রিফান্ডে রাশ টেনেই কি বেড়েছে জিএসটি আদায়!

পরে ছোট ব্যবসায়ীদের আগে মেটানো করের পুরো টাকা ফেরত পাওয়া কার্যত দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নিয়মের ফলে সরকারের ঘরে করের যে টাকা জমছে, তা মাসিক আয় হিসাবে দেখাচ্ছে কেন্দ্র।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৪৮
Share:

প্রতীকী চিত্র।

টানা তিন মাস জিএসটি আদায় ঘোরাফেরা করেছে ৯০ হাজার কোটি টাকার আশেপাশে। যা আদতে ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতির প্রতিফলন বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। নভেম্বরে জিএসটি থেকে আয় ফের ১ লক্ষ কোটি ছাড়াতেই কেন্দ্রের দাবি, ঘুরতে শুরু করেছে অর্থনীতির চাকা। বাড়ছে বিক্রিবাটা। তাই কর আদায় বাড়ছে। যদিও রাজ্যের অর্থ দফতরের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এই আদায় বাড়ার সঙ্গে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সম্পর্ক নেই। আদতে আগে মেটানো কর ফেরতের (ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট বা আইটিসি) ন্যায্য প্রাপ্য না-দেওয়াতেই সরকারের ঘরে ঢুকছে অতিরিক্ত টাকা। আর এর ফলে ‘পকেট কাটা’ যাচ্ছে বিশেষত ছোট ব্যবসায়ীদের।

Advertisement

ওই কর্তারা জানাচ্ছেন, সেপ্টেম্বর থেকে জিএসটি আদায় যে ভাবে কমছিল, তাতে অশনি সংকেত দেখছিল অর্থ মন্ত্রক। সেই কারণে ৯ অক্টোবর জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে যুক্ত করা হয়েছে ৩৬(৪) ধারা। যার পরে ছোট ব্যবসায়ীদের আগে মেটানো করের পুরো টাকা ফেরত পাওয়া কার্যত দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নিয়মের ফলে সরকারের ঘরে করের যে টাকা জমছে, তা মাসিক আয় হিসাবে দেখাচ্ছে কেন্দ্র।

কী পরিবর্তন করেছে সরকার?

Advertisement

অর্থ-কর্তারা জানাচ্ছেন, আগে খুচরো ব্যবসায়ীরা জিএসটি মিটিয়ে পণ্য বা পরিষেবা কেনার পরে সরবরাহকারীর থেকে ইনভয়েস বা রসিদ পেতেন। তা দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে আগে মেটানো করের টাকা রিফান্ড মিলত। এখন ঠিক হয়েছে, খুচরো ব্যবসায়ীরা রসিদ দেখিয়ে যা চাইবেন, তার পুরোটাই ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট হিসেবে পাবেন না। যে পণ্য বা পরিষেবা কিনেছেন বলে ব্যবসায়ী দাবি করছেন, সরবরাহকারীও যদি মাসিক জিএসটিআরে তার সমান অঙ্কের রসিদ দেখান, তা হলেই পুরো টাকা মিলবে। না-হলে সরবরাহকারী সংস্থা যে অঙ্কের পণ্য বা পরিষেবা দেওয়ার কথা মাসিক রির্টানে দেখাবেন, খুচরো ব্যবসায়ী সেই অনুপাতে আইটিসি পাবেন। যার উপরে ২০% পর্যন্ত বাড়তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে নতুন বিধিতে। আর তাতেই বেড়েছে সরকারের আয়।

কর্তাদের মতে, ধরা যাক খুচরো ব্যবসায়ী ১০০ টাকার পণ্য কিনে, তার জন্য ১০ টাকা জিএসটি মিটিয়েছেন। পুরনো নিয়মে ওই ১০ টাকার পুরোটাই আইটিসি হিসেবে ফেরত পেতেন। নতুন বিধিতে চাইলেই তিনি ওই টাকা ফেরত পাবেন না। যে সরবরাহকারীর থেকে পণ্য নিয়েছেন, তিনিও যদি জিএসটিআরে ১০০ টাকা বিক্রির রসিদ আপলোড করেন, তবেই ওই ব্যবসায়ী ১০ টাকা বা পুরো আইটিসি পাবেন।

আর যদি সরবরাহকারী ৫০ টাকার পণ্য বিক্রির রসিদ রিটার্নে উল্লেখ করেন, তা হলে ব্যবসায়ী ৫ টাকা ও তার উপর ২০% বাড়তি ধরে সর্বোচ্চ ৬ টাকা আইটিসি পাবেন। ফলে নতুন বিধিতে ১০০ টাকার পণ্য কিনে ১০ টাকার ক্রেডিট পাওয়ার বদলে ৬ টাকা পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে খুচরো ব্যবসায়ীদের। বাকি টাকা জমা থাকছে সরকারের ঘরে। রাজ্যের অর্থকর্তাদের দাবি, নভেম্বরে জিএসটি খাতে এক লক্ষ কোটি আসার কারণ এটাই।

যদিও কেন্দ্রীয় জিএসটি কর্তাদের দাবি, ভুয়ো রিটার্ন বা রসিদ দেখিয়ে সরকারের থেকে টাকা আদায়ের বড় চক্র তৈরি হয়েছে। তাই ব্যবসায়ী ও

সরবরাহকারীর মাসিক পণ্য-পরিষেবা যাচাই করে আইটিসি দেওয়া হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement