অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ফাইল চিত্র।
হাজার টাকা ছাড়ানো রান্নার গ্যাস থেকে দুধ, বিস্কুট, পাউরুটি, আটা-ময়দা, চাল, ডাল-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের বেড়ে যাওয়া দামে জেরবার মধ্যবিত্ত মানুষ। কোভিড-কালে যাঁদের অনেকেরই চিকিৎসায় জলের মতো টাকা বেরিয়েছে। অথচ রোজগার তেমন বাড়েনি কিংবা কমেছে। রবিবার নিজেকে এই মধ্যবিত্তদের এক জন বলেই দাবি করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আরএসএস-এর একটি অনুষ্ঠানে তাঁর মন্তব্য, নিজে মধ্যবিত্ত বলেই তিনি বোঝেন এই শ্রেণির মানুষেরা কী রকম চাপের মধ্যে দিন কাটান।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনে সাধারণ রোজগেরে মধ্যবিত্তেরাই যে তাদের সব থেকে বড় মাথাব্যথার কারণ হতে পারে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে মোদী সরকার। কারণ এঁদের বড় অংশের অভিযোগ, কোভিড থেকে কর্মসংস্থান বা মূল্যবৃদ্ধি— কোনও সমস্যায় এখনও কেন্দ্রের থেকে বিন্দুমাত্র সুবিধা পাননি তাঁরা। পূরণ হয়নি করছাড় বৃদ্ধির দাবি। বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ বাড়লেও পিপিএফের মতো করসাশ্রয়ী প্রকল্পে সুবিধা মেলেনি। মধ্যবিত্ত করদাতাদের অনেকের ক্ষোভ, তাঁদের সুরাহা দেওয়ার যোগ্যই মনে করে না এই সরকার। সূত্রের মতে, এই মানুষগুলোর মন পেতে তাই চেষ্টার কসুর করছেন না অর্থমন্ত্রী। এর আগে গত অক্টোবরে যখন খাদ্যপণ্যের আগুন দামে ছেঁকা খাচ্ছেন আমজনতা, তখন নির্মলা এক দিন থলে নিয়ে ঢুকে পড়েন চেন্নাইয়ের বাজারে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োয় দেখা যায়, তিনি দরদাম করে আনাজ কিনছেন। অন্য খদ্দেরদের সঙ্গে কথা বলছেন। নির্মলার দফতর পরে এ নিয়ে টুইটও করে।
একাংশের বক্তব্য, মধ্যবিত্তদের দলে নাম লেখাতে কার্যত বাধ্য হচ্ছেন নির্মলা। কারণ, বিরোধী কংগ্রেস ইতিমধ্যেই সেই কাজে নেমে পুরনো পেনশন প্রকল্প চালু করেছে রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যে। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, লোকসভা ভোটে জিতলে গোটা দেশেই তা চালু করবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বর্তমানে চালু এনপিএসে কর্মী ও নিয়োগকারীকে মাসে মাসে সমান অর্থ দিতে হয়। অবসরের পরে সেই তহবিল থেকে অ্যানুয়িটি কিনে তা থেকে পেনশন পান কর্মী। এতে সরকারের আর্থিক বোঝা কমে। কিন্তু পুরনো ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট অঙ্কের পেনশন দেয় সরকার। অর্থাৎ তার দায় সরকারেরই। ফলে ভাল-মন্দের বিচারে না গিয়ে বলা যায়, বহু কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারি কর্মীর সুযোগটি মনে ধরতে পারে। তাঁদের দাবি, সরকার টের পাচ্ছে সংসার চালানো, জ্বালানি, থেকে শুরু করে ছেলেমেয়েকে স্কুলে পড়ানো, বিমার প্রিমিয়াম দেওয়া, ওষুধ, চিকিৎসা-সহ জীবনযাপনের নানা খাতে বর্ধিত খরচে সাধারণ রোজগেরেদের মনে চড়তে থাকা ক্ষোভ। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধীদের বার্তায় সিঁদুরে মেঘ দলের অন্দরে। ফলে মধ্যবিত্তদের দলে শামিল হওয়ার বার্তা দেওয়া ছাড়া তাদের উপায় কি?
এ দিনই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর টুইট, ‘‘রাজস্থান- ওপিএস (ওল্ড পেনশন স্কিম) ছত্তিসগঢ়- ওপিএস হিমাচল প্রদেশ- ওপিএস হিমাচলের কংগ্রেস সরকার দেরি না করে প্রতিশ্রুতি পালন করেছে। ‘প্রতিটি ঘরে লক্ষ্মী’— মহিলাদের হাতে প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা করে দেওয়ার প্রকল্প ৩০ দিনের মধ্যে চালু করতে কমিটি বসিয়েছে। কংগ্রেস মানে ভরসা।’’
তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, বাজেটের সপ্তাহ দুয়েক আগে অর্থমন্ত্রী নিজেকে মধ্যবিত্ত বলে দাবি করছেন। এই শ্রেণির মানুষ যে চাপে আছেন, সেটা মেনেও নিচ্ছেন। আগামী বাজেটে কি তা হলে তাঁদের জন্য করছাড়ের কিছু সুবিধা থাকবে? নির্মলা অবশ্য প্রতিশ্রুতির পথে হাঁটেননি। শুধু বলেছেন, ‘‘আমি বুঝি তাঁদের সমস্যা। সরকার তাঁদের জন্য অনেক কিছু করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।’’