যুদ্ধের আবহে ইতিমধ্যেই ১০০ ডলারের অনেক উপরে দাঁড়িয়ে অশোধিত তেলের দাম
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে তৈরি হওয়া ক্ষত ভারতের অর্থনীতির পক্ষে যে যথেষ্ট বিপজ্জনক, বৃহস্পতিবার তা আরও স্পষ্ট হল দুই উপদেষ্টা সংস্থার রিপোর্টে। এ দিন ঝুঁকির বার্তা দিয়েই আগামী অর্থবর্ষে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৭.৯% করেছে আমেরিকার মর্গান স্ট্যানলি। আর ৭.৮% বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েও ক্রিসিলের সতর্কবার্তা, পণ্যের বাড়তে থাকা দাম বৃদ্ধির হারকে আরও টেনে নামাতে পারে। পরিস্থিতি সামলাতে কর্মসংস্থান এবং খাদ্যে ভর্তুকির অঙ্ক বাড়ানোর পাশাপাশি পেট্রোপণ্যে শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিয়েছে তারা।
যুদ্ধের আবহে ইতিমধ্যেই ১০০ ডলারের অনেক উপরে দাঁড়িয়ে অশোধিত তেলের দাম। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল আমদানিকারী ভারত যে এর জেরে সমস্যায় পড়বে সন্দেহ নেই। আশঙ্কা, দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বৃদ্ধির বাধ্যবাধকতা মূল্যবৃদ্ধির হারকেও ঠেলে তুলবে। মর্গান স্ট্যানলির রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ‘স্ট্যাগফ্লেশনের’। অর্থাৎ যখন আর্থিক বৃদ্ধি ঝিমিয়ে থাকবে। অথচ মূল্যবৃদ্ধির হার মাথাচাড়া দেবে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতির উন্নয়ন থমকে যায়। ঝিমিয়ে পড়ে শিল্পের কর্মকাণ্ড। বেকারত্ব বাড়ে। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়।
ক্রিসিল বলেছে, সরকার পরিকল্পিত পরিকাঠামোয় বিপুল খরচ এবং বেসরকারি সংস্থাগুলির মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধির আশায় ভর করেই তারা পরের অর্থবর্ষে জিডিপি ৭.৮% বাড়তে পারে বলে মনে করছে। তবে করোনার তৃতীয় ঢেউ দ্রুত কেটে যাওয়ায় অর্থনীতি ছন্দে ফেরার যে সুযোগ পেয়েছিল, তা কেড়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত। গোটা বিশ্বের মতোই ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি ঝুঁকির মুখে। সরাসরি আর্থিক সাহায্য কমে যাওয়ায় কেনাকাটা এখনও দুর্বল।
যদি অশোধিত তেলের দর গড়ে ৮৫-৯০ ডলার হয়, তা হলে মূল্যবৃদ্ধির আগামী অর্থবর্ষে ৫.৪% হবে। কিন্তু যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হলে এই হারও বাড়তে পারে।
ক্রিসিলের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ধর্মাকৃতি জোশীর পরামর্শ, ‘‘আমরা মনে করি আগামী অর্থবর্ষের জন্য কেন্দ্রের বাজেটে যা বলা হয়েছে, আর্থিক নীতিকে তার থেকেও বেশি আগ্রাসী হতে হবে। কাজ তৈরি হয় এমন প্রকল্পে ও খাদ্যের ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়িয়ে এবং পেট্রোপণ্যে শুল্ক কমিয়ে সেটা করা যেতে পারে।’’ তাঁর দাবি, অতিমারির কারণে এখনও যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত, এর ফলে তাঁরা স্বস্তি পাবেন। চাহিদা এবং কেনাকাটা বাড়লে লগ্নির চক্র তৈরি হবে। যা বৃদ্ধির পথ করে দেবে।