প্রতীকী ছবি।
অতিমারির প্রথম ঢেউ দেশের কাজের বাজারকে যে ভাবে বিপন্ন করেছিল, এক বছর পরে পরিস্থিতি সেই তুলনায় কিছুটা পাল্টালেও উদ্বেগের মাত্রা যে কাটেনি, তা বোঝা গিয়েছিল সম্প্রতি কেন্দ্রের প্রকাশিত রিপোর্টে। আর তার ঠিক পরেই বেসরকারি পরামর্শদাতা সংস্থা সিএমআইই-র রিপোর্টে আবারও পরিষ্কার হল, সম্প্রতি শহরাঞ্চলে কাজের পরিস্থিতি কিছুটা ইতিবাচক হলেও গ্রামে অবস্থার ফের অবনতি হয়েছে। বেকারত্বের হার বেড়েছে সারা দেশেও। সমীক্ষা রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে সিএমআইই কর্তা মহেশ ব্যাস জানিয়েছেন, কর্মী বাহিনীর মধ্যে যাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিকের নীচে, করোনাকালে তাঁরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বড় ধাক্কা খেয়েছেন স্নাতক বা তারও বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মীরাও।
সিএমআইই-র সমীক্ষায় জানানো হয়েছে, গত ২০ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে সারা দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৭.৮৬%। শহর এবং গ্রামাঞ্চলে তা যথাক্রমে ৭.৯৭% এবং ৭.৮১%। এক সপ্তাহ আগে এগুলি ছিল যথাক্রমে ৭.৭৩%, ১০.৩৬% এবং ৬.৪৫%। উল্লেখ্য, জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের (এনএসও) প্রকাশিত রিপোর্টে জানানো হয়, ২০২১ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে দেশের শহরাঞ্চলে ১৫ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ৯.৮%। অর্থাৎ, এনএসও কিংবা সিএমআইই-র রিপোর্টে একটা সাধারণ বিষয় স্পষ্ট। তা হল, কেন্দ্র অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে যতই বড়াই করুক না কেন, কাজের বাজারের পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ। কারণ, অতীতে কেন্দ্রের রিপোর্টেই বলা হয়েছিল ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৬.১%। যা সেই সময়েই চার দশকের সর্বোচ্চ ছিল। এখন বেকারত্বের হার তার চেয়ে অনেকটাই বেশি।
সিএমআইই কর্তার বিশ্লেষণ, অতিমারি শুরুর ঠিক আগে দেশে স্নাতক ও তার চেয়ে বেশি যোগ্যতাসম্পন্নদের কাজ ছিল প্রায় ৫.৫৬ কোটি। সমস্ত কাজের মধ্যে ১৩.৭%। সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন শুরু হতেই সেই কাজের সংখ্যা এক ধাক্কায় ৪.৪৯ কোটিতে নেমে আসে। অনুপাত দাঁড়ায় ১১ শতাংশের কাছাকাছি। গত ফেব্রুয়ারিতে ওই সংখ্যা বেড়ে ফের ৫ কোটি পার করলেও আগের জায়গায় পৌঁছয়নি। অন্য দিকে, উচ্চ মাধ্যমিকের নীচে থাকা কর্মী বাহিনীই সারা দেশে কাজের ৫৪.৫% জুড়ে ছিলেন ২০২০ সালের জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে। এঁদের বড় অংশ অসংগঠিত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় কাজও হারিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। আবার কাজের বাজারে দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণদের অনুপাত করোনার আগে ৩১.৩% থাকলেও, বাকি দু’টি অংশে বেশি কর্মহানি হওয়ায় পরে তা ৩৯ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে।