রাজীব কুমার। ফাইল চিত্র।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, এমনই ইঙ্গিত মিলল নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমারের কথায়। বৃহস্পতিবার বণিকসভা মার্চেন্ট চেম্বার আয়োজিত ওয়েবিনারে তিনি বলেন, অতিমারি যে ভাবে ফের আছড়ে পড়েছে, তাতে এই অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার কতটা কী কমবে এখনই বলা কঠিন। পুরোটাই নির্ভর করছে এই দফার প্রকোপ কতটা গভীর হয়, তার উপরে।
ফিচ, মুডি’জ়ের মতো বিভিন্ন মূল্যায়ন এবং উপদেষ্টা সংস্থা অবশ্য ইতিমধ্যেই বলেছে, এ বছর ভারতের বৃদ্ধিতে ফেরা নিয়ে সংশয় না-থাকলেও সাড়ে তিন লক্ষ পেরনো সংক্রমণের ভয়াল রেকর্ড এবং বিভিন্ন রাজ্যে আংশিক লকডাউন তার হার কমাবে। কারণ সংক্রমণের ভয় এবং বিধিনিষেধ উৎপাদনে কোপ ফেলছে। তবে ক্ষত কতটা দগদগে হবে, তা নির্ভর করবে সরকার কত দ্রুত দেশবাসীকে প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারছে তার উপর। এ দিন রাজীবের দাবি, দিনে এখন ৩০ লক্ষ মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। যা ৫০ লক্ষে নিয়ে যাওয়া জরুরি। যদিও দেশ জুড়ে অক্সিজেন, হাসপাতালের শয্যার মতো ভ্যাকসিনের অনিশ্চিত জোগান নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েছে সরকার।
অতিমারি সামলানো থেকে শুরু করে অর্থনীতির উন্নয়ন নিশ্চিত করা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে বিরোধীরা ইতিমধ্যেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে কেন্দ্রকে। তবে রাজীবের দাবি, আর্থিক বৃদ্ধিকে কমপক্ষে ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়াই কেন্দ্রের লক্ষ্য। যে আর্থিক উন্নয়ন বেসরকারি ক্ষেত্রের হাত ধরেই বাস্তবায়িত করতে চায় তারা। তাই লগ্নির পথ মসৃণ করতে নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বহু নিয়ম-কানুন শিথিলের জন্য প্রস্তুত সরকার। তবে তার জন্য অবশ্য বেসরকারি উদ্যোগপতিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ জরুরি বলে মন্তব্য নীতি আয়োগ কর্তার, যাতে অসাধু ব্যক্তিরা অনৈতিক ভাবে সুযোগ না-নিতে পারে।
একই সঙ্গে রাজীবের বার্তা, ‘‘উন্নয়ন তখনই বাস্তবায়িত হবে, যখন দেশে বিশ্ব মানের বড় শিল্পের প্রসার ঘটবে এবং উন্নয়নের সুফলের ভাগ দেশের সব শ্রেণির মানুষ পাবেন। সে জন্য নজর দিতে হবে, দেশের সম্পদের সিংহভাগ যেন হাতে গোনা কয়েক জনের পকেটে না যায়।’’ শুধু ছোট-মাঝারি এবং পরিষেবা শিল্পের প্রসার ঘটিয়ে ওই মাপের উন্নয়ন সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। যা শুনে সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, ভারতের মতো দেশে বৈষম্য যে বিপজ্জনক ভাবে বাড়ছে তা স্পষ্ট খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে। এই অসাম্য দূর করার বার্তা কেন্দ্রীয় নীতিতে কই?
আর্থিক উন্নয়ন ঘটাতে রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধি, কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং বেসরকারি উদ্যোগপতি মহল এবং সরকারের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তোলাও জরুরি বলে মনে করেন রাজীব। শিল্পমহলের উদ্দেশে তাঁর আহ্বান, সরকারের কোনও ত্রুটি লক্ষ্য করলে অথবা কোনও পদক্ষেপের প্রয়োজন হলে সেই বিষয়গুলি নির্ভয়ে দ্বিধাহীন ভাবে সরকারকে জানাতে হবে। তবেই ত্বরান্বিত হবে উন্নয়ন।