—প্রতীকী ছবি।
সম্প্রতি রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেশের ১ কোটি গৃহস্থের বাড়িতে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা গড়ার বিশেষ প্রকল্পের (প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনা) কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানালেন, সেই সব পরিবার মাসে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত নিখরচায় (মুফত্ বিজ্লি) বিদ্যুৎ পাবেন। তাদের বিদ্যুতের খরচে সাশ্রয় হবে। বিকল্প বিদ্যুতে জোর দেওয়ার ভাবনাকে স্বাগত জানালেও বিশেষজ্ঞদের একাংশ অবশ্য সেই সঙ্গে কিছু সতর্কবার্তাও দিয়েছেন। তাঁদের মতে, বরং সার্বিক ভাবে বিভিন্ন ধরনের বিদ্যুতের ব্যবহারের সার্বিক পরিকল্পনা জরুরি। না হলে বিদ্যুৎ পরিষেবার ক্ষেত্রে ধাক্কা পড়তে পারে। বাড়তে পারে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনের মাসুলও।
নির্মলা এ দিন জানান, এই প্রকল্পে নিখরচায় বিদ্যুৎ পেলে এবং উদ্বৃত্ত সৌর বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে বিক্রি করে পরিবার পিছু বার্ষিক ১৫-১৮ হাজার টাকা বাঁচাতে পারবেন বলে আশা। সেই বিদ্যুৎ বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জ দিতেও কাজে লাগবে। অন্যান্য প্রাপ্তির খতিয়ান দিতে গিয়ে নির্মলার আরও দাবি, এই ব্যবস্থা গড়তে ও তার জোগান-শৃঙ্খলের জন্য যেমন উদ্যোগপতির প্রয়োজন হবে, তেমনই তা গড়া ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে।
বিকল্প জ্বালানিতে উৎসাহ দেওয়ার ভাবনাকে স্বাগত জানালেও বিদ্যুৎ-বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দে’র প্রশ্ন, ‘‘নিখরচায় ওি বিদ্যুৎ দিতে তাহলে সৌর প্যানেল বসানোর খরচও কি কেন্দ্র দেবে?’’ যদিও কেন্দ্র আগামী দিনে প্রকল্পটি বিশদে সে সব জানাবে বলেই আশা সংশ্লিষ্ট মহলের।
সৌর, হাওয়া বা জল বিদ্যুতের মতো বিকল্প বিদ্যুতের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও অনির্বাণবাবুর মতে, এগুলির জন্য আলাদা ভাবে দেখে এক একটি পরিকল্পনা তৈরি করলে বিদ্যুৎ পরিষেবায় ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বরং মোট বিদ্যুতের চাহিদার মধ্যে কতটা তাপবিদ্যুৎ হবে এবং কতটা এ ধরনের বিকল্প শক্তি, আগে তার হিসাব কষে মূল পরিকল্পনা ( মাস্টার প্ল্যান) করা দরকার। এর আগেও এমন কোনও পরিকল্পনা বা নথি চোখে পড়েনি। অথচ তাপ বা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনের ক্ষেত্রে খুব বেশি তারতম্য হওয়া কাম্য নয়। ২৪ ঘণ্টাই মোটামুটি একটা ভারসাম্য রেখেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয়। এখন বাড়ির ছাদে সৌর বিদ্যুৎ থেকে জোগানো হলে দিনে তাপবিদ্যুতের চাহিদা কমবে। ফলে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা খানিকটা বসে থাকবে। তখন তাদের খরচ ও আয়ের ভারসাম্য বজায় রাখতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থাগুলি তাদের মাসুল বৃদ্ধির পথে হাঁটতে পারে। যা আবার বণ্টন সংস্থাগুলির উপরেও চাপ ফেলতে পারে। তাই এক একটি ক্ষেত্রের জন্য আলাদা ঘোষণার বদলে সার্বিক ভাবে বিদ্যুতের চাহিদার মধ্যে কোন ধরনের বিদ্যুতের অংশীদারি কতটা হওয়া দরকার, তার নির্দিষ্ট পরিকল্পনাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।