—ফাইল চিত্র।
তাদেরই হাত ধরে শুরু হয়েছিল দেশের প্রথম উড়ান সংস্থা। ৮৮ বছর আগে। সেই টাটা এয়ারলাইন্সের নাম বদলে ১৯৪৬ সালে হয় এয়ার ইন্ডিয়া (এআই) এবং স্বাধীনতার পরে তার দখল চলে যায় সরকারের হাতে। সংশ্লিষ্ট মহলে জল্পনা, আবার সেই এয়ার ইন্ডিয়াকেই নিজেদের ঝুলিতে ভরার পরিকল্পনা করছে টাটা গোষ্ঠী।
শুধু তাই নয়, তারা নাকি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিমান সংস্থা তৈরির তোড়জোড়ও শুরু করে দিয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের বিমান সংস্থা এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়া ও বিস্তারার হাত ধরে আকাশে ফিরেছিল টাটারা। এখন সংশ্লিষ্ট মহলে কানাঘুষো খবর, আগামী দিনে ওই দুই সংস্থা এবং এয়ার ইন্ডিয়া, এই তিন দেশীয় উড়ান সংস্থাকে একই ছাতার তলায় এনে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে পারে তারা। বিমান পরিবহণ মহলে প্রশ্ন, যে এআইয়ের পথ চলা শুরু হয়েছিল জেআরডি টাটার হাত ধরে, এ বার কি তাকে ফের হাতে নিয়ে বৃত্ত সম্পূর্ণ করতে চলেছে টাটা গোষ্ঠী! চেয়ারম্যান এমেরিটাস হিসেবে মাথার উপরে রতন টাটা থাকতে থাকতেই! এআই হাতছাড়া হওয়ার আক্ষেপ যাঁকে বরাবর অস্থির করেছে।
লোকসানে ধুঁকতে থাকা এআই-কে বেচতে মরিয়া কেন্দ্র। কিন্তু তিন বার দরপত্র চেয়েও ক্রেতা মেলেনি। এই অবস্থায় জোর জল্পনা, রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থাটিতে আগ্রহী টাটা গোষ্ঠী। সরকারের সঙ্গে কথাও হয়েছে। এমনকি একটি মহল বলছে, ১৪ ডিসেম্বর এই চুক্তি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
টাটাদের উড়ান
• ১৯৩২ সালে দেশের প্রথম বিমান পরিবহণ সংস্থা টাটা এয়ারলাইন্স চালু করেন টাটা গোষ্ঠীর তৎকালীন চেয়ারম্যান জে আর ডি টাটা। ১৯৪৬ সালে শেয়ার বাজারে নথিভুক্তির সময় তার নাম হয় এয়ার ইন্ডিয়া।
• ১৯৪৮ সালে সংস্থাটির ৪৯% অংশীদারি কেনে কেন্দ্র। ১৯৫৩ সালে হয় জাতীয়করণ।
• মাঝে প্রায় ছ’দশক বিমান পরিবহণের সঙ্গে টাটাদের সম্পর্ক বলতে শুধু স্পাইস জেটের নামমাত্র অংশীদারি আর কিছু চার্টার্ড সার্ভিস।
• মালয়েশীয় সংস্থা এয়ার এশিয়ার হাত ধরে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিমান পরিবহণের ব্যবসায় ফেরার কথা জানায় টাটা গোষ্ঠী। তৈরি হয় সস্তার বিমান সংস্থা এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়া। যেখানে টাটাদের শেয়ার এখন ৫১%।
• এর পরে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আগে পূর্ণাঙ্গ বিমান পরিষেবা সংস্থা বিস্তারা। সেখানেও ৫১% মালিকানা টাটাদেরই।
• ভারতের মাটিতে যুদ্ধবিমান এফ-১৬ তৈরির জন্য ২০১৭ সালে মার্কিন সংস্থা লকহিড মার্টিনের সঙ্গেও চুক্তি করেছিল টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস।
• শোনা যায়, এয়ার ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়ায় দুঃখিত ছিলেন জে আর ডি টাটা। আক্ষেপ ছিল রতন টাটারও। যিনি এখন টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এমেরিটাস। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, মালিকানা কিনে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটিকে নিজেদের ঘরে ফেরাতে বহু দিন ধরেই আগ্রহী টাটারা।
তবে সূত্রের খবর, সরাসরি টাটা-র নাম না-দিয়ে বিস্তারাকে দিয়ে তাদের এআই কেনার পরিকল্পনা। যৌথ উদ্যোগটির সহযোগী সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের মতামত চেয়ে পাঠানো হয়েছে, জানিয়েছে টাটা ঘনিষ্ঠ সূত্র।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এয়ার এশিয়ার টনি ফার্নান্ডেজের সঙ্গে ইদানীং সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না টাটাদের। যাদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়া। যে কারণে সেখান থেকে সরে যেতে চাইছেন টনি। তাঁর যুক্তি, ভারতে দেশীয় উড়ানে লোকসান হচ্ছে। জল্পনা চলছে, টাটা-ই টনির ৪৯% অংশীদারি কিনতে পারে। সেই জল্পনা উস্কে সূত্রের খবর, ১৪ ডিসেম্বরের আগে এয়ার এশিয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায় না টাটারা।
সূত্রের খবর, এআই কিনতে পারলে এয়ার এশিয়ায় অংশীদারি বাড়াবে টাটা। তার পরে তৈরি করতে পারে বড় উড়ান সংস্থা। যার আস্তিনের তলায় থাকবে এআই, বিস্তারা, এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়া। আসবে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসও। সব মিলিয়ে শতাধিক বিমান নিয়ে টাটারা এ বার প্রতিযোগীদের রাতের ঘুম কাড়তে পারে বলেই ইঙ্গিত।