ভারতের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু। ফাইল চিত্র।
অর্থনীতি নিয়ে ফের মোদী সরকারকে তোপ দাগলেন ভারতের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু। পুজোর মধ্যে বেকারত্বের সমস্যার জন্য বিনিয়োগের অভাবই অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছিলেন তিনি। আর তার তিন দিনের মাথায় এ বার দেশের আর্থিক সমস্যার জন্য সমস্ত মনোযোগ রাজনীতিতে দেওয়াকেই দায়ী করলেন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক। রাজনীতি যে নীতি তৈরির ক্ষেত্রে সমস্যার, সেই কথা কয়েকমাস আগেও বলেছিলেন তিনি।
সরকার এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বার বারই আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে স্বস্তির বার্তা দিয়ে জানাচ্ছেন, দ্রুততম অর্থনীতির দেশ হবে ভারত। অথচ বর্তমান পরিস্থিতিতে একের পর এক মূল্যায়ন সংস্থা চলতি অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমাচ্ছে। খোদ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক তা ৭.২% থেকে কমিয়ে ৭% করেছে। বৃহস্পতিবার বিশ্ব ব্যাঙ্কও পূর্বাভাস নামিয়েছে ৬.৫ শতাংশে। সেই ছাঁটাইয়ের প্রসঙ্গ তুলে শুক্রবারই মোদী সরকারকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্র ঘুমোচ্ছে। জেগে উঠে দেখুক বাস্তবটা কী।’’ সরকারের পক্ষে যে সব কিছু করা সম্ভব নয়, তা মেনেও তাঁর মন্তব্য ছিল, কিছু পদক্ষেপ অবশ্যই করা দরকার।
আর শনিবার সেই তথ্য উল্লেখ করে ভারতের অন্যান্য আর্থিক সমস্যা কথাও বলেছেন বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদ কৌশিকবাবু। উল্লেখ করেছেন, ডলারের সাপেক্ষে টাকার রেকর্ড তলানিতে নামা এবং দেশের চড়া বেকারত্ব বজায় থাকার কথাও। সে সবের প্রসঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘দেশের অর্থনীতির মৌলিক স্তম্ভগুলি মজবুত হলেও সব নজর বা মনোযোগ রাজনীতিতে পড়ার জন্যই এই সব (বৃদ্ধিতে ধাক্কার আশঙ্কা, বেকারত্ব, টাকার পতন) ঘটছে।’’
কৌশিকবাবু মে মাসেই নীতি তৈরির ক্ষেত্রে রাজনীতিকে সরিয়ে রাখার কথা বলেছিলেন। সে সময়ে তাঁর মন্তব্য ছিল ‘‘ভারতের সব চেয়ে বড় সমস্যাকে এক কথায় তুলে ধরে তরুণ প্রজন্মের বেকারত্বের ছবি। অথচ এই বিষয়টি অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করলেও, দুঃখজনকভাবে নীতি তৈরির ক্ষেত্রে খুবই কম গুরুত্ব পায়। তাই রাজনীতি থেকে নজর সরিয়ে আগে এটি ঠিক করায় জোর দেওয়া উচিত।’’
এর পরে গত বুধবারও ফের ভারতে কম হারে কাজের সুযোগ তৈরি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘এর অন্যতম কারণ, যে কোনও অর্থনীতির এগোনোর পিছনে বড় ভূমিকা থাকে বিনিয়োগের। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে ২০০৯ সালে সেই হার ছিল ৩৯.৩%, ২০১৯ সালে তা নেমেছে ৩০.৭ শতাংশে।’’ কেন লগ্নি হচ্ছে না, সেটাই এখন অন্যতম প্রশ্ন বলেও তুলে ধরেছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বর্তমানে চড়া মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গিয়ে লগ্নিতে মন দিতে পারছেন না মানুষ। আবার চাহিদার অভাবে সংস্থাগুলিও নতুন করে টাকা ঢালায় উৎসাহ দেখাচ্ছে না। সব মিলিয়ে বিনিয়োগে ধাক্কা লাগছে। এই অবস্থায় কৌশিকবাবুর মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে তারা।