Non-convertible Debentures

Non-convertible Debentures: বেশি সুদের লোভে ঋণপত্রে লগ্নি করছেন? ঝুঁকি কতটা বুঝে নিয়েছেন তো?

Advertisement

নীলাঞ্জন দে

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২১ ১৭:৪২
Share:

সমস্যাটা হল, সাধারণ মানুষ লগ্নি করতে গিয়ে যেখানে বেশি লাভ সে দিকেই ঝোঁকেন ঝুঁকির কথা না ভেবে।

অতি লোভে তাঁতি নষ্ট। প্রবাদটি যে কতটা সত্য তা বারংবার বোঝা যায় চড়া বাজারের সময়, সাধারণ মানুষের কিছু না ভেবেই বিনিয়োগে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতা দেখে। লোভের বশে মানুষ যেন জেনেবুঝেও সর্বনাশের পথে এগোয়। যেমন সারদা বা রাজ্যের অন্য নানান চিট ফান্ডের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি। বাজারে চলতি হারের থেকে বহুগুণ বেশি সুদ! কেউই কিন্তু ভাবেননি, এত চড়া হার কী ভাবে মেটাবে সংস্থাগুলি! আগেও এই জাতীয় সংস্থার ভরাডুবি হয়েছে। জেলে গিয়েছেন সংস্থার মালিকরা। অথচ সেই অভিজ্ঞতা ভুলেই সাধারণ মানুষ বারে বারে হাত পুড়িয়েছেন।

এটা যে শুধু চিট ফান্ডের ক্ষেত্রে হয় তা নয়। ঋণপত্রের বাজারেও এই একই ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি সেবি কোটাক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে ৫০ লক্ষ টাকা ফাইন করেছে তাদের দুটি ‘ফিক্সড ম্যাচিওরিটি’ প্রকল্পে লগ্নিকারীদের সামনে সঠিক তথ্য তুলে না ধরার জন্য। আরও শাস্তি হিসাবে লগ্নিকারীদের দেওয়া টাকার উপর বিশেষ হারে সুদ মেটানোর দায়ও বর্তিয়েছে সংস্থাটির উপর।

সংস্থার অপরাধের তালিকাটি দীর্ঘ। ছোট করে বললে, সংস্থাটি বাজারে দুটি প্রকল্প ছাড়ে যার টাকা জ়ি গোষ্ঠীর সংস্থায় বিনিয়োগ করা হয়। ২০১৯ সালে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। জ়ি গোষ্ঠী এই টাকাটা ধার করে তাদের শেয়ার বন্ধক রেখে। কিন্তু শেয়ারের দাম পড়ে যাওয়ায় বন্ধক দেওয়া সম্পদের মূল্যও পড়ে যায়। সমস্যা তৈরি হয় বাজার থেকে তোলা টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে। কোটাক সমস্যা সামলাতে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে দেয় আর এর পরেই সেবি ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেবির অভিযোগ কোটাক এই প্রকল্পটি বাজারে ছাড়তে একাধিক নিয়ম ভঙ্গ করেছে যার অন্যতম হল বিনিয়োগকারীদের হাতে যথেষ্ট তথ্য তুলে না দেওয়া। এই অপরাধে শুধু আর্থিক দণ্ডই নয়, সেবি কোটাককে আগামী ছয় মাস এই জাতীয় প্রকল্প বাজারে ছাড়তেও নিষেধ করে দিয়েছে সম্প্রতি।

Advertisement

সমস্যাটা হল, সাধারণ মানুষ লগ্নি করতে গিয়ে যেখানে বেশি লাভ সে দিকেই ঝোঁকেন ঝুঁকির কথা না ভেবে। ঋণপত্রে বিনিয়োগ করতে গেলে কিন্তু শেয়ারের মতোই ঝুঁকির অঙ্ক কষেই পা ফেলা উচিত। কিছু বিষয় মাথায় রাখতেই হবে এমন বিনিয়োগ করতে চাইলে।

  • আপনি ঋণপত্র কিনছেন মানে কাউকে আপনি টাকা ধার দিচ্ছেন
  • আপনাকে প্রথমেই দেখে নিতে হবে যাকে ধার দিচ্ছেন, সে যে পরিমাণ টাকা তুলছে বাজার থেকে তা শোধ দেওয়ার ক্ষমতা আছে কিনা
  • পাশাপাশি দেখতে হবে তাদের সম্পর্কে বাজার কী বলছে
  • ধার করা টাকা কী ভাবে খরচ করতে চায় সংস্থাটি সেটাও বুঝে নেওয়া দরকার
  • এই ঋণের ঝুঁকি কী ভাবে দেখছে রেটিং সংস্থাগুলি
  • বাজারে চলতি সুদের থেকে বেশি সুদ দিলে টাকা ঢালার আগে আরও খুঁটিয়ে ভাবা উচিত
  • ‘এএ’ বা যাকে ‘ডাবল এ’ রেটিং বলা হয় চলতি কথায় তার তলায় কোনও ঋণপত্রের রেটিং হলে তাতে বিনিয়োগ না করাই ভাল।
Advertisement

এই প্রসঙ্গে মাথায় আসছে এডেলওয়েস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার সাম্প্রতিক বাজারে ছাড়া নন কনভারটেবল ডিবেঞ্চার-এর কথা। এই ইস্যুটিকে ‘এ-’ বা ‘এ মাইনাস’ রেটিং দিয়েছিল রেটিং এজেন্সি। যা ‘ডাবল এ’ থেকে বহু ধাপ নীচে। অর্থাৎ লগ্নির ঝুঁকি বেশ বেশি। কিন্তু সুদের হার ৯.৫ শতাংশ যা আজকের বাজারে অভাবনীয়। মাথায় রাখতে হবে সুদের হার নির্ধারিত ঋণ ফেরত পাওয়ার ঝুঁকির হিসাবে। যে ঋণে ঝুঁকি যত বেশি তাতে তত বেশি সুদ। আর এ ক্ষেত্রেও তাই সুদের হার বাজারের চলতি হারের থেকে অনেক বেশি। কিন্তু সাধারণ মানুষ যাঁরা এতে বিনিয়োগ করেছেন তাঁরা কি এটা খতিয়ে দেখেছেন?

(লেখক সঞ্চয় উপদেষ্টা, মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement