মিলন মেলা প্রাঙ্গণে গাড়ি মেলায় নিজোন গোষ্ঠীর ‘ই-রাজা’।
বায়ু দূষণ না-করলেও সুরক্ষার প্রশ্নে কাঠগড়ায় বৈদ্যুতিক (ইলেকট্রিক) রিক্শা বা টোটো। অভিযোগ, বেশির ভাগ ই-রিক্শাই সরকারি নির্দেশিকা মেনে তৈরি হচ্ছে না। চিন থেকে আনা যন্ত্রাংশ জুড়ে কম খরচে টোটো তৈরির রমরমা বাড়ছে অসংগঠিত ক্ষেত্রে। আর, এখানেই বিপন্ন হচ্ছে যাত্রী ও চালকের সুরক্ষা। পাশাপাশি মার খাচ্ছে সংগঠিত ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে এ ধরনের বৈদ্যুতিন রিক্শা তৈরিতে লগ্নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাই প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দাবি করল সংগঠিত শিল্প।
উল্লেখ্য, কেন্দ্র ২০১৪-র অক্টোবরে কেন্দ্রীয় মোটর ভেহিক্যালস আইন সংশোধন করে টোটোকে আইনি করার পথ সুগম করে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে মূল সমস্যা হল, সরকারের নির্দেশিকার তোয়াক্কা না-করেই অনেক সময়ে ই-রিক্শা তৈরি হয়। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট-ও বেআইনি টোটো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। সংগঠিত ক্ষেত্রের সংস্থাগুলির অভিযোগ, বেআইনি ভাবে টোটো তৈরি হওয়ায় সঙ্কট তৈরি হচ্ছে এই শিল্পে। তাদের দাবি, নিয়ম মেনে যাতে সেগুলি তৈরি হয়, তা নিশ্চিত করুক প্রশাসন। না হলে এই খাতে লগ্নি থমকে যাবে। কারণ নিয়ম মেনে টোটো তৈরি করলে তার দাম বেশি পড়ায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে সংগঠিত ক্ষেত্র। ফলে ইচ্ছে থাকলেও অনেক সংস্থাই এই অসম প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত লগ্নি থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে।
সাধারণ ভাবে যাত্রী সুরক্ষার প্রশ্নে বড় গাড়ির ক্ষেত্রে অনুমোদন দেয় ন্যাশনাল অটোমোটিভ টেস্টিং অ্যান্ড আর অ্যান্ড ডি ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্ট (ন্যাট্রিপ)-এর শাখা পুণের অটোমোটিভ রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (এআরএআই)। মূলত নির্দিষ্ট মাপকাঠি মেনে কোন গাড়ি তৈরি হয়েছে, নকশায় কোনও ত্রুটি আছে কি না, সে সব দেখাই তাদের কাজ। পাশাপাশি এআরএআই এবং ন্যাট্রিপ-এর অপর শাখা হরিয়ানার ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অটোমোটিভ টেকনোলজি (আইক্যাট) ই-রিক্শার স্বীকৃতি দেয়। সমস্যা হল, সারা দেশেই অধিকাংশ ই-রিক্শার সেই স্বীকৃতি নেই।
আইন মেনে ই-রিক্শা তৈরির গুরুত্ব তুলে ধরতে আইক্যাটের সহযোগিতায় দিল্লির সংস্থা অল্টিয়াস অটো সলিউশন্স-এর উদ্যোগে কলকাতায় শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনের বৈদ্যুতিন গাড়ি মেলা। মেলায় নিজোন গোষ্ঠীর ‘ই-রাজা’, লোহিয়া অটো ইন্ডাস্ট্রিজের ‘নারাইন’ ও ‘হামরাহি’, মিশ্র গোষ্ঠীর ‘ইলেকট্রি’, প্লডিট টেকনোর ‘প্লডিট ১০০’–র মতো একগুচ্ছ ই-রিক্শা প্রদর্শিত হয়। লোহিয়া গোষ্ঠী ‘ওমা স্টার লি’ নামে একটি দু’চাকার গাড়িও প্রদর্শন করে। তাদের দাবি, সরকারি নির্দেশিকা মেনেই গাড়িগুলি তৈরি।
এই সব সংস্থার দাবি, সর্বত্র সহজে পৌঁছতে ভবিষ্যতে এই গাড়িই ভরসা হবে। ফলে এ ক্ষেত্রে লগ্নির সম্ভাবনা যথেষ্ট। যেমন দিল্লির ‘ওকে-প্লে’ সংস্থার সহযোগিতায় ডানকুনিতে ই-রিক্শা তৈরি করতে প্রাথমিক ভাবে ১০-১৫ কোটি টাকা লগ্নি করছেন বলে জানান নিজোন গোষ্ঠীর এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর মনোজ বেসওয়াল। প্রাথমিক ভাবে মাসে তৈরি হবে হাজারখানেক ই-রিক্শা। তেমনই এই ব্যবসায় ১০ কোটি টাকা ঢেলেছেন প্লডিট টেকনো-র ডিরেক্টর প্রিয়ম দাস। তিনিও গোড়ায় চিন থেকে আনা যন্ত্রাংশ জুড়ে তৈরি গাড়ি আইক্যাটে পাঠান। কিন্তু তা অনুমোদন পায়নি। পরে আইক্যাটের নির্দেশ মেনে বদল আনেন নকশায়।
পাশাপাশি স্বীকৃত নয় এমন টোটো রাতারাতি বন্ধ করে দিলে অনেকেই সমস্যায় পড়বেন বলেও অভিযোগ। প্রিয়মবাবু ও অন্যদের দাবি, সেই সব গাড়ি বদলে নিয়ম মেনে তৈরি গাড়ি দেওয়া যায় কি না, তা সরকারের ভেবে দেখার সময় এসেছে।