অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। — ফাইল চিত্র।
বিশ্ব জুড়ে অনিশ্চয়তার পরিবেশ। তার উপর সামনে ২০২৩-২৪ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট। অনেকে বাজেট না দেখে বড় লগ্নি করতে নারাজ। ফলে দুর্বল শেয়ার বাজারে ওঠাপড়া চলছে। অন্য দিকে, আকর্ষণ বেড়েছে স্থির আয়ের প্রকল্পগুলির। গত কয়েক মাসে জমার উপরে সুদ বেড়েছে বেশিরভাগ আমানত প্রকল্পে। যা খানিকটা স্বস্তি দিয়েছে সুদ নির্ভর আমজনতাকে।
যদিও ব্যবসার পরিবেশ কিছুটা উন্নত হওয়ায় দেশে ঋণের চাহিদা বাড়লেও (কিছু ব্যাঙ্কে তা ১৭-১৯ শতাংশ), তাল মিলিয়ে জমার পরিমাণ বাড়েনি। তাই সুদ বাড়িয়ে আমানত টানার প্রতিযোগিতায় নেমেছে ব্যাঙ্ক এবং ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি (এনবিএফসি)। তবে মূল্যবৃদ্ধি পুরো নিয়ন্ত্রণে এলে ভবিষ্যতে তা ফের মাথা নামাতে পারে। ফলে যেখানে রিটার্ন ভাল, এখনই সেখানে টাকা রাখা যায় বড় মেয়াদে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পরবর্তী ঋণনীতি বৈঠক ৫-৮ ফেব্রুয়ারি। ধারণা, আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার বাড়ানো হতে পারে। তখন ঋণ ও জমায় সুদ আরও বাড়বে। তবে আরবিআইয়ের অনুমান অনুযায়ী মার্চের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি ৫ শতাংশে নামলে এপ্রিলের বৈঠকে ছেদ পড়বে বৃদ্ধিতে।
জানুয়ারিতে সুদ বেড়েছে কিছু স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পেও। প্রবীণদের প্রকল্পে তা বেড়ে হয়েছে ৮%, ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্পে ৭.১%। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুদ বৃদ্ধির কারণে রিটার্ন বাড়ানো হচ্ছে জীবন বিমা সংস্থাগুলির অ্যানুইটি প্রকল্পেও। তবে পিপিএফের সুদ বহু দিন ধরে ৭.১ শতাংশে থমকে। কর সাশ্রয়ের পথ হিসেবে সাধারণ মধ্যবিত্ত করদাতাদের মধ্যে পিপিএফ জনপ্রিয়। ফলে তাঁদের অনেকেই অসন্তুষ্ট। একই কারণে ক্ষুণ্ণ উঁচু হারে করদাতারাও। ব্যাঙ্কের জমায় সুদ বৃদ্ধি যাঁদের তেমন সুবিধা দেয়নি। আয় ১০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা হলে তাঁদের কর দিতে হয় ৩০% হারে। করের উপর ৪% সারচার্জ। অর্থাৎ মোট ৩১.২%। আয় এর বেশি হলে সারচার্জ বাড়বে। যাঁরা ৩১.২% করের আওতায়, তাঁরা ব্যাঙ্ক বা অন্যত্র জমায় ৭.৫% সুদ পেলেও কর বাদ দিয়ে প্রকৃত আয় ৫.১৬%। যা নেমে আসা খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হারের (৫.৭২%) থেকেও কম। এঁদের অনেকেই তাই করমুক্ত অথবা কম করের প্রকল্প খোঁজেন।
পিপিএফ এবং সুকন্যা সমৃদ্ধি, দুই স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ পুরো করমুক্ত। ৮০সি ধারায় কর সাশ্রয়ের জন্য প্রয়োজন না হলেও করমুক্ত সুদের সুবিধা নিতে বছরে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করা যায় পিপিএফ অ্যাকাউন্টে। শেয়ার ও শেয়ার নির্ভর ফান্ডে বছরে মোট ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভ (এক বছর ধরে রাখার পরে বিক্রি করে লাভ হলে) থাকে করমুক্ত। লাভ এর বেশি হলে কর বসে ১০%। লগ্নির পরে এক বছরের কম সময় ধরে রেখে বিক্রি করে লাভ হলে (স্বল্পমেয়াদি মূলধনী লাভ) তার উপরে কর ১৫%।
বন্ডেও এখন প্রকৃত আয় বা ইল্ড সুদের মতোই ঊর্ধ্বমুখী। ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডে ৭.৩৪%। বেসরকারি বন্ডে আরও বেশি। বন্ড বা বন্ড ফান্ডে লগ্নি ৩ বছর বা তার বেশি ধরে রাখার পরে বিক্রি করে কোনও লাভ হলে (দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভ) তার উপরে মূল্যবৃদ্ধি সূচক (কস্ট ইনফ্লেশন ইনডেক্স) প্রয়োগের সুবিধা পাওয়া যায়। এর ফলে লাভের অঙ্ক নেমে আসে এবং তার উপরেও কর দিতে হয় কম হারে (২০%)। রিটার্নের উপর করছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায় কয়েক ধরনের জীবন বিমার উপরেও।
(মতামত ব্যক্তিগত)