প্রতীকী ছবি।
অতিমারি সঙ্কটের মই বেয়ে মাস পাঁচেক আগেই রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিল সোনার দর। ধন্দ তৈরি হয়েছিল, কোথায় থামবে এই দৌড়। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার ইঙ্গিত মেলায় তা আবার পিছনের দিকে হাঁটতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, লগ্নিকারীরা সোনা থেকে পুঁজি অন্যত্র সরানোর ফলেই এই পরিস্থিতি। লকডাউন এবং দামের ধাক্কায় কোণঠাসা গয়না ব্যবসায়ীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে আশা।
গত বছরের ২১ মার্চ কলকাতায় ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট পাকা সোনার দাম ছিল ৪১,৮৮০ টাকা (জিএসটি এবং টিসিএস বাদে)। এর তিন দিন পরে দেশে শুরু হয় লকডাউন। সোনার দাম তার পর থেকেই চড়তে থাকে। গত ৭ অগস্ট তা পৌঁছে যায় ৫৬,৯৬০ টাকায়। যা এখনও পর্যন্ত রেকর্ড।
গত কয়েক দিনে ছবিটা অবশ্য বদলেছে। শনিবার শহরে সোনার দর এক ধাক্কায় ৮৪০ টাকা কমে হয়েছে ৫০,২৬০ টাকা। গত বুধবার থেকে চার দিনের মধ্যে ২২১০ টাকা দাম কমেছে ধাতুটির। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, করোনা পরিস্থিতি থেকে দেশ ও বিশ্ব অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত তো রয়েছেই, একই সঙ্গে সোনার দাম কমার পিছনে কাজ করেছে আন্তর্জাতিক বাজারে ওই ধাতুর দাম কমা। স্বর্ণ শিল্পমহল সূত্রের খবর, আমেরিকায় সোনার দাম ইদানীং দ্রুত কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্বে, ভারতেও।
কারণ কী
• লগ্নিকারীরা সোনা বিক্রি করে অন্যত্র বিনিয়োগ করার ফলে বাজারে সোনার জোগান বাড়ছে। ফলে কমছে তার দাম।
• করোনা সংক্রমণের শুরুতে মাথা নামিয়েছিল সারা বিশ্বের অর্থনীতি। অনিশ্চিত বাজারে লগ্নিকারীরা পুঁজি
সরিয়ে আনছিলেন অপেক্ষাকৃত নিরাপদ সোনায়। সেই চড়া চাহিদার হাত ধরেই চড়তে থাকে হলুদ ধাতুর দর। পরিস্থিতি কিছুটা বদলানোয় স্থান বদল করছে সেই লগ্নি।
• ভারত-সহ বিভিন্ন দেশে করোনার প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হয়েছে। লগ্নিকারীদের আশা, এর ফলে সংক্রমণে বাধ দেওয়া গেলে অর্থনীতিতেও স্থিরতা আসবে। মুনাফা করবে সংস্থাগুলি। শেয়ার ও ঋণপত্রের বাজারও ভাল হবে।
• বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি আমেরিকায় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কেটেছে। প্রেসিডেন্ট পদে জো বাইডেনের আসা নিশ্চিত হয়েছে। লগ্নিকারীরা মনে করছেন, এর পরে মূলধনী বাজার আরও শক্তিশালী হবে।
গয়নার বাজারে প্রভাব
• লকডাউন এবং সোনার চড়া দামের ফলে কোণঠাসা গয়না ব্যবসায়ীরা আশার আলো দেখছেন।
• সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, সোনা-গয়নার ক্রেতারা হয়তো আরও কিছুটা সময় নেবেন। অপেক্ষা করবেন দাম আরও কমার জন্য।
• অন্য অংশের আবার পরামর্শ, ক্রেতাদের সুযোগ গ্রহণ করা উচিত এখনই।
লকডাউনের ফলে সারা বিশ্বের অর্থনীতিই সাময়িক থমকে গিয়েছিল। সেই অনিশ্চয়তার সময়ে লগ্নিকারীরা অপেক্ষাকৃত ‘নিরাপদ’ লগ্নিস্থল সোনায় পুঁজি সরাতে থাকেন। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে দামও চড়তে থাকে ধাতুটির। কিন্তু এখন অবস্থা অনেকটাই বদলেছে। বাড়ছে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ। করোনার প্রতিষেধক প্রয়োগ সফল হলে তা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তাঁরা। সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, এই পরিস্থিতিতে ফের মাঠ বদলাতে শুরু করেছেন লগ্নিকারীরা। ফিরছেন শেয়ার বাজার, ঋণপত্র, বিদেশি মুদ্রা, এমনকি ক্রিপ্টোকারেন্সিতেও। তাই সোনার চাহিদা কমতে শুরু করেছে। বাজারে জোগান বাড়ায় কমছে তার দামও। অন্য দিকে, বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি ভারতেও শেয়ার বাজার পৌঁছেছে রেকর্ড উচ্চতায়।
অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আশিস পেথে বলেন, ‘‘বিশ্বে সোনার দামের উত্থান-পতন অনেকটাই নির্ভর করে আমেরিকায় সোনার দরের উপরে। সেখানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ায় ডলার শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন লগ্নিকারীরা। তাই সোনা থেকে পুঁজি সরাচ্ছেন বিদেশি মুদ্রা-সহ বিভিন্ন জায়গায়।’’ তবে অ্যাসোসিয়েশন অব গোল্ড রিফাইনারি অ্যান্ড মিন্টের সম্পাদক হর্ষদ অজমেঢ়ার দাবি, সোনার দাম ফের বাড়বে।
তবে সোনার দাম কমায় গয়না বিক্রি বাড়বে কি? বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দারের কথায়, ‘‘দাম আরও কিছুটা কমলে ক্রেতারা দোকানমুখী হবেন।’’ স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি সমর দে-র অবশ্য বক্তব্য, ‘‘পড়তি বাজারের সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত হবে না ক্রেতাদের।’’