গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মধ্যবিত্ত থেকে ছোট শিল্প সংস্থা— সকলের জন্য অবশেষে স্বস্তির খবর। লকডাউনের জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মোরাটোরিয়ামের সুযোগ নেওয়া গ্রাহকদের সুদের উপর সুদ দিতে হবে না। ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে বাড়তি সুদের খরচ বহন করবে কেন্দ্রীয় সরকার। সুপ্রিম কোর্টকে এমনটাই জানিয়েছে কেন্দ্র। গ্রাহককে যেমন বাড়তি সুদ দিতে হবে না, তেমনই ব্যাঙ্ককেও তার জন্য ক্ষতির মুখ দেখতে হবে না। এই বাবদ খরচ বহন করবে কেন্দ্র। এই বিষয়ে শুক্রবার অর্থ মন্ত্রকের হলফনামা জমা দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।
কেন্দ্রের এই ঘোষণায় নিঃসন্দেহে দেশের বহু মানুষ সুবিধা পাবেন। কারণ, গৃহঋণ থেকে শিক্ষা, গাড়ি বা ফ্রিজ-টিভি-মোবাইল ইত্যাদি কনজিউমার সামগ্রী কেনার জন্য ছ’মাস ইএমআই না দেওয়ার সুযোগ যাঁরা নিয়েছেন তাঁরা সকলেই এই সুবিধা পাবেন। ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া মেটানোর ক্ষেত্রেও যাঁরা মোরাটোরিয়ামের সুযোগ নিয়েছেন তাঁরাও উপকৃত হবেন। এ ছাড়াও যে সব ছোট শিল্প সংস্থা (এমএসএমই) ব্যাঙ্ক থেকে ২ কোটি টাকা বা তার কম ঋণ নিয়েছে তাদেরও সুবিধা মিলবে। তবে এখন তাঁরা হাত কামড়াবেন, যাঁরা বাড়তি সুদ দিতে হবে বলে মোরাটোরিয়ামের সুযোগ নেননি। অনেক চাপের মধ্যেও লকডাউনের মধ্যে প্রতি মাসে নিয়ম মেনে ইএমআই দেওয়ার সময়ে তো কেউই ভাবতে পারেননি কেন্দ্র এত বড় সুযোগ করে দিতে পারে।
করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার জেরে দেশে প্রথমবার লকডাউন ঘোষণার পরে পরেই টার্ম লোনের উপরে মোরাটোরিয়াম ঘোষণা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বলা হয়, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক সংস্থা থেকে যাঁরা টার্ম লোন নিয়েছেন তাঁরা এই সময়ে ইএমআইয়ের টাকা চাইলে নাও নিতে পারেন। পরে সব ব্যাঙ্ক ও সংস্থাই তা ঘোষণা করে। প্রথমে তিন মাসের জন্য দেওয়া সেই সুবিধা পরে আরও তিন মাস বাড়ানো হয়। যার সময় শেষ হয়েছে গত অগস্ট মাসে। কিন্তু সেই মোরাটোরিয়াম ঘোষণার সময়ে বলা হয়েছিল, ইএমআই দিতে না হলেও এর জন্য পরে গ্রাহকদের বাড়তি সুদ দিতে হবে। শুধু তাই নয়, বাড়তি সুদ চক্রবৃদ্ধি হারে নির্ধারণ করা হবে বলেও গ্রাহকদের জানায় বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থা।
আরও পড়ুন: ‘অটল টানেল’ ধরে দ্রুত সেনা পৌঁছবে শীতের লাদাখে
কী এই সুদের উপর সুদ? ধরা যাক কোনও ব্যক্তিকে প্রতি মাসে ইএমআই বাবদ দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে আবার ধরা যাক আসলের অংশ ৮ হাজার টাকা এবং সুদের কিস্তি ১২ হাজার টাকা। যাঁরা মোরাটোরিয়ামের সুযোগ নিয়েছেন তাঁরা ৬ মাস ইএমআই না দেওয়ায় সুদ বাবদ বকেয়া হয়েছে ১২X৬=৭২ হাজার টাকা। ব্যাঙ্কগুলি জানিয়েছিল, এই মোট বকেয়া সুদের উপরে গ্রাহকদের চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ দিতে হবে। সেটাই সুদের উপর সুদ।
এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা হয়। সেই মামলায় বলা হয়, মহামারীর সময়ে যাঁরা টাকা জমা দিতে পারেননি তাঁদের যদি পরে বাড়তি টাকা দিতেই হয় তবে আদৌ কোনও সুবিধাই দেওয়া হবে না। অন্য দিকে, ব্যাঙ্কগুলির বক্তব্য ছিল, সুদের উপরে সুদ মকুব করা হলে বিপুল পরিমাণে আর্থিক ক্ষতি হবে। একই সঙ্গে বলা হয়, মোরাটোরিয়াম মানে সুদ মকুব নয়, টাকা মেটানোর সময় পিছিয়ে দেওয়া। এই বিতর্কের মধ্যে এবার কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত নিল তাতে ঋণ গ্রহীতা এবং ব্যাঙ্ক দুইয়েরই সুবিধা হয়ে গেল।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মোরাটোরিয়ামের নীতি ঘোষণার পর থেকেই তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। বলা হয়, করোনা মহামারির সময়ে মানুষকে সুবিধা দেওয়ার নামে আসলে বিপদে ফেলা হচ্ছে। কারণ, এখন ইএমআই না দিতে হলেও পরে অনেক বেশি পরিমাণে টাকা দিতে হবে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য জানানোর কথা ছিল গত ২৮ সেপ্টেম্বর। পরে সেই সময় আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে দেয় সর্বোচ্চ আদালত। সেই মতো শুক্রবার আর্থিক দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় কেন্দ্রীয় সরকার। তবে যে সব ব্যাক্তি বা সংস্থার ঋণ ২ কোটি টাকার বেশি তারা এই সুবিধা পাবেন না। তাদের চক্রবৃদ্ধি হারে ধার্য করা সুদই মেটাতে হবে।