প্রতীকী ছবি।
ঝিমিয়ে থাকা অর্থনীতিতে রুজি-রোজগার নিয়ে চিন্তিত বহু মানুষের জীবনে এ বার ধাক্কা দিল সোনা। সেই সব ক্রেতাকে, বিয়ের জন্য যাঁদের অবিলম্বে সোনা না-কিনে উপায় নেই। সেই সব লগ্নিকারীকে, যাঁরা অস্থির শেয়ার বাজারের ঝুঁকি এড়াতে সোনায় লগ্নি করতে চান। আর সেই সব গয়না ব্যবসায়ীকে, যাঁরা বুঝতে পারছেন না আর কতটা চড়বে সোনা। এমনিতেই ঝিমিয়ে থাকা বাজারে এর জেরে বিক্রি আরও কমবে না তো? পাকা সোনা ৪২ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। গয়নার সোনা জিএসটি যোগ করে ৪১,১৪৮ টাকা। এর আগে এত উঁচু দাম কখনও দেখেননি সোনার কারবারিরা। তাঁদের দাবি, ইতিমধ্যেই এর জেরে লেনদেন তলানিতে ঠেকেছে গয়নার বাজারে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিশ্ব জুড়ে শেয়ার বাজার টালমাটাল করোনাভাইরাসের জন্য। ফলে সোনায় লগ্নি বাড়ছে। তাই বাড়ছে চাহিদা। চড়ছে দাম। তবে ওয়েস্ট বেঙ্গল বুলিয়ন মার্চেন্টস অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি দীনেশ কাবরার দাবি, ‘‘এটা শুরু হয়েছে সেই আমেরিকা-উত্তর কোরিয়া বিরোধ থেকেই। মার্কিন-চিন শুল্ক যুদ্ধ, মার্কিন-ইরান বিরোধ হয়ে এ বার করোনা। বিশ্বের অর্থনীতি যত সমস্যায় পড়ছে, লগ্নিকারী তত ঝুঁকছেন সোনায়।’’
ছুটছে দর
• কলকাতায় প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট পাকা সোনার দাম বাড়ল ৪৬৫ টাকা। নতুন রেকর্ড গড়ে তা দাঁড়াল ৪২,১১০ টাকায়
• প্রতি ১০ গ্রাম ২২ ক্যারাট গয়নার সোনা ছুঁল ৩৯,৯৫০ টাকা। বাড়ল ৪৪০ টাকা
• দু’ধরনের সোনায় বসবে ৩% জিএসটি। ফলে পাকা সোনা হল প্রায় ৪৩,৩৭৩ টাকা। গয়নার সোনা দাঁড়াল ৪১,১৪৮ টাকা
• গত বছর ফেব্রুয়ারিতে কর-সহ পাকা সোনার দাম ছিল ৩৫,১২৮ টাকা
কিন্তু কেন
• দীর্ঘ দিন ধরে নানা ঘটনায় বিশ্ব জুড়ে তৈরি হওয়া আর্থিক সমস্যা। এতে আছে মার্কিন-চিন শুল্ক যুদ্ধ, আমেরিকা-ইরান সংঘাত ও করোনা। যা নানা সময়ে টালমাটাল করেছে শেয়ার বাজারকে। ফলে অনেকেই লগ্নি সরাচ্ছেন সোনায়
• বিশ্ব বাজারে সোনা দামি হওয়া ও ডলারের সাপেক্ষে টাকার দর পড়ায় দেশে তা কিনতে খরচ বেশি পড়ছে
অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান শঙ্কর সেন বলেন, ‘‘সোনা দামি হওয়ায় পণ্য লেনদেন বাজারে সোনার চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু কমেছে গয়না তৈরির জন্য চাহিদা।’’ স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে বলেন, ‘‘ক্রেতারা দাম শুনে কম সোনায় কাজ সারছেন। সোনার কাটতি কমছে। প্রমাদ গুনছে গয়না ব্যবসা। অনেকেই পুরনো গয়না ভেঙে নতুন গড়াচ্ছেন।’’ বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পি সমিতির বৌবাজার শাখার সম্পাদক সুব্রত করের আক্ষেপ, ‘‘কারিগরদের কাজ ৬৫% কমেছে। গয়নার মজুরিই ভরসা। গয়না তৈরি কমলে রুজিতে টান পড়ে। ফলে মার খাচ্ছি।’’