শুক্রবার সকালে বাজার খোলামাত্র লাফিয়ে বাড়ে সেনসেক্স এবং নিফ্টি। প্রতীকী ছবি।
আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ভারতে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, সেটা ফের স্পষ্ট হল গত শুক্রবার। বৃহস্পতিবার রাতে (ভারতীয় সময়) জানা যায়, অক্টোবরে আমেরিকায় মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা কমেছে। ৮.২% থেকে নেমেছে ৭.৭ শতাংশে। এই খবরে, শুক্রবার সকালে বাজার খোলামাত্র লাফিয়ে বাড়ে সেনসেক্স এবং নিফ্টি। দিনভর তেতে ছিল তারা। শেষে ১১৮১ পয়েন্ট উঠে সেনসেক্স এই প্রথম পৌঁছে যায় ৬১,৭৯৫ অঙ্কে। যা সূচকের সর্বকালীন রেকর্ড উচ্চতা। এর আগে গত বছর ১৮ অক্টোবর তা বন্ধ হয়েছিল ৬১,৭৬৬-তে। সেই নজিরই ভাঙল। নিফ্টিও ৩২১ বেড়ে থিতু হয় ১৮,৩৫০ অঙ্কে।
শেয়ার বাজার তেতে ওঠায় লাফিয়ে বাড়ছে টাকার দামও। বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতে মোটা টাকার শেয়ার বেশ কয়েক দিন পরে ডলারের দাম নেমে আসে ৮০ টাকার ঘরে। হয় ৮০.৭৮ টাকা। একই দিনে খবর আসে, সেপ্টেম্বরে শিল্পোৎপাদন বেড়েছে ৩.১%। অগস্টে তা কমেছিল ০.৮%। এই পরিসংখ্যানও শক্তি জোগায় দেশের শেয়ার বাজারকে।
আমেরিকায় মূল্যবৃদ্ধি মাথা নামাতেই লগ্নিকারীরা ধরে নেন, পরের দফায় সে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভ হয়তো আর চড়া হারে সুদ বাড়াবে না। আর এ ভাবে দামের চাপ নামতে থাকলে হয়তো তারা আর্থিক মন্দাও এড়াতে পারবে। বাঁচবে বিশ্ব অর্থনীতি। এগোনোর পথ চওড়া হবে ভারতের মতো সম্ভাবনাময় দেশের।
অক্টোবরে ভারতে মূল্যবৃদ্ধির হার কত ছিল, তা জানা যাবে আজ সন্ধ্যেয়। এই পরিসংখ্যানের উপরে অনেকখানি নির্ভর করবে শেয়ার সূচকের গতিপ্রকৃতি। আমেরিকার মতো মূল্যবৃদ্ধির হার মাথা নামালে সুদের হার বৃদ্ধির গতি কমবে ভারতেও। ঋণের খরচ কমবে শিল্পের। লগ্নির ঝোঁক বাড়তে পারে। যা চওড়া করবে আর্থিক বৃদ্ধির পথকে। এই সব আঁচ করে শেয়ার বাজার তখন আরও উঁচুতে উঠতে পারে। উচ্চতার নতুন নজির তৈরি হতে পারে বলে অনুমান সংশ্লিষ্ট মহলের। জল্পনা, মূল্যবৃদ্ধির হার নামতে পারে ৬.৭৩ শতাংশে। সেপ্টেম্বরে তা ছিল ৭.৪১%।
এক সময় ১৩৯ ডলারে ওঠা অশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেশ কিছু দিন ধরেই ঘোরাফেরা করছে ৯০ থেকে ১০০ ডলারের মধ্যে। এ ছাড়া, ভারত সস্তার তেল কিনছে রাশিয়া থেকে। আগে তাদের থেকে নামমাত্র আমদানি করত ভারত। এখন তা ২২%। পাশাপাশি ডলারের দামও কমছে। ফলে তেল-সহ বিভিন্ন পণ্য বা পণ্যের কাঁচামাল আমদানির খরচ কমবে। এর হাত ধরে দেশে মূল্যবৃদ্ধির হার আরও কমার রাস্তা তৈরি হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, সুদ নাগাড়ে বাড়া সত্ত্বেও দেশে ঋণের চাহিদা বাড়ছে। এর ফলেও আশা তৈরি হচ্ছে আর্থিক বৃদ্ধির পালে হাওয়া লাগবে।
প্রথম দিকে ঋণের মতো একই অনুপাতে জমা টাকায় সুদের হার বাড়াচ্ছিল না ব্যাঙ্কগুলি। কিন্তু এখন বাজারে ঋণের চাহিদা বেড়েছে। ফলে তার পুঁজি জোগাড় করতে আমানতের সুদ বৃদ্ধি ছাড়া উপায় নেই তাদের। গ্রাহক টানার জন্য সেই প্রতিযোগিতা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, ডিসেম্বরে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট (স্বল্প মেয়াদে তারা যে সুদে ধার দেয় অন্যান্য ব্যাঙ্ককে) আর এক দফা বাড়ালে ব্যাঙ্কে জমা টাকায় সুদ ফের বাড়তে পারে। সেই প্রতিযোগিতা চলছে এনবিএফসিগুলির (ব্যাঙ্ক নয় এমন প্রতিষ্ঠান) মধ্যেও। জমা টাকায় সুদের হার বৃদ্ধি প্রবীণ নাগরিক এবং সুদ নির্ভর সকলের জন্যই স্বস্তিদায়ক। এই পরিস্থিতিতে পণ্যের দাম কিছুটা মাথা নামালে আরও কিছুটা নিশ্চিন্ত হবেন দেশবাসী।
(মতামত ব্যক্তিগত)