প্রতীকী ছবি।
যেমন আশঙ্কা করা হয়েছিল, ঘটল ঠিক তেমনটাই। গোটা বিশ্বের শেয়ার বাজার এখন করোনাভাইরাসের গ্রাসে। পুরো সপ্তাহ জুড়ে সূচকের অবাধ পতন দেখেছেন লগ্নিকারীরা। ভাইরাসের থেকেও দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা।
এশিয়া ছাড়িয়ে করোনা পাড়ি দিয়েছে ইউরোপ, আমেরিকাতেও। সংক্রমণের হদিস পাওয়া গিয়েছে ৫৪টিরও বেশি দেশে। আর আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে ৯০ হাজার। চিন এবং দক্ষিণ কোরিয়াতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়ায়, ওই দুই দেশের সঙ্গে বাণিজ্য এখন ঠেকেছে তলানিতে। ফলে ঝিমিয়ে পড়ছে আমদানি-রফতানি। ভাল মতো ভুগছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্প-বাণিজ্য। যে গতিতে ভাইরাস ছড়াচ্ছে, তাতে আশঙ্কা সামনের দিনগুলি আরও ভয়ঙ্কর হতে চলেছে। আর এই ভয়েই লগ্নিকারীরা বিশ্ব জুড়ে হুড়মুড়িয়ে শেয়ার বিক্রি করতে নেমেছেন। অনেকেই শেয়ার ছেড়ে ঝুঁকছেন সোনার দিকে। যে হলুদ ধাতুকে অনিশ্চয়তার বাজারে সুরক্ষার স্বর্গ হিসেবে মানা হয়। ফলে চড়ছে সোনার দাম। লগ্নি বাড়ছে বন্ডেও।
ভারতের শেয়ার বাজারও নাগাড়ে পড়েছে ছ’দিন ধরে। বড় ধস নামে গত শুক্রবার। সেনসেক্স নেমে যায় এক ধাক্কায় ১৪৪৮ পয়েন্ট। নিফ্টি ৪১৪। ওই দিন অবাধ পতন দেখা যায় ছোট-বড় সব শেয়ারেই। নিফ্টির অন্তর্গত ৫০টির মধ্যে গোত্তা খেয়ে নামে ৪৯টি শেয়ার। পরিসংখ্যান বলছে, শুক্রবার সেনসেক্সের পতন (৩.৬৪%) এখনও পর্যন্ত বাজারের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম। এর আগে ২০১৫ সালের ২৪ অগস্ট এক দিনে সেনসেক্স নেমেছিল ১৬২৫ পয়েন্ট। শুক্রবারের মহাপতনে লগ্নিকারীরা খুইয়েছেন ৫.৪৫ লক্ষ কোটি টাকা। গোটা সপ্তাহে সেনসেক্স নেমেছে ২৮৭৩ পয়েন্ট বা ৬.৯৭%। নিফ্টি আরও বেশি, ৭.২৭%।
বিশ্বে ভাইরাসজনিত এই পরিস্থিতি দ্রুত মিটবে, এমন আশা কেউ করছেন না। বরং এই সংক্রমণ আর কতটা ছড়ায় এবং শিল্প-বাণিজ্যের উপরে তার কী প্রতিক্রিয়া হয়, তা দেখার জন্য আশঙ্কা নিয়ে অপেক্ষা করছে গোটা দুনিয়ার শেয়ার বাজার। অর্থাৎ সূচকের আরও পতনের আশঙ্কা থাকছেই। এখন প্রশ্ন হল, এই পরিস্থিতিতে লগ্নিকারীরা কী করবেন?
যে কোনও বড় মাপের পতনই সুযোগ করে দেয় কম দামে ভাল শেয়ার কেনার। বাজার তলানিতে ঠেকেছে এমন কথা যেহেতু এখনই বলা যাচ্ছে না, সেই কারণে পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে এগোনো ভাল। কোনও ভাল শেয়ার অতিরিক্ত নামলে, তা প্রত্যেক পতনে একটু একটু করে ঘরে তোলা যেতে পারে। উঁচু ডিভিডেন্ড প্রদানকারী সংস্থার শেয়ারের দাম পড়ার কারণে যদি ডিভিডেন্ড বাবদ প্রকৃত আয় বা ইল্ড ৬ থেকে ১০ শতাংশ বা তার বেশি হয়ে থাকে, তবে গুণাগুণ বিচার করে সেই সব সংস্থার শেয়ারও ধরা যেতে পারে এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে।
বাজার আরও নামলে লগ্নি করা
যেতে পারে ডাইভার্সিফায়েড মিউচুয়াল ফান্ডে। এই পতন উন্মুখ বাজারে এসআইপি লগ্নিকারীদের লগ্নি চালিয়ে যাওয়াই ঠিক হবে।
শেয়ারের পাশাপাশি পড়ছে টাকার দামও। শুক্রবার এক ডলার ৬৩ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৭২.২৪ টাকা, যা প্রায় ৬ মাসের মধ্যে সব থেকে বেশি।
ভারতে করোনাভাইরাসের প্রভাবে যে সব শিল্প সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তার মধ্যে আছে বিমান পরিবহণ, পর্যটন, ধাতু, তথ্যপ্রযুক্তি, গাড়ি নির্মাণ, মেয়াদি ভোগ্যপণ্য, ওষুধ এবং রফতানি প্রধান অন্যান্য কিছু শিল্প।
এমনিতেই বছর খানেক ধরে মন্থরতা পেয়ে বসেছে ভারতীয় অর্থনীতিকে। ক্রমশ নামছে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার। এর সঙ্গে যোগ হল করোনার ধাক্কা। অর্থাৎ অনেকটাই কমল অর্থনীতির আরও ঘুরে দাঁড়ানোর আশা।
চলতি বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার নেমেছে প্রায় সাত বছরের তলানি, ৪.৭ শতাংশে। আগের বছর ওই তিন মাসে তা ছিল ৫.৬%। জানুয়ারিতে দেশের মূল ৮টি শিল্পে উৎপাদন বেড়েছে ২.২%। অন্য দিকে, বেড়েই চলেছে রাজকোষে ঘাটতির পরিমাণ। হিসেব বলছে, জানুয়ারির শেষে অর্থাৎ অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার দু’মাস আগেই ঘাটতির বহর বেড়ে পৌঁছেছে বাজেট লক্ষ্যমাত্রার ১২৮.৫ শতাংশে। সব মিলিয়ে অর্থনীতির দিক থেকে সরকার এখন বড় চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে।
(মতামত ব্যক্তিগত)