Mutual Fund

NPS: এনপিএস-এ বদলাচ্ছে একাধিক শর্ত, কতটা লাভ হবে, দেখে নিন

এর মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য হল পেনশন খাতে জমা টাকা পাঁচ লক্ষ টাকা না ছাড়ালে পুরো সঞ্চয়ের টাকাই তুলে নিতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত। আগে এই সীমা ছিল দুই লক্ষ টাকা।

Advertisement

নীলাঞ্জন দে

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২১ ১৩:৫৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

সম্প্রতি জাতীয় অবসরভাতা প্রকল্প বা এনপিএস-এর কিছু শর্ত বদল হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি এতে সঞ্চয়কারীর সুবিধা হবে নিজের ভবিষ্যত্ পরিকল্পনাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে। কিন্তু প্রশ্নটা হল অ্যানুইটি কেনার বাধ্যবাধকতার উপর। যে প্রশ্নটা বহু দিন ধরেই ঘুরছে তা হল অ্যানুইটি থেকে প্রাপ্ত আয় সংক্রান্ত। বাজারে এখনও অ্যানুইটিতে বিনিয়োগ করলে গড়ে সাড়ে পাঁচ শতাংশের উপর রোজগার হয় না। অথচ অবসরের পরে ব্যাঙ্কের আমানত (সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম)-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে মিলিয়ে মিশিয়ে বিনিয়োগ করলে আয়ের হার অ্যানুইটির থেকে অনেক বেশি দাঁড়ায়। অ্যানুইটি থেকে আয় কেন এত কম তা অন্য আলোচনার বিষয়। আমরা বরং চোখ রাখি শিথিল হওয়া কয়েকটি শর্তের উপর।

Advertisement

এর মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য হল পেনশন খাতে জমা টাকা পাঁচ লক্ষ টাকা না ছাড়ালে পুরো সঞ্চয়ের টাকাই তুলে নিতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত। আগে এই সীমা ছিল দুই লক্ষ টাকা।

মাথায় রাখতে হবে, যে মানুষটি গোটা চাকরি জীবনের শেষে অবসরের জন্য মাত্র ৫ লক্ষ টাকা জমিয়ে উঠতে পেরেছেন তাঁকে তাঁর জমানো টাকার ৪০ শতাংশ বা ২ লক্ষ টাকা অ্যানুইটিতে বিনিয়োগ করে বছরে ১০ হাজারের মতো আয়ের রাস্তায় হাঁটানোর থেকে পুরো সঞ্চয়টাই তাঁকে দিয়ে দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। আজকের আর্থিক পরিস্থিতিতে এই সীমা আরও বাড়ানোর কথা ভাবা উচিত ছিল কর্তৃপক্ষের।

Advertisement

তবে একই সঙ্গে আয়ের ক্ষেত্রে প্রান্তিক মানুষকেও এই প্রকল্পের আওতায় আনার যে একটা চেষ্টা আমরা দেখছি তাকে প্রশংসা না করে উপায় নেই। তবে শর্তের সামগ্রিক কাঠামোকে অনেকেই কিন্তু এখনও একটু একপেশেই মনে করছেন।

এনপিএস প্রকল্পে কত টাকা রাখতে হবে সেটা বলে দেওয়া আছে। কিন্তু বিনিয়োগকারী প্রকল্পের শেষে কত টাকা পাবেন তা শুধু তিনি জানেন না তাই-ই নয়, তাঁর সঞ্চয় নানান প্রকল্পে খেলিয়ে আমানত বাড়িয়ে নেওয়ার উপরও তাঁর কোনও হাত নেই।

ধরা যাক ইক্যুইটি বা শেয়ারের কথা। এই প্রকল্পের প্রবণতাই হল ঋণপত্রের দিকে। অথচ বিনিয়োগকারীর কর্মজীবনের শুরুতে যদি শেয়ারের দিকে বেশি ঝোঁকেন তা হলে হয়তো তার আমানত বাড়ার হার অনেক বেশি হয়। অথচ প্রকল্পে সেই সুযোগ খুব একটা নেই। এনপিএস শুরুর দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমানত বৃদ্ধির হারকে ৯.৫ শতাংশের উপরে নিয়ে যেতে পারেনি। অথচ ২০০৪ সাল থেকে যাঁরা এই প্রকল্পে টাকা রেখেছেন তাঁরা তাঁদের সঞ্চয়কে ঠিক মতো বিনিয়োগ করলে তাঁদের আমানত অনেক বেশি বাড়তে পারত। এই একই সময় বাজারে চালু থাকা ভাল মিউচুয়াল ফান্ডের রিটার্নের দিকে চোখ রাখলেই আমরা বুঝতে পারব এই সমস্যাটা।

সমস্যা হল, সাধারণ ভাবে আমরা শেয়ারে বিনিয়োগকে সহজ ভাবে নিতে পারি না। বাজারে ইটিএফ বা শেয়ারে বিনিয়োগ করা নিয়ে আমাদের নানা আপত্তি। কিন্তু অবসরের পরে আমাদের কিন্তু এই বাজারের উপর নির্ভর করেই আয়ের ব্যবস্থা করতে হয়। মাথায় রাখতে হবে ১৬ বছরে ৯.৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুফল কিন্তু মূল্যবৃদ্ধিই খেয়ে নিয়েছে প্রায় পুরোটাই। অথচ বহু মিউচুয়াল ফান্ডই কিন্তু তার বিনিয়োগকারীদের গত তিন বছরেই ২০ শতাংশ হারে লাভ দিয়েছে।

তাই যে প্রশ্নটা আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ তা হল জাতীয় অবসরভাতা প্রকল্প কি তার সঞ্চয়কারীদের হাতে তাঁদের সঠিক প্রাপ্যটি তুলে দিতে পারছে কি না। ভারতে অবসরোত্তর মানুষের যে আর্থিক দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠছে এমনকি সরকারি সমীক্ষাতেও, তার পরিপ্রেক্ষিতে কি এই আমানত পরিচালনার ক্ষেত্রে মূলধনী বাজারের যাবতীয় সুযোগ নেওয়া উচিত নয়? আর অ্যানুইটি কেনার বাধ্যবাধকতার কারণে অবসরের পরে বিনিয়োগকারীকে জোর করে কম আয়ের পথে হাঁটানোই বা হবে কেন? তিনি কোথায় বিনিয়োগ করবেন সেই সিদ্ধান্ত তাঁর উপর ছেড়ে দেওয়াই ভাল নয় কি?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement