সংশ্লিষ্ট মহলের সকলেই বলছেন, ডলারের এত দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ বিশ্ব বাজারে মন্দার আশঙ্কা। ফাইল ছবি
ফের রেকর্ড, নতুন তলানিতে টাকার দাম। যার জেরে বুধবার এই প্রথম ৮২ টাকা পেরিয়ে গেল এক ডলার। তবে দিনের মাঝে ৮২.০২ টাকায় উঠলেও, সেখানে থিতু হয়নি। শেষে কিছুটা নেমেছে। আগের দিনের থেকে ৪০ পয়সা বেড়ে আমেরিকার মুদ্রা দৌড় শেষ করেছে ৮১.৯৩ টাকায়। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, আর কতখানি নীচে নামবে টাকার দাম?
এ দিন এক টুইটে অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর অবশ্য দাবি, এখন নয়, ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম পড়ছে গত পাঁচ বছর ধরে। এমনকি শুধু ডলার নয়, টাকার অবমূল্যায়ন ঘটছে চিনের মুদ্রা ইউয়ানের সাপেক্ষেও। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান সৈকত সিংহ রায় মনে করেন, আমেরিকার ফেডারাল রিজ়ার্ভ যত দিন সুদের হার বাড়াবে, ততদিন ডলার চড়বে। অবস্থার হেরফের না হলে তা ৮৫ টাকাতেও পৌঁছতে পারে।
সংশ্লিষ্ট মহলের সকলেই বলছেন, ডলারের এত দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ বিশ্ব বাজারে মন্দার আশঙ্কা। সুদের হার বৃদ্ধিই যার জন্য দায়ী। আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্ত বলেন, ‘‘বিশ্বের আর্থিক ক্ষেত্রে ডামাডোল চললে ডলার শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বাড়তে থাকে তার দাম। কারণ, আমেরিকার মুদ্রাকে লগ্নির নিরাপদ ক্ষেত্র মনে করা হয়। বর্তমানে বিশ্ব জুড়ে মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। আমেরিকা-সহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পড়াতে আগ্রাসী ভাবে সুদের হার বাড়াতে নেমেছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো দেশ মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। তাই ডলারে লগ্নি এবং সে জন্য তার দাম বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়।’’
এই অবস্থায় বাজারে ডলার বিক্রি করে টাকার দামের পতন রুখতে আরবিআই কতটা আগ্রাসী ভূমিকা নেবে, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। মূলধনী বাজার বিশেষজ্ঞ আশিস নন্দী বলেন, ‘‘রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক চ্যালেঞ্জের মুখে। ডলার বেচে টাকার দামের পতন রুখতে গেলে কমছে বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার। যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। অথচ টাকাকে পড়তে দিলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ তীব্র হচ্ছে বিরোধীদের। তাই টাকার দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা বলা মুশকিল।’’
শুক্রবার সুদের হার নিয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্ত জানা যাবে। ফের সুদ বাড়লে টাকার দামে তারও প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট মহলের।