দিনকে দিন চা পাতার গুণমান কমছে বলে উঠেছে অভিযোগ। প্রতীকী ছবি।
দিনকে দিন চা পাতার গুণমান কমছে বলে উঠেছে অভিযোগ। টি বোর্ডের সাম্প্রতিক বৈঠকেও সেই প্রসঙ্গ ওঠায়, বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য চা শিল্পমহলকে সঙ্গে নিয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। শুক্রবার বোর্ডের এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর (জোনাল অফিস, গুয়াহাটি) অরুণিতা ফুকন যাদবের নেতৃত্বে বড় বাগান, ক্ষুদ্র চা চাষি এবং বটলিফ কারখানার প্রতিনিধিদের নিয়ে ১১ সদস্যের সেই কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে তারা। তিন মাসের মধ্যে কমিটি তাদের পর্যবেক্ষণ এবং সুপারিশ-সহ রিপোর্ট দেবে টি বোর্ডকে। তবে চা শিল্পের উন্নতিতে উৎপাদনের সার্বিক গবেষণার জন্য তৈরি বিশেষ সংস্থাটি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের (টিআরএ) কোনও প্রতিনিধিকে এই কমিটিতে রাখা হয়নি।
ওই কমিটিতে রয়েছেন উত্তরবঙ্গ তথা এ রাজ্যের দুই প্রতিনিধি— ক্ষুদ্র চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘সিস্টা’-র সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী এবং বটলিফ কারখানা মালিকদের উত্তরবঙ্গের সংগঠনের সভাপতি সঞ্জয় ধানুটি। সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিজয়গোপাল বলেন, “গুণগত মানের পাশাপাশি পাতার দামের বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে কমিটি। কারণ, দাম কমে যাওয়া আর মান, দুটোই পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আমরা গোড়া থেকেই দাম কম পাচ্ছি। গত বছর ছোট চা বাগানের যে কাঁচা পাতার দাম ছিল কেজি প্রতি গড়ে ৩৩ টাকা, এ বার তা নেমেছে ১৬ টাকায়। ভাল পাতা উৎপাদন করেও দাম পান না ক্ষুদ্র চা চাষিরা।’’
বোর্ডের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন এবং টিআরএ-র চেয়ারপার্সন নয়নতারা পাল চৌধুরিও। তিনি বলেন, ‘‘আশা করব কমিটি দ্রুত সম্ভাব্য পরামর্শ দেবে। সেই সঙ্গে অবশ্য চা পাতা এবং চায়ের গুণমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে টিআরএ-র মতামতও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি টিআরএ জানিয়েছিল, চড়া তাপমাত্রা পাতার কুঁড়ির বৃদ্ধিকে ধাক্কা দিচ্ছে। নতুন পাতা না হলে চায়ের গুণমানেও প্রভাব পড়তে পারে। শিল্পমহলের একাংশের ব্যাখ্যা, আবহাওয়ার সমস্যা, বাজারে চায়ের চাহিদার তুলনায় বাড়তি জোগান, দামের অনিশ্চয়তা এবং অস্থিরতার মতো নানা ঘটনা চা উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে। শিল্প সূত্রেরও খবর, এ বার বৃষ্টি না হওয়ায় ‘ফার্স্ট ফ্লাশ’ চায়ের ঘাটতি হয়েছে উত্তরবঙ্গে। উপরন্তু তাপমাত্রার হেরফেরের কারণে ‘সেকেন্ড ফ্লাশ’-এর গোড়া থেকেই বাগানে রোগপোকার সংক্রমণ হয়েছে। যার জেরে, পাতার উৎপাদন যেমন কম হয়েছে, তেমনই যে পাতা তোলা হয়েছে তার মান ভাল নয় বলে দাবি। সবুজ পাতার সঙ্কটের জেরে উত্তরবঙ্গের বহু বটলিফ চা কারখানা এখনও পুরোপুরি উৎপাদনই শুরু করতে পারেনি।