র দশকে ব্রিটেনের সেকুলার লিবারাল ইহুদি পরিবার হবস্বমদের জীবনযাত্রা কেমন ছিল, পারিবারিক শিক্ষা কেমন ছিল, পড়াশোনার পাশাপাশি এরিক আর কী জানছিলেন, কমিউনিস্ট পার্টিতে কত ঠক্কর খাচ্ছিলেন, এ সব না জানলে চার শতাব্দীর ইতিহাস লিখবেন যে ইতিহাসবিদ, তাঁকেই কি ঠিকমতো বোঝা যায়?