—প্রতীকী চিত্র।
এক দিন আগেই আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ) ২০২৪ সালে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৫% থেকে বাড়িয়ে ৬.৮% করেছিল। আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের বাণিজ্য ও উন্নয়ন শাখা (ইউএনসিটিএডি) জানাল, এ বছর সেই হার হতে পারে ৬.৫%। যাকে ইতিবাচক হিসেবেই ব্যাখ্যা করছে তারা। সে ক্ষেত্রে এ বছরও বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতিগুলির মধ্যে দ্রুততম বৃদ্ধির তকমা ধরে রাখতে পারবে ভারত। কিন্তু আমেরিকার অর্থসচিব জ্যানেট ইয়ালেনের সতর্কবার্তা, ইজ়রায়েলের উপরে ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রেক্ষিতে তেহরানের উপরে নতুন আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কথা চিন্তাভাবনা করছে তাঁর দেশ। আর তার বাস্তব রূপায়ণ হলে পশ্চিম এশিয়ার জটিলতা বিশ্ব অর্থনীতির সামনে নতুন বিপত্তি তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, করোনার পরে ভারতের পাশাপাশি, আমেরিকা, চিন, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশের অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যা সাহায্য করেছে বিশ্ব অর্থনীতির গতি বৃদ্ধিতেও। কিন্তু এখন নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, পশ্চিম এশিয়ার অশান্তি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জোগান-শৃঙ্খলের সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তন, বেসরকারি লগ্নি হ্রাস পাওয়া ও ক্রমবর্ধমান আর্থিক বৈষম্য। এই অবস্থায় ইরানের উপরে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা চাপলে তার প্রতিক্রিয়া বিশ্বের বিভিন্ন অংশে পড়তে বাধ্য। বিশেষ করে যখন হুথি জঙ্গিদের আক্রমণে লোহিত সাগরের মতো বাণিজ্য পথ কার্যত অবরুদ্ধ। ভারতের পক্ষেও তার বিরূপ প্রভাব এড়ানো কঠিন। এ সপ্তাহে আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের বসন্ত বৈঠকে এই সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হওয়ার কথা।
আজকের রিপোর্টে ইউএনসিটিএডি জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ভারতের আর্থিক অগ্রগতির হার ছিল ৬.৭%। যার মূল চালিকাশক্তি ছিল পরিষেবা ক্ষেত্র এবং সরকারি খরচ। এ বছর সেগুলি তো অব্যাহত থাকবেই, সেই সঙ্গে বাড়তি সাহায্য করতে পারে উৎপাদন ক্ষেত্র। সরাসরি চিনের নাম না করে রিপোর্টে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, অতিমারির পর থেকে বহুজাতিক সংস্থাগুলি তাদের উৎপাদনের জায়গা এবং জোগানশৃঙ্খলকে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে দিতে চাইছে। ভারতও সম্প্রতি উৎপাদন ক্ষেত্রকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে বিদেশি সংস্থাগুলি। সে ক্ষেত্রে এ দেশে উৎপাদিত পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি পাবে। যা বাড়তি জ্বালানি জোগাবে আর্থিক বৃদ্ধিতে। এই প্রসঙ্গে অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আগামী সপ্তাহের গোড়ায় টেসলার কর্ণধার ইলন মাস্কের ভারতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা। সব কিছু ঠিক চললে অদূর ভবিষ্যতে এখানে টেসলার কারখানা গড়ে ওঠাও অসম্ভব নয়।
তবে এর পাশাপাশি রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মূল্যবৃদ্ধির হার এখনও প্রত্যাশিত জায়গায় না নামায় অদূর ভবিষ্যতেও রিজ়ার্ভ সম্ভবত ব্যাঙ্ক সুদের হার কমাবে না। সাধারণ মানুষও হাত খুলে খরচের ব্যাপারে কিছুটা সতর্ক থাকবেন। তবে এই ঘটতিকে পুষিয়ে দেবে ধারাবাহিক সরকারি খরচ। ২০২৪ সালে বিশ্ব অর্থনীতি বাড়তে পারে ২.৬%। গত বছরের (২.৭%) চেয়ে যা সামান্য কম।