আটপৌরে চেহারায় নেই বিশেষত্ব। বাইরের লোক বিশেষ জানেনও না তাঁর নাম। কিন্তু রিলায়্যান্সের অন্দরমহলে অন্যতম শক্তির আর এক নাম মনোজ মোদী। মুকেশ অম্বানীকে এশিয়ার ধনীতম ব্যক্তি করার নেপথ্য কারিগর ইনি-ই।
ভারতের বাণিজ্যমহলে অবশ্য খুবই পরিচিত নাম মনোজ মোদী। সবাই জানেন, তিনি মুকেশ অম্বানীর বাণিজ্যিক পদক্ষেপের পিছনে প্রধান কারিগর। ফেসবুকের সঙ্গে অম্বানীর যে ৫৭০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়েছে, তার বিশ্বকর্মাও ইনি।
প্রচারবিমুখ মনোজ সম্বন্ধে খুব কমই জানা যায়। বয়স ষাটের কোঠায় পৌঁছনো এই ব্যক্তি তাঁর ব্যক্তিগত জীবন আড়ালে রাখতেই ভালবাসেন তিনি।
সাক্ষাৎকারও তিনি প্রায় দেন না বললেই চলে। প্রচারবিমুখ নামগুলিই যে ভারতীয় বাণিজ্যের গতি নির্ণায়ক হন, তার প্রমাণ মনোজ মোদী। বণিকমহলের কথায়, সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত সিলমোহর দেওয়ার ব্যাপারে মনোজ মোদীর পরামর্শকে গুরুত্ব দেন অম্বানী।
স্বল্পভাষী মনোজ নিজের কৃতিত্ব প্রকাশ্যে আনেন না। বরং তাঁর দাবি, তিনি সংস্থার কর্মীদের গড়ে তোলেন, যাতে তাঁরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। মনোজের কথায়, তাঁদের সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গি হল, তাঁদের সঙ্গে যাঁরা ব্যবসা করছেন তাঁরা অর্থলাভ করতে পারলেই তাঁদের সংস্থা প্রতিযোগিতার বাজারে ভাল জায়গায় থাকতে পারবে।
ঘনিষ্ঠ মহলে শোনা যায়, দর কষাকষিতে বা কোনও জিনিসের মধ্যস্থতা করতে মনোজ জুড়িহীন। বড় কোনও ডিলের সময় তিনি পর্দার আড়ালে থাকেন। তাঁর কথায় পদক্ষেপ করেন সংস্থার এগজিকিউটিভরা।
এয়ার ডেকান-এর কর্ণধার জি আর গোপীনাথের কথায়, নিজের কাজে মনোজ মোদী সেরাটুকু উজাড় করে দেন। কোনও নামী বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ ছাড়াই তিনি ব্যবসার খুঁটিনাটি রাখেন নিজের নখদর্পণে।
মুম্বইয়ে কেমিক্যাল টেকনোলজি নিয়ে পড়ার সময় থেকে মুকেশ অম্বানী ও মনোজ মোদী ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আশির দশক থেকে তিনি কাজ করছেন রিলায়্যান্সে। প্রথমে ধীরুভাই অম্বানী, তার পর মুকেশ-নীতা, এখন মুকেশের ছেলেমেয়ে আকাশ ও ঈশা। তিন প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।
সংস্থার খুচরো ব্যবসাকে ছোট শহরের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছেন মনোজ। এমনকি, জিয়ো-র দুর্দান্ত সাফল্যের পিছনেও কার্যকরী হয়েছে তাঁর মস্তিষ্কই।
করোনা অতিমারির পরিস্থিতিতে মনোজের লক্ষ্য এখন ডিজিটাল বিজনেস। যাতে মহামন্দার হাত থেকে রক্ষা করা যায় সংস্থাকে। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য তাঁদের পরিকল্পনা কী?
সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, সে বিষয়ে মুখ খুলবেন না মনোজ মোদী বা তাঁর বস মুকেশ অম্বানী, দু’জনের কেউই। কারণ, কম কথার এই দুই ক্ষুরধার যুদ্ধক্ষেত্রেই তাঁদের পরিকল্পনা প্রকাশ করতে পছন্দ করেন।