অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র।
নয়াদিল্লি, ১ ফেব্রুয়ারি: আন্তর্জাতিক লগ্নিকারীদের বার্তা দিয়ে রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টেনে আজ বাজার থেকে ধার কমানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল মোদী সরকার।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করে বলেছেন, আগামী অর্থবর্ষে বাজার থেকে ১৪.৩ লক্ষ কোটি টাকা ধার নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। এই অর্থবর্ষে যার পরিমাণ প্রায় ১৫.৪৩ লক্ষ কোটি। অর্থাৎ আগামী বছরের লক্ষ্য প্রায় ১.৩ লক্ষ কোটি টাকা কম। এতে এক ধাক্কায় ঋণ কমছে প্রায় ৮.৪%। বাজারের প্রত্যাশার তুলনায় অনেক নীচে। স্বাভাবিক ভাবেই বন্ড বাজার একে স্বাগত জানিয়েছে। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই সরকারি ঋণপত্র বা বন্ডে সুদের হার কমতে
শুরু করেছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতো হালফিলে কেন্দ্রীয় সরকারের সুদে বোঝাও অর্থ মন্ত্রকের চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। আগামী অর্থবর্ষে সরকারের আনুমানিক রাজস্ব আয় হবে প্রায় ৩০ লক্ষ কোটি টাকা। এর প্রায় ৩৯% বা ১১.৯০ লক্ষ কোটি টাকাই পুরনো ঋণের সুদ মেটাতে খরচ হবে। যা সরকারের মোট খরচের ২৫%। পাঁচ বছর আগের তুলনায় এখন সরকারের সুদ মেটানোর খরচ প্রায় দ্বিগুণ।
চলতি অর্থবর্ষে অবশ্য এতে রাশ টেনেছেন নির্মলা। গত বছরের বাজেটে অনুমান ছিল সুদের খাতে ব্যয় হবে প্রায় ১০.৮০ লক্ষ কোটি টাকা। সংশোধিত হিসেবে তা হচ্ছে প্রায় ১০.৫৫ লক্ষ কোটি। এ বছর প্রথমে রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫.৯%। সংশোধন করে তা-ও ৫.৮% করেছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী বছরের লক্ষ্য ৫.১ শতাংশে কমিয়ে আনা। আয়-ব্যয়ের ঘাটতি কমায় তা পূরণ করতে ঋণের পরিমাণও কমেছে।
আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থা ইন্ডিয়া রেটিংস-এর অর্থনীতিবিদ সুনীল কুমার সিন্হার মতে, ‘‘রাজকোষ ঘাটতি কমার ফলে সরকারের আর্থিক
শৃঙ্খলা নিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে। ভারতের অর্থনীতিতে আস্থা বাড়বে আন্তর্জাতিক লগ্নিকারীদের। বিশেষত এ দেশ যখন উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলির জে পি মর্গান সরকারি বন্ড সূচকে জায়গা পেয়েছে।’’
অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের আশা, বাজার থেকে ঋণ কমায় দেশে সরকারি ঋণপত্রে সুদের হার কমবে। এর পরে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের সরকারি বন্ড থেকে তৈরি হচ্ছে সুযোগ। সে ক্ষেত্রেও কম সুদে ঋণ মিলতে পারে। ফলে ভবিষ্যতে কমবে সুদের বোঝাও। এখনও জিডিপি-র তুলনায় সরকারি দেনার পরিমাণ ৫০ শতাংশের ঘরে হলেও অর্থসচিব টি ভি সোমানাথন বলেন, ‘‘জিডিপি-র তুলনায় ঋণের হার জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে ভারতেই সব থেকে কম। কম আমাদের বিদেশি ঋণও।’’