প্রতীকী ছবি।
চাহিদার অভাবে ঝিমিয়ে দেশের অর্থনীতি। যার আঁচ থেকে গা বাঁচাতে পারল না রাজ্যও। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে এ বছরের প্রথম আট মাসে ১৫০০ কোটি টাকার লগ্নি বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রস্তাব এসেছে ৩০০০ কোটির। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় কম।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, অর্থনীতির ঝিমুনি কাটাতে লগ্নি ছাড়া গতি নেই। অথচ বাজারে চাহিদার অভাব এতটাই যে, তার দেখা মিলছে না। খোদ বাণিজ্য মন্ত্রকের হিসেবই দেখিয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে অগস্ট দেশে লগ্নির যে প্রস্তাব এসেছে ও তার যতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, দু’টিই আগের বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক। কৃষি বা তার সরঞ্জাম তৈরিতে তা হাজার কোটিও ছাড়ায়নি। ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, টেলি যোগাযোগ, ব্রয়লার, কারখানার যন্ত্রপাতিতে সামান্য। সম্প্রতি শিল্পবৃদ্ধির হিসেবেও স্পষ্ট, কারখানায় উৎপাদন কমেছে, অন্য পণ্য তৈরিতে ব্যবহার্য মূলধনী পণ্যের উৎপাদনও সঙ্কুচিত। যা লগ্নিতে ভাটারই প্রমাণ। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার মন্তব্য, ‘‘কৃষি ও উৎপাদন ক্ষেত্রে লগ্নির বেহাল দশা থেকেই বোঝা যাচ্ছে কর্মসংস্থানের হালও খারাপ। দেশের সার্বিক অবস্থার প্রভাব রাজ্যে পড়তে বাধ্য।’’
তবে রাজ্য সরকারি সূত্রের দাবি, বাণিজ্য মন্ত্রকের লগ্নি সংক্রান্ত এই তথ্য শুধু বড় শিল্পের। ক্ষুদ্র, ছোট বা মাঝারি শিল্পের হিসাব তারা করে না, যে শিল্প এ রাজ্যে ভালই লগ্নি করে। তার উপরে পশ্চিমবঙ্গে এখন কোনও উৎসাহ প্রকল্প না থাকায়, বড় শিল্পে লগ্নি হয়ে থাকলেও রাজ্য শিল্প দফতরের পক্ষে সেই তথ্য রাখা মুশকিল। ফলে ঠিক কত লগ্নি প্রস্তাব এসেছে বা বাস্তবায়িত হয়েছে, তা তারা জানতে পারেনি।
বরং শিল্প দফতরের এক কর্তার দাবি, কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্যের বাইরেও এ রাজ্যে লগ্নি হচ্ছে। সরকার পরিকাঠামো ক্ষেত্রে যে বিপুল টাকা ঢালছে, সেই হিসাবও তো নেওয়া হয় না। এ ছাড়া এ রাজ্যে ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পে লগ্নির অঙ্ক সর্বাধিক। সেই হিসাব ধরলে অবস্থা ততটা খারাপ নয়। তাঁর কথায়,‘‘রাজ্যে পরিস্থিতি তুলনায় ভাল হলেও, দেশের অবস্থা খুবই খারাপ।’’
বাণিজ্য মন্ত্রকের নথি অবশ্য বলছে, বাংলায় ২০১৭ সালে ৬১টি প্রকল্পে ৪০৭৪ কোটির লগ্নি প্রস্তাব এসেছিল। লগ্নি হয়েছিল ৪০টি প্রকল্পে ২৬০২ কোটি। ২০১৮-তে প্রস্তাব ৬২টি প্রকল্পে ৪৭২২ কোটি। বাস্তবায়িত ২৯টি প্রকল্পে ৬৫৫০ কোটি। অথচ এ বছরের প্রথম আট মাসের লগ্নি- প্রস্তাব ৩৩টি প্রকল্পে ৩০২৫ কোটি টাকার। বাস্তবে এসেছে ১৪টি প্রকল্পে ১৫৪৬ কোটি। রাজ্যের শিল্প কর্তাদের আশা,‘‘শেষ চার মাসে অবস্থা আরও ভাল হবে।’’