প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হতে পারে পাঁচ থেকে আট হাজার মানুষের। প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গে প্লাস্টিক পণ্যের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৫০ লক্ষ টন। কিন্তু তার মাত্র ৪০% তৈরি হয় এ রাজ্যে। ৫০% আসে ভিন্ রাজ্য থেকে। বাকি ১০% আমদানি হয়। ওই পণ্য যাতে রাজ্যেই আরও বেশি করে উৎপাদন করা যায়, তার জন্য এ বার উদ্যোগী হল সরকার এবং শিল্পমহল। তারই অংশ হিসেবে হুগলির দুই জায়গায় ‘পলি পার্ক’ তৈরির পরিকল্পনা করেছে ইন্ডিয়া প্লাস্টিক ফেডারেশন (আইপিএফ)। তাদের দাবি, দু’টি পার্ক মিলিয়ে মোট প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা লগ্নি হতে পারে। প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হতে পারে পাঁচ থেকে আট হাজার মানুষের।
শুক্রবার থেকে বিশ্ব বঙ্গ মেলা প্রাঙ্গনে শুরু হয়েছে আইপিএফ আয়োজিত চার দিনের প্লাস্টিক মেলা ইন্ডপ্লাস-২২। অনুষ্ঠানের ফাঁকে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট শিশির জালান ধনেখালি ও ডানকুনিতে পলি পার্ক তৈরির পরিকল্পনার কথা জানান। সেখানে সরাসরি জমি কিনবে আগ্রহী সংস্থাগুলি। আইপিএফ মূলত প্রকল্পের মধ্যস্থতাকারী ও সহায়কের ভূমিকায় থাকবে। প্লাস্টিক পণ্য ও টেকনিক্যাল টেক্সটাইল (যা দিয়ে পিপিই কিট, মাস্ক, হাসপাতালের সামগ্রী ইত্যাদি তৈরি হয়) উৎপাদনের পাশাপাশি, প্লাস্টিক পণ্যের পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়ায় যুক্ত সংস্থাও আসতে পারে। শিশিরের দাবি, ৭০টি সংস্থার থেকে আশ্বাস মিলেছে।
এ দিন মেলার উদ্বোধন করে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম শিল্পকে উৎপাদন ও পুনর্ব্যবহার ক্ষেত্রে আরও লগ্নির আহ্বান জানান। বলেন পুরসভা এলাকায় বর্জ্যের পৃথকীকরণ প্রকল্পের জন্য বিপুল প্লাস্টিক বিন লাগবে। উদ্যোগপতিদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘ব্যবসা করতে হলে বুকের ছাতি ৭২ ইঞ্চি হতে হয়। ঝুঁকি না নিলে লাভ হয় না। অম্বানী সেই ঝুঁকি নিয়েছিলেন।’’ ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্প দফতরের সচিব রাজেশ পাণ্ডের আশা, পার্কগুলি দ্রুত তৈরি হবে। তাঁর আশ্বাস, রাজ্য যে বস্ত্র নীতি ঘোষণা করেছে তাতে টেকনিক্যাল টেক্সটাইলস গুরুত্ব পাবে।
শিল্পের হিসাবে, প্লাস্টিকের কাঁচামাল তৈরিতে যুক্ত ইন্ডিয়ান অয়েল, হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের মতো সংস্থা এবং সেই কাঁচামাল থেকে তৈরি পণ্যের অনুসারী সংস্থাগুলিকে মিলিয়ে এ রাজ্যে ওই শিল্পের সার্বিক বাজার বার্ষিক প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকার। এর মধ্যে অনুসারী শিল্পের ভাগ প্রায় ৪০%। শিশিরের দাবি, অন্য রাজ্যের বহু সংস্থাই এ রাজ্যে তাদের পণ্য পাঠানোর বিপুল খরচ এড়াতে সরাসরি এখানেই লগ্নির কথা ভাবছে। এই বক্তব্যকে সমর্থন করেন গুজরাত থেকে হুগলিতে এসে কারখানা গড়া বিশাখা গোষ্ঠীর কর্ণধার জিগীষ দোশী। জানান, আগে এ রাজ্যে পণ্য পাঠাতে কেজিতে ৭-১০ টাকা লাগত। এখন রাজ্যের কারখানা থেকে তা জোগানের খরচ দেড় টাকা। আগে বার্ষিক ১৮০০ টন পণ্য বিক্রি হত, তা দ্বিগুণ হয়েছে। ওই কারখানায় ৭৫ কোটি টাকা লগ্নির পরে আরও ২৭-৩০ কোটি লগ্নির পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।