—প্রতীকী চিত্র।
গত সপ্তাহে এক স্বপ্নের দৌড় দেখল ভারতীয় শেয়ার বাজার। চলল একের পর এক রেকর্ড ভাঙাগড়া।
আগে কিছু আশঙ্কা থাকলেও তিন রাজ্যে বিজেপির বিপুল জয়ে দেশের দুই শেয়ার বাজার উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। গত রবিবার (৩ ডিসেম্বর) নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে সোমবার সকাল থেকেই বাজার চড়তে থাকে। দিনের শেষে সেনসেক্স ১৩৮৪ পয়েন্ট বেড়ে পৌঁছয় ৬৮,৮৬৫ অঙ্কে। তৈরি করে নতুন নজির। ভোটের ফল বাজারকে এতটাই শক্তি জোগায় যে, পরের দু’দিনও সেনসেক্স ওঠে যথাক্রমে ৪৩১ এবং ৩৫৮ পয়েন্ট। ফলে সূচক পৌঁছে যায় আরও উঁচু শিখরে। বৃহস্পতিবার ১৩২ পয়েন্ট নামলেও শুক্রবার ফের ৩০৪ পয়েন্ট বেড়ে সেনসেক্স পৌঁছয় ৬৯,৮২৬ অঙ্কে। যা সর্বকালীন রেকর্ড। সপ্তাহ শেষে নিফ্টিও প্রথম বার পৌঁছয় ২০,৯৬৯ পয়েন্টে। সে দিন লেনদেনের মধ্যবর্তী সময়ে এক বার ২১ হাজারও ছুঁয়েছিল সূচকটি।
তিন রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফলের প্রভাবে গত সপ্তাহে বাজার তেড়েফুঁড়ে উঠলেও আর্থিক পরিসংখ্যানের দিক থেকে দেখলে, এই উত্থানের জমি কিন্তু তৈরি ছিল আগে থেকেই। বস্তুত, গত ১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহের চারটি কাজের দিনে সেনসেক্স টানা উঠেছিল মোট ১৫১১ পয়েন্ট। শিল্প, ব্যবসা, বিদেশি লগ্নি, জিএসটি সংগ্রহ-সহ নানা ভাল খবরে তেতে উঠেছিল বাজার। বিধানসভা নির্বাচনের ফল তাতে আরও জ্বালানি জুগিয়েছে। আগামী বছরের লোকসভা ভোটের আগে যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতারই ইঙ্গিত বলে ধরে নিয়েছে বাজার মহল। মনে করছে, সরকারি নীতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকতে পারে।
সূচকের এই উত্থানে শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নিকারীরা খুশি। তাঁদের লগ্নিকৃত পুঁজি আচমকাই ভাল বেড়েছে। এখন প্রশ্ন, বাজার কি এই উত্থান ধরে রাখতে পারবে? কিছুটা ধন্দে লগ্নিকারীরা। তাঁদের জিজ্ঞাসা, চড়া দামের সুযোগে এখনই মুনাফা তোলা উচিত, নাকি আরও কিছুটা অপেক্ষা করা যেতে পারে? আবার নতুন লগ্নিকারীদের প্রশ্ন, এত উঁচু বাজারে লগ্নি করা কি উচিত হবে? এই পরিস্থিতির জল মাপা দরকার আর্থিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে।
আর্থিক দিক থেকে ভারত এখন শক্তিশালী ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে। খামখেয়ালি আবহাওয়ার কারণে কৃষি উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হলেও দেশে শিল্পের অবস্থা এবং পণ্যের চাহিদা এখন বেশ ভাল। নগদের জোগানে ঘাটতি নেই। বাড়ি-গাড়ির চাহিদা এবং তার ফলে বিভিন্ন অনুসারী শিল্পেও চাহিদা তুঙ্গে। জিএসটি সংগ্রহ বৃদ্ধিও ব্যবসায় ইতিবাচক পরিস্থিতির ইঙ্গিত। মূল্যায়ন সংস্থাগুলি চলতি অর্থবর্ষে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়াতে শুরু করেছে। উল্টো দিকে চিনের বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমছে। সব দেখে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতে ফের পুঁজি ঢালতে শুরু করেছে। এ মাসে এখন পর্যন্ত ২৬,৫০৫ কোটি টাকা ঢেলেছে তারা। পাশাপাশি, এই দফাতেও সুদ বৃদ্ধি থেকে বিরত থেকেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। শিল্পের পক্ষে যা বড় স্বস্তির কারণ। আবার সৌদি আরব তেলের উৎপাদন ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিলেও বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বাড়েনি, বরং অনেকটা নেমে এসেছে। সপ্তাহ শেষে ব্যারেল পিছু পণ্যটির দাম ছিল ৭৫.৯৫ ডলারের আশপাশে। যা ভারতের মতো তেল আমদানিকারী দেশের কাছে সুখবর। অর্থাৎ, আর্থিক দিক থেকে বাজারের ধাক্কা খাওয়ার তেমন কারণ অন্তত এখনও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
অর্থনীতির এই শক্ত ভিতের সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত। এই আবহ আপাতত থাকবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। একাংশের মতে, ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হতে চলেছে। ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তিনি অবশ্য বলেছেন, সেখানে চোখ ধাঁধানো কোনও ঘোষণা থাকবে না। যদিও ২০১৯ সালের ব্যয়মঞ্জুরিতে একাধিক জনমোহিনী প্রকল্প ঘোষণা করেছিল সরকার। ফলে এ বারেও তাকে কাজে লাগিয়ে কেন্দ্র মানুষের কাছে ছোটখাটো সুবিধা পৌঁছনোর চেষ্টা করতে পারে। আর এই আবহের মধ্যেই লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। সব মিলিয়ে অর্থবর্ষের বাকি কয়েক মাস বাজার চাঙ্গা থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
তবে মাত্র দু’সপ্তাহে সেনসেক্স ৩৮৫৬ পয়েন্ট ওঠার কারণে আগামী কয়েক দিন একটি ছোট থেকে মাঝারি সংশোধনের সম্ভাবনাও থাকছে।
(মতামত ব্যক্তিগত)